ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নামকরণের ইতিহাস

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে এখানে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সম্রাট বাবরের মুঘল আমল থেকে পাকিস্তান আমল, মোট পাঁচ বার ঢাকাকে রাজধানী করা হয়েছে।

বর্তমানে এই রাজধানী শহরে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ বসবাস করে। আর এই মানুষগুলোর কারো কাছে ঢাকা ভালোবাসার শহর, কারো কাছে জাদুর শহর আবার কারো কাছে মায়ার শহর।

ঢাকা শহরের বয়স প্রায় এক হাজার বছর৷ রাজা বল্লাল সেন নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দির নামের ঢাকা+ঈশ্বরী থেকে “ঢাকা” শব্দের উৎপত্তি। ১৬১০ সালে ঢাকাকে প্রথম বাংলার রাজধানী করা হয়। এ সময়ে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর।

১৭১৭ সালের পর দীর্ঘদিন ঢাকা রাজধানীর মর্যাদাহীন থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকাকে আবার বাংলার রাজধানী করা হয়; কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে ঢাকা থেকে রাজধানী আবার স্থানান্তর করা হয়। এরপর ১৯৪৭ সালে ঢাকাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী করা হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকাকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঘোষণা করা হয়।

১৬০৮ সালে যখন সুবাদার ইসলাম খাঁ এ জনপদে আসেন তখন থেকেই মূলত এ নগরের সমৃদ্ধির যাত্রা শুরু হয়৷ জংগল কেটে বানানো হয় নতুন অঞ্চল৷ বুনো পরিবেশ থেকে পালটে ঢাকা হয়ে যায় এক নতুন শহর। আজকের ঢাকার বিভিন্ন স্থান একসময় ছিল অতি মনোরম।

পাখির কলকাকলি, নদীর কলতান, জীবজন্তুর অবাধ বিচরণ ছিল প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায়। পরিবর্তনের দমকা হাওয়ায় বদলে গেছে সেসব জায়গার পরিবেশ। বদলে গেছে এমনকি সেসব স্থানের নামও।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নামকরণের ইতিহাস / ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গার নাম যেভাবে প্রচলিত হয়

গেন্ডারিয়া

ইংরেজি শব্দ Grand Area থেকে এসেছে, এখানে আগেরদিনের অভিজাত ধনী ব্যাক্তিগন থাকত।

ভুতের গলি

এখানে বৃটিশ একজন লোক থাকতেন নাম ছিল Mr. boot, তার নাম থেকে বুটের গলি, পরবর্তীকালে ভুতের গলি নাম হয়েছে।

মহাখালী

মহা কালী নামের এক মন্দীরের নাম থেকে হয়েছে বর্তমানের মহাখালী।

ইন্দিরা রোড

এককালে এ এলাকায় “দ্বিজদাস বাবু” নামে এক বিত্তশালী ব্যক্তির বাসাস্থান, অট্টলিকার পাশের সড়কটি নিজেই নির্মাণ করে বড় কন্যা “ইন্দিরা” নামেই নামকরণ।

পিলখানা

ইংরেজ শাসনামলে প্রচুর হাতি ব্যবহার করা হোতো । বন্য হাতিকে পোষ মানানো হোতো যেসব জায়গায়, তাকে বলা হোতো পিলখানা। বর্তমান “পিলখানা” ছিলো সর্ববৃহৎ।

এলিফ্যানট রোড

পিলখানা হতে হাতিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো “হাতির ঝিল”এ গোসল করাতে,
তারপর “রমনা পার্ক”এ রোঁদ পোহাতো। সন্ধ্যের আগেই হাতির দল পিলখানায় চলে আসতো । যাতায়াতের রাস্তাটির নামকরণ সেই কারণে এলিফ্যান্ট রোড। পথের মাঝে ছোট্ট একটি কাঠের পুল ছিলো, যার নামকরণ হোলো “হাতির পুল”।

কাকরাইল

ঊনিশ শতকের শেষ দশকে ঢাকার কমিশনার ছিলেন মিঃ ককরেল। নতুন শহর তৈরী করে নামকরণ হোলো “কাকরাইল”।

রমনা পার্ক

অত্র এলাকায় বিশাল ধনী রম নাথ বাবু মন্দির তৈরী করেছিলো “রমনা কালী মন্দির” । মন্দির সংলগ্ন ছিলো ফুলের বাগান আর খেলাধুলার পার্ক। পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় “রমনা পার্ক”।

গোপীবাগ

গোপীনাগ নামক এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। নিজ খরচে “গোপীনাথ জিউর মন্দির” তৈরী করেন । পাশেই ছিলো হাজারো ফুলের বাগান “গোপীবাগ”।

টিকাটুলি

হুক্কার প্রচলন ছিলো। হুক্কার টিকার কারখানা ছিলো যেথায় সেটাই “টিকাটুলি”।

তোপখানা

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গোলন্দাজ বাহিনীর অবস্থান ছিল এখানে।

পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ঢাকাস্থ সেনানিবাসে এক প্ল্যাটুন সেনাবাহিনী ছিল, প্ল্যাটুন থেকে নামকরন হয় পল্টন। পরবর্তীতে আগাখানিরা এই পল্টনকে দুইভাগে ভাগ করেন, নয়া পল্টন ছিল আবাসিক এলাকা আর পুরানো পল্টন ছিল বানিজ্যিক এলাকা ।

বায়তুল মোকারম

১৯৫০-৬০ দিকে প্রেসিডেন্ট আয়ুবের সরকারের পরিকল্পনা পুরানো ঢাকা-
নতুন ঢাকার যোগাযোগ রাস্তার । তাতে আগাখানীদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,
আবাসিক বাড়িঘর চলে যায়। আগাখানীদের নেতা আব্দুল লতিফ বাওয়ানী (বাওয়ানী জুট মিলের মালিক) সরকারকে প্রস্তাব দিলো, তারা নিজ খরচে এশিয়ার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ তৈরী করবে ।
এটা একটা বিরাট পুকুর ছিল “পল্টন পুকুর”, এই পুকুরে একসময় ব্রিটিশ সৈন্যরা গোসল কোরতো । ১৯৬৮ সনে মসজিদ ও মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়।

ধানমন্ডি

এখানে এককালে বড় একটি হাট বোসতো। হাটটি ধান ও অন্যান্য শস্য বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল।

পরীবাগ

পরীবানু নামে নবাব আহসানউল্লাহর এক মেয়ে ছিল । সম্ভবত পরীবানুর নামে এখানে একটি বড় বাগান করেছিলেন আহসানউল্লাহ ।

পাগলাপুল

১৭ শতকে এখানে একটি নদী ছিল, নাম – পাগলা। মীর জুমলা নদীর উপর সুন্দর একটি পুল তৈরি করেছিলেন। অনেকেই সেই দৃষ্টিনন্দন পুল দেখতে আসত। সেখান থেকেই জায়গার নাম “পাগলাপুল”।

ফার্মগেট

কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য বৃটিশ সরকার এখানে একটি ফার্ম বা খামার তৈরি করেছিল । সেই ফার্মের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম হোলো ফার্মগেট।

শ্যামলী

১৯৫৭ সালে সমাজকর্মী আব্দুল গণি হায়দারসহ বেশ কিছু ব্যক্তি এ এলাকায় বাড়ি করেন। এখানে যেহেতু প্রচুর গাছপালা ছিল তাই সবাই মিলে আলোচনা করে এলাকার নাম রাখেন শ্যামলী।

সূত্রাপুর

কাঠের কাজ যারা করতেন তাদের বলা হত সূত্রধর। এ এলাকায় এককালে অনেক শূত্রধর পরিবারের বসবাস ছিলো। সেই থেকেই জায়গার নাম হোলো সূত্রাপুর।

Rate this post

 সাবস্ক্রাইব

 দরকারি খবরাখবর ও তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য সোশ্যল প্লাটফর্মগুলোতে Follow/Subscribe করুন।

Like/Follow our Facebook page

Subscribe our Instagram channel

Follow our Google news page

Subscribe our Youtube channel

সর্বশেষ আপডেট পেতে Edu Daily 24 এর Facebook পেজ, Google news পেজ ও Youtube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব/ফলো করুন। নোটিফিকেশন পেতে APPও ইনস্টল করে রাখতে পারেন।

মন্তব্য করুন

You cannot copy content of this page