মাউসের ক্লিকে উল্টে যাবে বইয়ের পাতা, দেখা যাবে হুবুহু মূল বইয়ের মতো। সত্যিই এমন সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব বই এখন মিলছে ‘ই-বুক’ আকারে। আছে ডাউনলোড, এমনকি প্রিন্ট করেও পড়ার সুবিধা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন হাবিবুর রহমান তারেক
ছুটি পেয়েই মা-বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে হাজির স্কুলছাত্র তন্ময়। তাড়াহুড়ো করে চলে আসায় ভুলে পাঠ্যবই সঙ্গে আনা হয়নি। ছুুটির পরই ক্লাসটেস্ট। এ কারণেই মন খারাপ। এ সমস্যার সমাধান হয়েছে বড় ভাইয়ার কাছ থেকে ‘ই-বুক’-এর কথা শুনে। তিনি জানালেন, ওর শ্রেণীর সব বইয়ের ই-সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। পড়া যাচ্ছে খুব সহজে। এর জন্য হাতের কাছে শুধু ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটার থাকলেই চলে।
‘ই-বুক’ এখন অনেক সহজ
‘শিখব_যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়’−এ স্লোগানকে সামনে রেখে সম্প্রতি সরকার স্কুলের সব পাঠ্যবইয়ের বিশেষ অনলাইন সংস্করণ (ই-বুক) প্রকাশ করেছে ওয়েবে। www.ebook.gov.bd ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব বই। ২০১০ সালে এনসিটিবি প্রথমবারের মতো পাঠ্যবই অনলাইনে ‘পিডিএফ’ আকারে প্রকাশ করেছিল। তবে সে সাইট ততটা শিক্ষার্থীবান্ধব ছিল না। আর ই-বুক সে তুলনায় অনেক সহজ।
ভার্চুয়াল এ জগতে শেলফে থরে থরে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর বই। সহজেই খুঁজে নেওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের বই। সাইটটিতে যুক্ত করা হয়েছে পড়া কিংবা সংগ্রহ করার অপশন। এত সহজ করে সাজানো হয়েছে সাইটটি, যাতে নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারীরাও এ সাইটের সব পৃষ্ঠায় খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-বুকের ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারবান্ধব, প্রয়োজন এবং আগ্রহের কথা বিবেচনা করেই। সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাতে খুব সহজে কাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজে পায়, এ কারণে এ সাইটের ফিচার বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। ‘যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে’ ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন কম্পিউটারে ই-বুক পড়া কিংবা ডাউনলোড করা যাবে। শুধু ডেঙ্টপ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ-নোটবুকই নয়, ফ্ল্যাশ (বিশেষ সফটওয়্যার) সমর্থনকারী মোবাইল ফোন, টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির ট্যাবলেট পিসি ও ই-বুক রিডারেও পড়া যাবে এসব বই।
প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের সব বই
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবইয়ের বিশেষ অনলাইন সংস্করণ বা ‘ই-বুক’ আকারে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে এ সাইটটি উন্মুক্ত সবার জন্য। এ সাইটে প্রাথমিক স্তরের ৩৩টি এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭৩টি পাঠ্যবইয়ের ই-সংস্করণ যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ যে কেউ বিনা মূল্যে যেকোনো সময় অনলাইনে ই-বুক দেখতে ও পড়তে পারবেন। প্রয়োজনে ডাউনলোড করে সংগ্রহ কিংবা প্রিন্টও করতে পারবেন।
অনলাইনে ‘ই-বুক’ পাওয়া যাবে বছরজুড়েই। তাই যারা নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর আগেই নিজের পড়াকে এগিয়ে রাখতে চায়, মুদ্রণকৃত বই সরবরাহের আগেই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারবে পাঠ্যবই। বই ছিঁড়ে গেলে কিংবা হারিয়ে গেলেও সমাধান এ ‘ই-বুক’।
ই-বুক প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরও কাজে আসবে। বিভিন্ন দেশে অনেক বাংলাদেশি পরিবার অবস্থান করছে। সেসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশিদের মতোই অংশ নেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়। এসব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য বিদেশে বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজন হয়। তাই ‘ই-বুক’ প্রবাসী শিক্ষার্থীদের বেশ কাজে দেবে।
ওয়েবসাইটের ‘ই-বুক’ অংশে বলা হয়েছে, শিখন পদ্ধতিকে আরো সহজ ও আকর্ষণীয় করার জন্য প্রয়োজনে অডিও, ভিডিও, মাল্টিমিডিয়া ও অ্যানিমেশন অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে সেখানে।
ই-বই পড়ার কায়দাকেতা
ই-বুকের সাইটের প্রচ্ছদ পাতার নিচের অংশে সব শ্রেণীর তালিকা প্রদর্শিত হবে। শিক্ষার্থী তার কাঙ্ক্ষিত শ্রেণীর ওপর ক্লিক করলে সে শ্রেণীর সব পাঠ্যবই সাইটে প্রদর্শিত বুক শেলফে সারি-সারি করে রাখা অবস্থায় দেখতে পাবে। কোনো বইয়ের ওপর ক্লিক করলেই ‘ওপেন’ এবং ‘ডাউনলোড’ অপশন দেখা যাবে। ‘ওপেন’ অংশে ক্লিক করে ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি পড়া যাবে। আর যদি সংগ্রহ করতে হয় তবে ক্লিক করতে হবে ‘ডাউনলোড’-এ। প্রিন্ট সংস্করণের মতো দেখতে হুবুহু অনলাইন সংস্করণের এসব বই। শিক্ষার্থীরা ‘নেক্সট’ অংশে ক্লিক করে পরের পৃষ্ঠায় যেতে পারবে।
ই-বই পড়তে যা লাগবে
ই-বুক সাইটের কারিগরি ত্রুটি এড়িয়ে সহজভাবে দেখতে বা পড়তে আপনার কম্পিউটারে দুটি সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে। এর একটি হচ্ছে ‘ফ্লাশ প্লেয়ার’, অন্যটি ‘উইনরার’। এ দুটি সফটওয়্যার সংগ্রহ করতে পারবেন ই-বু্ক সাইটের ‘সহায়তা’ অংশে ক্লিক করে কিংবা সরাসরি এ লিংক_ www.ebook.gov.bd/help.html থেকে। এ সাইটের বাংলা লেখা পড়তে সমস্যা হলে উলি্লখিত লিংকে প্রদর্শিত ফন্ট (ঘরশড়ংয ইধহ) অংশে ক্লিক করে তা ডাউনলোড করে নিন।
কিছু সীমাবদ্ধতা
কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্যবই এখনো যুক্ত হয়নি সাইটে। এ ছাড়া ই-বুক পড়তে বিশেষ সফটওয়্যার (ফ্ল্যাশ ফাইল পড়তে সক্ষম) কম্পিউটারে ইনস্টল করার প্রয়োজন হবে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নিদ হাসানের বাবা কামরুল হাসান বলেন, ‘কোনো কোনো পাঠ্যবইয়ের আকার ৩০-৪০ মেগাবাইট, যা কম গতির ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারে ডাউনলোড হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ । সিলেবাসে নেই । ১১-৫-২০১১
>> ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করে রাখুন : youtube.com/edudaily24