অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনায় আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক। দেশটিতে নিয়ম যত কড়া হোক না কেনো, এখনও পড়াশুনা শেষে অভিবাসনের আবেদন করার সুযোগ আছে, এবং এখনও অভিবাসন হচ্ছে। যে সুযোগ ইউরোপের অনেক দেশেই এখন আর নেই।
আমি যা লিখেছি এরচেয়ে বেশি তথ্য এদেশের সরকারি অনলাইন ওয়েব ঠিকানায় আছে। অনেকে কষ্ট করে অনলাইন ঘাটতে চান না! অথচ অনলাইনে চেক করলে আমার বা কারও লেখাই পড়া বা নির্ভর করার বা কোন এজেন্টের কাছে যাবার দরকার নেই! অনেকে আরও একটু বেশি সুযোগ সুবিধা জানতে ইনবক্সে লিখেছেন! অনেকের কিছু ভুল ধারনাও আছে! সবাইকে আলাদা করে লিখার সময় নেই বলে আরও খোলাসা করে লিখছি।
প্রথমেই বলে নেই আমি যে টার্গেট গ্রুপের জন্য লিখেছি যারা উচ্চহার টিউশন ফী দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখেন! আমার বক্তব্য, এত টাকা দিয়ে যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন, তবে বিদেশে নয় কেন? উপরন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যে নিশ্চয়তা তাহলো, এদেশে কখনো হড়তাল- স্ট্রাইক এসব নেই। কাজেই সেমিস্টারের শুরুতে যে রুটিন দেয়া হবে, সে অনুসারেই অক্ষরে অক্ষরে সব ক্লাস-পরীক্ষা সব হবে! এক চুলও এর এদিক সেদিক হবেনা!
প্রথমেই মনে রাখা ভালো অস্ট্রেলিয়ার মতো সব পুঁজিবাদী রাষ্ট্রেই শিক্ষাখাত একটি লাভজনক ব্যবসা! এটি কোন রামকৃষ্ণ মিশন নয়! এখানে এদেশের ছেলেমেয়েরও উচ্চ শিক্ষা ফ্রি নয়! এরা ফী হেল্প নামের একটি শিক্ষা ঋণের মাধ্যমে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন! কর্মক্ষেত্রে যাবার পর সরকার সে ঋণের টাকা কিস্তি করে কেটে নিয়ে যায়! আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বিশাল বিশাল হল এদেশে নেই! সব আবাসিক ব্যবস্থাই নিজস্ব উদ্যোগে ভাড়ায় ব্যবস্থা করতে হয়! খাওয়াদাওয়া নিজে রেষ্টুরেন্টে খাবেন না, রান্না করে খাবেন, সে আপনার নিজস্ব বিষয়! এসব কারনে বলা হয় নাথিং ইজ ফ্রি ইন অস্ট্রেলিয়া! মিছিল মিটিং করে দিতে হবে, দিয়ে দাও, এসব অভ্যাস ঢাকা থেকে ফ্লাই করার আগে ঢাকাতেই রেখে আসতে হয়!
আমাদের সামাজিক আরেকটি ব্যবস্থার কারনেও দুর্নীতি দূর হচ্ছেনা! তাহলো, আমি পড়বো আর আব্বা-আম্মা বা বড়ভাই টাকা দেবেন! সে টাকায় আমি টিউশন ফী দেবো, হলে বা মেসে থাকবো খাবো, বিড়ি খাবো, ফ্যাশনেবল জামাকাপড় পরবো, ইত্যাদি! একজন ইনকাম করে একজনকে টানতে গিয়েইতো দুর্নীতি বাড়ে! অথচ অস্ট্রেলিয়ার বাবা-মা যেমন এমন ভাবেন না, ছেলেমেয়েরাও ভাবেনা! কাজ নির্ভর এ সমাজ! ছাত্রছাত্রীদের কাজ মানে দোকানের কর্মচারী, রেষ্টুরেন্টের কিচেনহ্যান্ড, মানে থালাবাসন পরিষ্কার করা, বা আরও যত কষ্টের কাজ! বাংলাদেশ থেকে আসা স্টুডেন্টরাও এখানে এসে এসব কাজই করেন! কিন্তু আম্মা কষ্ট পাবেন বা বন্ধুদের কাছে ঠাঁট নষ্ট হবে বলে এসব কখনো বলেননা! যদিও এদেশে কোন কাজই ফেলনা নয়! কাজ মানে ডলার! শেয়ারের বাসায় থেকে নিজে চলতে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ শ ডলার দরকার! ছয়মাস পর টিউশন ফী বাবদ দরকার ৭ থেকে ১৫ হাজার ডলার! অনেকে আবার বাড়িতেও টাকা পাঠান! অতএব এসব টাকা জোগাড় করতে ছাত্রছাত্রীরা পাগলের মতো কাজ করেন! এক কাজে পোষায়না বলে ২-৩ টা কাজ করেন! দিনে রাতে গড়ে ৩-৪ ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না! আবার সময়মতো ক্লাসে যোগ দিতে হয়, পরীক্ষায় পাশ করতে হয়! নতুবা ভিসা বাতিল হয়ে যাবে! জীবন এমন কঠিন এখানে!
অনেকে বিবিএ, এমবিএ, মাস্টার্স এসব পড়ার কথা বলে আসতে চান! কাজের বাজার নেই, অথচ এসব অনর্থক উচ্চশিক্ষার বিলাসিতা বুঝি শুধু বাংলাদেশেই সাজে! এখানে পড়ার টার্গেট হলো কোনটা পড়লে অভিবাসনের জন্য আবেদন করা যাবে! অভিবাসন হয়ে গেলে ৬ মাস পর পর গুনতে হবেনা টিউশন ফীর টাকা! এখানে তাই পড়াশুনার বড় টার্গেট অভিবাসন! অভিবাসন হয়ে যাবার পর আপনি একজন অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে ফী হেল্পের সুযোগ নিয়ে জজ-ব্যারিষ্টার হোন, কেউতো না করবেনা! পড়াশুনার জন্য দেশে সময় নষ্ট না করতে বলার কারন, বাংলাদেশের পড়াশুনার কোন দাম নেই এখানে! বাংলাদেশে এমবিবিএস পাস এখানে মূল্যহীন! যতক্ষন না আপনি এএমসি তথা অস্ট্রেলিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরীক্ষা পাস করছেন! দু’পর্বের এএমসি পাস যে কী কঠিন, তা ভূক্তভোগীরা জানেন।
যত কঠিন কথাবার্তা বললাম, সব জয় করে কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা এদেশে অনেক ভালো আছেন! পড়াশোনা অভিবাসন শেষে ছেলেটা বা মেয়েটা বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করে বউ বা স্বামীকে অস্ট্রেলিয়ান হিসাবেই নিয়ে আসছে, অস্ট্রেলিয়ান হিসাবেই এদেশের হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে তাদের নতুন প্রজন্ম, আবার আমরা যেহেতু দ্বৈত নাগরিকত্ব সংরক্ষন করতে পারি, নাড়ির টানে এরা নিয়মিত দেশে আসছে যাচ্ছে, তাদের সন্তানদের জন্ম উপলক্ষে বাবা-মা বেড়াতে আসছেন অস্ট্রেলিয়া, দেখে যাচ্ছেন ছবির মতো সাজানো একটা দেশ, কম্পেয়ার করতে পারছেন, কী অবস্থা বাংলাদেশের! অথচ কী হতে পারতো! এভাবে দেশবিদেশ ঘুরেই একটা দেশ সভ্যতা আরও পরিপূর্ন হয়! আর আমরাতোবিদেশ থেকে আমাদের পরিবারগুলোকে টাকাও দেই! ঈদে উৎসবে আমাদের নানান আনন্দ বিলিয়ে দেই দেশের মানুষের মধ্যে! এমন শতভাগ সৎ ইনকামের আরও কিছু স্বচ্ছল মানুষ গড়তেইতো চাই আমার দেশের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি করে আসুক অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত রাষ্ট্রে! আমারতো চাহিদা এতটুকুই!
[সংগৃহীত]