পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর


এডু ডেইলি ২৪ প্রকাশ: নভেম্বর ১৭, ২০১৫, ৭:৫৯ অপরাহ্ন / আপডেট: জুন ৮, ২০২৩, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন /
পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একঘেয়েমি জীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দময় শিক্ষা সফর-এর আয়োজন করা হয়।
এ শিক্ষা সফরের গন্তব্যের তালিকায় ছিল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠি বাড়ী, লালন শাহের মাজার ছেউড়িয়া, দেশের অন্যতম বৃহত্বম ভেড়ামারার লালন শাহ সেতু, ঐতিহাসিক মুজিব নগরসহ মাদারিপুর, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানে।
একদিন পূর্বেই সমিতির উপদেস্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ স্যারের নেতৃত্ব্যে সমিতির উপদেষ্ট কৃষি অনুষদের সহকারি অধ্যাপক নওরোজ জাহান লিপি, সহকারি রেজিস্ট্রার হাসিব মোঃ তুষার, প্রভাষক সাইদ অসুস্ততাসহ বিভিন্ন জরুরি সমস্যার কারনে শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও শিক্ষা সফর সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দেয়া ও সফরের সবার জন্য শুভ কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ডের সামনে বকুলতলা থেকে ভোর ৪টায় শুরু হয় ধানসিঁড়ি ছাত্র কল্যান সমিতির শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণ। শিক্ষা সফরের আনন্দে এদিন অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী বন্ধুদের কারোই চোখে ঘুম ছিলনা। তবে ক্যাম্পাস থেকে রাত ৩ টায় গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও সবাই রেডি হয়ে বাসের কাছে আসতেই ভোড় ৪টা বেজে যায়।
ক্যাম্পাস থেকে গাড়ী বরিশাল আসার পথে চলে আড্ডা গান আর কাওয়ালি গাওয়া। বরিশাল সাগরদি থেকে আমাদের সাথে সফরে অংশগ্রহণ করেন আমাদের সমিতির উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ের সেকশন অফিসার ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও সাংবাদিক মোঃ ইমাদুল হক প্রিন্স এবং আমাদের সফরের ক্ষুদে সদস্য সবার প্রিয় ও আদরের বন্ধু শিব্বির। অবশ্য ক্যাম্পাস থেকে আগেই আমাদের সাথে উপদেস্টা সহকারি অধ্যাপক সুজন কান্তি মালি ও প্রভাষক পারমিতা মজুমদার স্বর্না ছিল।
বরিশাল থেকে গাড়ি কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়ার পর সকাল সাড়ে ৭টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌছলে সেখানে চলে আমাদেও সকালের নাস্তা। এখানে বাস থেকে নেমেই প্রথমে চলে নিযেদের গ্রুপ ছবি তোলার হিড়িক যা ছিল চোঁখে পড়ার মতো। নাস্তা সেড়ে পুরো ৪ ঘন্টা বাসে হৈ হুলোর শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাস থামে। আবারো চিরাচরিত আওয়াজ দিয়েই সবাই নেমে যায়। সময়পেণ হয়ে যাচ্ছে সমিতির উপদেস্টাদের এ বক্তব্য শুনে যে যার মত করে একেবারে এই দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘুড়তে ছড়িয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের এক ঘেয়েমি জীবনের গ্লানি থেকে মুক্ত হতে সবাই বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। আমাদের অতিথি নাছরিন সুলতানা পাপড়ি ও উপদেষ্টা পারমিতা মজুমদার স্বর্না বললেন ওফ, কোথা থেকে কোথায় এলাম, খুব ভালোই লাগছে। নিযেদের কান্তি দূর করার আগে সমিতির সদস্যরা সবাই সমস্বরে একইভাবে উক্তি করে। তাদের অনুভূতি দেখে যেন মনে হয়। দীর্ঘ দিন খাঁচায় ভর্তি বিষন্নমনা পাখিরা আজ মুক্তি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক হলের সামনের দিঘির সিড়িতে দাড়িয়ে পানি ছিটাছিটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায় ছোট বেলার হারিয়ে যাওয়ার সেই স্মৃতিতে। এতে বাদ যায়নি সমিতির উপদেস্টারাও। এই মুহুর্তে আবার অনেককে দেখা যায় ক্যামেরাম্যানের ভূমিকায়। তবে অন্যের ছবি তোলার জন্য নয়। ভাগাভাগি করে নিযেদের ছবি তোলা শেষে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ন সড়ক ও ভবন প্রদক্ষিনশেষে ইবির স্বনামধন্য শিক্ষক প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম, সহকারি অধ্যাপক মোঃ আমজাদ, মোঃ তানভির এর আমন্ত্রনে মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে দুপুরের লাঞ্চ সেড়ে ইবির সহযোগী অধ্যাপক খালিদ মাহমুদ জুয়েল আমাদের সাথে সফরে যোগ দেন।
এবার যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়া শহরের আমাদের নির্ধারিত হোটেলে। হোটেলে ক্ষানিক বিশ্রাম নিয়ে সবাই রওয়ানা হলাম বাউল সাধক লালন শাহের ঐতিহাসিক মাজারে। সেখানে স্মৃতি জাদুঘর ও মাজারে ক্ষাণিক বিশ্রাম নিতেই রাত। মাজারের সব ঘুড়ে যে যার মত করে একতারা, দোতরাসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনা কাটা করে রওয়ানা হলাম লালন শাহ সেতু ও ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র দেখার জন্য এখানে সেতুর ওপারে ঈশ্বরদি পাবনার একাংশ দেখে রাত ১০টায় ফিরে এলাম কুষ্টিয়ার মজমপুরে আমাদের নির্ধারিত আবাসিক হোটেলে। রাতের খাবার অবস্য এখান থেকে হোটেলে ওঠার আগে খেয়ে নেই। রাতে হোটেলে চলে আড্ডা গল্প আর গান।
রাত শেষে পরদিন সকাল ৯টায় নাস্তা শেষে আমরা রওয়ানা হলাম বিষাদ সিন্ধু খ্যাত কবি মির মোশারফ হোসেনের বাড়ী ও গড়াই নদী হয়ে শিলাইদহে রবি ঠাকুরের বাড়ী । এখানে পৌছলে এবারে যেন আগের চেয়ে আরো বেসি আনন্দ উপভোগ করা। এখানে বাউলদের গান শুনে রবি ঠাকুরের বিভিন্ন ব্যবহার সামগ্রীর ছবি তুলে রওয়ানা হলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। সেখানে আমরা দুপুর ১টায় পৌছে পবিপ্রবির সাবেক রেজিস্ট্রার মোঃ নওয়াব আলী খান এবং ইবির মাননীয় ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার, মাননীয় প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করে ও ছবি তুলে রওয়ানা হলাম মেহেরেপুরের মুজিব নগরের উদ্দেশ্যে।
ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা হয়ে আমরা সন্ধ্যায় মুজিবনগরে পৌছে সবাই দুই দলে বিভক্ত হয়ে আম বাগান, মানচিত্র ও সৌধ দেখে বরিশালের দিকে যাত্রা। এবার ফিরে আসার গল্প। ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময় সমিতির উপদেস্টা মন্ডলি ও শিক্ষার্থীদেরকে যেমনটা দেখাচ্ছিল তার উল্টোটা ঘটে ঠিক ফিরে আসার সময়। সবার চোখে-মুখে কেমন যেন একরাশ বিরক্তি/বিষন্নতা ও মনমরা ভাব!
চলে আসতে চাইলে কি এই মজার মজার জায়গা থেকে আসা যায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের এতটা বছরে যতটা আনন্দ করেছি তার থেকেও বেশি আনন্দ করেছি এই কয়েক ঘন্টায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জীবন মানেই অন্যরকম এক জীবন। আর এ ক্যাম্পাসের একেকটি শিক্ষা সফর যেনো একেকটি আনন্দময় ইতিহাস। যার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্বটা সাময়িকের জন্য হলেও কাছে চলে আসে, যা সত্যি আনন্দের।
– ছাবিনা ইয়াছমিন

Rate this post