আশুরা কবে ২০২৪ | মহরম বা আশুরার ছুটি কত তারিখে, রোজা কয়টি, তাৎপর্য ও ফজিলত
আশুরা কবে ২০২৪ এবং মহরম বা আশুরার ছুটি কত তারিখে, রোজা কয়টি, তাৎপর্য ও ফজিলত – এ ব্যাপারে এই পোস্টে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আশুরা পালিত হবে ১৭ জুলাই ২০২৪ (বুধবার)।
আশুরা কবে ২০২৪
মহররম মাসের চাঁদ দেখা যায়নি, ফলে ৭ জুলাই ২০২৪ পবিত্র জিলহজ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং সোমবার ৮ জুলাই ২০২৪ থেকে পবিত্র মহররম মাস গণনা অর্থাৎ আরবি নতুন বছর ১৪৪৬ হিজরি শুরু হবে। সেই হিসাবে ১৭ জুলাই ২০২৪ (বুধবার) তারিখে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। ।
মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এ দিন ও এর আগে বা পরে একদিন মিলে মোট দুই রোজা রাখবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ রোজা রাখাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক পছন্দ করতেন বলে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে।
আগামী ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। বিভিন্ন দেশে শিয়ারা বিশেষভাবে আশুরা পালন করে থাকে।
আশুরার ছুটি কবে ২০২৪
হিজরি সনের প্রথম মাস হচ্ছে মহররম। আশুরার দিন দেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকে। আশুরার দিন (১৭ জুলাই ২০২৪, বুধবার) দেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকবে।
আশুরা কি
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য বিশেষ কিছু সময় ও মৌসুম দিয়েছেন যে সময়ে বান্দা অধিক ইবাদত ও ভালো কাজ করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। মুমিনের জন্য এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। অতীতে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় গুনাহসমূহ মার্জনা করানোর সুবর্ণ সুযোগ বটে। এই বরকতময় সময়ের মধ্য থেকে একটি হচ্ছে, ‘মহররম ও আশুরা’।
আশুরা কারবালার যুদ্ধে হোসাইন ইবনে আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের শাহাদাতকে চিহ্নিত করে।
আশুরার তাৎপর্য ও ফজিলত
- তাৎপর্য : এ মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এ দিনের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। ইতিহাসের বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে এই দিনে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে রোজা রাখো কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মুসা (আ.) রোজা রাখেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০৪)
- ফজিলত : এই বিশেষ দিনের কিছু ফজিলত রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসের মাঝে তা বর্ণিত হয়েছে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের (গুনাহ) ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫২)।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ দিন ব্যতীত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো মাসকে এ মাসের (রমজান) তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে রোজা রেখেছেন আমার জানা নেই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৫২)
আশুরার রোজা কয়টি
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ওয়াজিব না মুস্তাহাব ছিল এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের দ্বিমত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, (জাহেলি সমাজে) লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গিলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৯২)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব।
আশুরার রোজা কত তারিখে
মহানবী (সা.) ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ তারিখে রাখতে পারলে ভালো। কারণ হাদিসে ৯ তারিখের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখছিলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলেছিলেন তখন সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা সম্মান করে? তখন নবীজি এ কথা শুনে বললেন, ইনশাআল্লাহ, আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব। বর্ণনাকারী বললেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৬)
এ জন্য ইবনে আব্বাস (রা.) বলতেন, তোমরা ৯ তারিখ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখো এবং ইয়াহুদিদের বিরোধিতা করো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৫)