হাবিবুর রহমান তারেক
ইংরেজি না জানার কারণে হাস্যকর ঘটনার উদাহরণ যেমন আছে, ঠিক তেমনি বিব্রত ও বিপদে পড়ার নজিরও আছে। ইংরেজি ভাষা জানার ও শেখার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিজিওনাল টিচিং সেন্টার ম্যানেজার জন গোর বলেন, শুধু উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরিক্ষেত্রেই নয়, দৈনন্দিন কাজেও সঠিক ইংরেজি ভাষা প্রয়োগের যথেষ্ট প্রয়োজন হয়। তাই এ ভাষায় দক্ষতা থাকাটা জরুরি।
ইংরেজি শেখা কতটা জরুরি
‘ওরা রোজ চেনে, গোলাপ চেনে না’−ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন মন্তব্যই করলেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অথচ মূলধারার শিক্ষার্থীরা দক্ষ শিক্ষকের অভাবে সঠিকভাবে ইংরেজি শেখার সুযোগ পাচ্ছে না।’
‘বাংলাদেশ যত দিন না জাপানের মতো স্বনির্ভর হতে পারবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্বায়নের এই ভাষা (ইংরেজি) শিখতেই হবে’−বললেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
ইংরেজিতে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই ইংরেজি বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকলেও শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থে শিখতে পারছে না। অনেক দেশে অডিওভিজ্যুয়াল মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হয়, অথচ আমাদের দেশে এই সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে খুব সীমিত জ্ঞান নিয়েই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ অবস্থার উন্নতির জন্য দক্ষ শিক্ষক তৈরি করতে হবে।’
ইংরেজি শেখার কোর্স
বিভিন্ন বয়সের ও পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করছে। ইংরেজি বলতে, পড়তে, লিখতে ও ব্যাকরণের সঠিক ব্যবহার বুঝতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ের ইংরেজি শেখানো হয় ‘জেনারেল ইংলিশ’ কোর্সে। আট থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশুদের জন্য আছে ‘ইয়াং লার্নারস’ কোর্স। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রয়োজনে ইংরেজিতে কথোপকথন ও লেখার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দুটি লেভেলে পাঠদান করা হয়, যাকে বলে ‘বিজনেস ইংলিশ’ কোর্স। এ কোর্সগুলোর পাশাপাশি ‘অটোনোমাস লার্নিং’-এ স্বশিক্ষণ পদ্ধতিতে শেখার ব্যাপারে সহায়তা ও শিক্ষা উপকরণ (অডিও ক্যাসেট, সিডি, বই) সরবরাহ করে ব্রিটিশ কাউন্সিল টিচিং সেন্টার।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ছাড়াও সাইফুর’স, মেনটরস, গেটওয়ে আইইএলটিএস পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতির জন্য বিশেষ কোর্স পরিচালনা করছে। তা ছাড়া বেসিক ইংরেজি, নেচারাল স্পোকেন, ফ্লুয়েন্ট স্পোকেন, ফোনেটিকস ও টোফেলের ওপর বিভিন্ন কোর্স করাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন কোচিং সেন্টার।
সঠিকভাবে পড়তে ও লিখতে শিখুন
ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোকাবুলারি অর্থাৎ শব্দভাণ্ডার বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস। ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি ইংরেজি ভাষার দৈনিক পত্রিকা, নিবন্ধ, গল্প পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক, অফিশিয়াল, একাডেমিক ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিঠি, সংবাদপত্রে লেখার নিয়মকানুন, আবেদন, চুক্তিপত্রের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার প্রয়োজন পড়ে ইংরেজিতে। সঠিক নিয়মে লেখা ও পড়ার কৌশল ও পরামর্শসংবলিত ইংরেজি বইয়ের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় সহজভাবে লেখা অনেক বই পাওয়া যায় লাইব্রেরিগুলোতে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ভিসায় ইংরেজি যেসব দেশের নাগরিকদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, সেসব দেশের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ‘ইংরেজি ভাষা দক্ষতা’ প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট সিস্টেম) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো স্কোর পেতে হয়। আইইএলটিএস সম্পর্কে ধারণা থাকলেও অনেকেই জানেন না ইংরেজিতে আরো কিছু ভাষাশিক্ষা কোর্স প্রচলিত আছে। এসব কোর্স ‘টোফেল’ (টেস্ট ইংলিশ অ্যাজ অ্যা ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ), ‘ইএসএল’ (ইংলিশ অ্যাজ অ্যা সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) এবং ‘ইএসওএল’ (ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজ) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যেমন সুযোগ আছে, তেমনি চর্চা ও প্রশিক্ষণেরও সুযোগ আছে। রাজধানীর নীলক্ষেতসহ দেশের প্রায় সব অভিজাত লাইব্রেরিতেই পাওয়া যায় আইইএলটিএস প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় সব বইসহ শিক্ষা উপকরণ।
কোথায় শিখবেন
১. ব্রিটিশ কাউন্সিল টিচিং সেন্টার, ৭৫৪বি সাতমসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন : ০২-৯১১৬১৭১।
২. সাইফুর’স, ৬৯/১ সুবাস্তু টাওয়ার (দ্বিতীয় তলা), গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। ফোন : ০২-৮৬২৮৬২৪।
৩. মেনটরস, ১৬৬/১ মিরপুর রোড, কলাবাগান, ঢাকা। ফোন : ০২-৯১৩১৮২৮।
৪. গেটওয়ে, ৩/৩ ব্লক-এ, লালমাটিয়া, ঢাকা। ফোন : ০২-৯১২৫০৯২।
৫. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ঢাকা। ফোন : ০২-৯৬৬১৯০০ (বর্ধিত : ৮৫২১)।
তা ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে ইংরেজি শেখার সুযোগ আছে।
ইংরেজি শেখার বই
ইংরেজি শেখার প্রাথমিক স্তরে ইংরেজিতে লেখা বইগুলোর চেয়ে বাংলায় লেখা বইগুলো পড়ে শেখাটাই ভালো বলে মত দেন শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা। নীলক্ষেতের হক লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মাযাহার উদ্দিন সোহেল জানান, ইংরেজি শেখার বইগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাজার ঘুরে যেসব বই পাওয়া গেছে, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে_জাকির হোসেন রচিত ‘অ্যাপ্রোচ টু ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ’ (রোহেল পাবলিকেশন, ১৮৫ টাকা), সাইফুর’স গ্রামার (সাইফুর’স, ১৩০ টাকা), পি সি দাশ রচিত ইংলিশ গ্রামার (ওরিয়েন্টাল পাবলিকেশন_ভারত, ১৫০ টাকা), টিচিং ইংলিশ ফর দ্য বেঙ্গলি স্পিকিং পিপল (এফএম পাবলিকেশন, ১৫০ টাকা), প্র্যাকটিক্যাল ওয়ে টু লার্ন ইংলিশ (প্রফেসরস পাবলিকেশন, ১১০ টাকা)। আইইএলটিএস-বিষয়ক বেশির ভাগ বই ইংরেজিতে লেখা। তবে কিছু বই বাংলায় লেখা হয়েছে। বাংলায় লেখা ‘আইইএলটিএস রাইটিং’ বইটির বেশ চাহিদা আছে বলে জানান এক দোকানি।
অনলাইনেও আছে শেখার সুযোগ
ইংরেজি শেখার সব উপকরণই আছে অনলাইনে। ইংরেজি ব্যাকরণ, উচ্চারণরীতি, কথোপকথন, ভোকাবুলারি, ফোনেটিকস, বেসিক ইংলিশ, বিজনেস ইংলিশ, আইইএলটিএস, টোফেল ছাড়াও ইংরেজি-বিষয়ক অনেক তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ অনলাইনের ইংরেজি জগৎ। তা ছাড়া ইংরেজি ভাষা শেখার সহায়ক ই-বই, লেসন, অডিওসহ অনেক রিসোর্স পাওয়া যাবে অনলাইনে। অনলাইনে ঘরে বসে ইংরেজি শেখা যাবে এই সাইট থেকে_িি.িবহমষরংয-ধঃ-যড়সব.পড়স। তা ছাড়া এই সাইটগুলোও সহায়ক হবে ইংরেজি জানতে ও শিখতে_www.learningenglish.org.uk, www.learn-english-today.com, www.english-online.org.uk, www.ego4u.co।
সাধারণ বাংলাভাষীদের ইংরেজি শেখায় সম্পৃক্ত করতে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। ‘বিবিসি জানালা’ নামের ইংরেজি শেখার সহায়ক এ সাইটের ঠিকানা-www.bbcjanala.com।
সূত্র: কালের কণ্ঠ । ২৯ জুন, ২০১০