সরকারি সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে সিনিয়র স্টাফ নার্স (দশম গ্রেড) পদে ২২৫০ জন নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আবেদন করা যাবে ১৭ মে ২০২০ তারিখ (বর্ধিত সময়) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। নিয়োগ পরীক্ষায় কিভাবে আরো কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন মুজাহিদ উদ্দীন

সরকারি নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি :
সিনিয়র স্টাফ নার্সিং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের সর্বপ্রথম ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে এক ঘণ্টাব্যাপী হবে। পরীক্ষায় মোট ১০০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন।
আর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ কাটা যাবে। পরীক্ষা হবে বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি)-২০, সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয়ে-৪০ নম্বরসহ সর্বমোট ১০০ নম্বরের।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের চার ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত/ব্যাবহারিকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৫০ নম্বরের ব্যাবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

তবে এখানে উল্লেখ্য যে আবেদনকারী প্রার্থীর সংখ্যা ১০০০-এর কম হলে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বা এমসিকিউ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে না। সরাসরি ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিয়ে তারপর ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি :

♦ বাংলা : নবম-দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের বিভিন্ন গল্প, কবিতা ও রচয়িতাদের সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এসে থাকে।
এ ছাড়া কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কে বেশি প্রশ্ন আসে। কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যু সাল, তাঁদের জীবনকাহিনি, যেসব কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি রচনা করেছেন, এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ও লেখকের নাম জানতে চাওয়া হয়। ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বইটা টেক্সট বই হিসেবে খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। না বুঝে মুখস্থ করা যাবে না।

ব্যাকরণ অংশ থেকে পরিভাষা, এককথায় প্রকাশ, বাগ্ধারা, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, শব্দ, যুক্তবর্ণ প্রভৃতি থেকে প্রতিবছর প্রশ্ন এসে থাকে। তাই এ টপিকগুলো গুরুত্বসহকারে পড়ে বাকি টপিকগুলোও পড়তে হবে।

♦ প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বিষয় : এই পরীক্ষা যেহেতু নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করার প্রার্থীরাই দেবে, তাই এ বিষয়ে সবারই মৌলিক ধারণা থাকা স্বাভাবিক। তবু পুরনো পড়া ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য মৌলিক কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে।

নার্সিং পেশায় প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বেশি কাজে লাগে সেসব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে; যেমন—অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, কমিউনিটি অব নার্সিং, অ্যাডাল্ট নার্সিং, ফান্ডামেন্টাল নার্সিং, সাইকোলজি, মেন্টাল হেলথ, অর্থোপেডিক, মিডওয়াইফারি, ফার্মাকোলজি প্রভৃতি বিষয়। এ ছাড়া আরো দেখতে হবে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস, নিউট্রিশন অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সাপোর্ট, পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড নিউ বর্ন নার্সিং, ইন্টার্নশিপ অথবা পেশাগত ক্লিনিক্যাল ডিউটির বাস্তব জ্ঞান ধারণা রাখতে হবে।

♦ ইংরেজি : Sentence, Narration, Voice Change, Correct from of Verbs, Suffix-Prefix, Translation, Pronunciation, Synonyms and Antonyms, Group verb, One word substitutions, Transformation of Sentence, Appropriate Word, Appropriate Preposition, Idioms and Phrases ইত্যাদি থেকে সাধারণত বেশি প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া গ্রামারের অন্যান্য বিষয়ও দেখতে হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য পিসি দাসের লেখা Applied English Grammar and Compositions বইটা বেশ কাজে দেবে। ইংরেজির চর্চা প্রতিদিনই রাখতে হবে। কেননা প্রফেশনাল বিষয়ে অনেকেই ভালো করলেও ইংরেজিতে তেমন নম্বর তুলতে পারেন না। তাই ইংরেজি বিষয়টা প্রার্থীদের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

♦ সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানের যেহেতু কোনো সিলেবাস নেই, তাই সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়া যেতে পারে।
বিগত সালে আসা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারলে বেশ কাজে দেবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে গিয়ে লক্ষ করলে দেখা যাবে, ওই সময়ে বিষয়টা সাম্প্রতিক ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার আবেদন হারিয়েছে। সেসব প্রশ্ন বাদ দিয়ে পড়তে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট কত ছিল? এই প্রশ্নটা ওই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু এখন এটার আবেদন হারিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট কত?

নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটা নোট করে পড়তে পারলে কাজে দেবে।
সাধারণ জ্ঞানের যে বিষয়গুলো কঠিন মনে হয়, সেগুলো ছন্দ বা সূত্র বানিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক তারিখ-সাল মনে রাখতে যাঁদের কষ্ট হয় তাঁদের জন্য পরামর্শ হলো, গুরুত্বপূর্ণ অল্প কয়েকটা তারিখ-সাল ছাড়া অন্যান্য তারিখ মনে রাখার দরকার নেই। কেননা বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারিখ-সাল সম্পর্কিত দু-তিনটির মতো প্রশ্ন এসে থাকে।

লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস ও নম্বর বণ্টন :
লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা-৪০, ইংরেজি-৪০ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল/ প্রফেশনাল বিষয়ের ওপর ৮০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

♦ বাংলা :
(ক) রচনা-১৫ (খ) সারাংশ/সারমর্ম-০৫
(গ) পত্র লিখন : ব্যক্তিগত পত্র, পত্রিকায় প্রকাশার্থে পত্র, ব্যবসাসংক্রান্ত পত্র, স্মারকলিপি।
(ঘ) বঙ্গানুবাদ-০৫ (ঙ) ব্যাকরণ : ভাষার সংজ্ঞা, ভাষার রূপ, সাধুভাষা ও চলিত রীতির রূপান্তর, দেশি ও বিদেশি শব্দ, ণত্ববিধান ও ষত্ববিধানের সংজ্ঞা ও নিয়মাবলি, দ্বিরুক্ত শব্দ, পদ, ধাতু, উপসর্গ, অনুসর্গ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বিরাম চিহ্ন, শুদ্ধ ও অশুদ্ধ, বাগ্ধারা, বাক্য সংকোচন, প্রতিশব্দ ও সমার্থক শব্দ, প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ, একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ-১০।

♦ ইংরেজি :
(a) Essay (with hints)-15, (b) Letter : official/demi official/memorandum/ Bussiness type-05. (c) Comprehension-10, (d) Grammar : Use of verb, Preposition, Voice, Naration, Correction of Errors in Composition, Use of Words having similar pronunciation but conveying different meaning, use of Idioms and Phrases.

♦ সাধারণ জ্ঞান :
(ক) বাংলাদেশ বিষয়াবলি-১৫
বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস, শিল্প ও সাহিত্য, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, জলবায়ু পরিবেশ, বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যের অবদান, উন্নয়ন পরিকল্পনা।
(খ) আন্তজার্তিক বিষয়াবলি-১৫
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, গ্লোবালাইজেশন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ, বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা স্থানসমূহ।
(গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-১০
দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বায়ু, মাটি, তাপ, বিদ্যুৎ, আলো, চুম্বক, খাদ্যের উপাদান, জনস্বাস্থ্য, দূষণ ও কম্পিউটার।

♦ প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয় :
(ক) তাত্ত্বিক-৩০ (খ) ব্যাবহারিক বা প্রায়োগিক বিষয়-৫০

সূত্র : কালের কণ্ঠ । চাকরি আছে । ২৫ এপ্রিল ২০২০