ফিচার

ফিরে দেখা ২০১১ : আলোকিত ৭

এ বছর শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা। দৃষ্টি কেড়েছে সরকারের কয়েকটি উদ্যোগ। উদ্যোগগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ান নিয়েই এ বর্ষশেষ আয়োজন। লিখেছেন হাবিবুর রহমান তারেক

 স্কুল বাস : শিক্ষার্থী বেড়েছে, বাড়েনি বাস
কলম হাতে কাগজে নিজের সামর্থ্যের জানান দেওয়াটা একজন শিক্ষার্থীর জন্য সহজ। কিন্তু ভিড় ঠেলে পাবলিক বাসে ওঠা তার জন্য কঠিন, এটা ঝুঁকিও। তা ছাড়া ঘড়ি ধরে বাসা থেকে বের হলেও যাতায়াতের সমস্যার জন্য ঠিক সময়ে স্কুলে পেঁৗছার নিশ্চয়তাও নেই। এ সমস্যা অনেকটা কমেছে ১৬ জানুয়ারির পর থেকে। এ দিনটিতে ঢাকার নির্দিষ্ট রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে পেঁৗছে দিতে এ সেবা চালু করা হয় ১৪টি বাসের মাধ্যমে। মিরপুর থেকে আজিমপুর রুটের আশপাশের ২৬টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলাচল করে এ বিশেষ বাস। ৩৩টি নির্ধারিত স্থান থেকে স্কুল ড্রেস পরা শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে পেঁৗছে দেওয়া হয় গন্তব্যে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা খুশি। তবে অনেক অভিভাবক বাস ও রুটের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করছেন। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র মিনহাজের বাবা আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় সময়মতো বাস পাওয়া যায় না, তখন বাধ্য হয়ে পাবলিক বাসে উঠতে হয়। বাস সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছিল বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রাজধানীর আরো কয়েকটি রুটেও এ সার্ভিস চালুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি।’

বিআরটিসির ডিজিএম (অপারেশন) মেজর শফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নানা কারণে বাস ও রুটের সংখ্যা বাড়াতে পারিনি। তবে এখন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছ থেকে আগের চেয়ে বেশি সাড়া মিলছে। বিদ্যালয়গুলো চাইলে আমরা আলাদাভাবেও তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে পারব।’
মুঠোফোনে ভর্তি : লাইনের দিন শেষ
ঠিকানা নিয়ে কলেজ খোঁজা, লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম সংগ্রহ, ফরম পূরণ ও জমা তো আর কম ঝামেলা নয়। তাই যোগ্যতা থাকলেও গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার সাহস করত না অনেকে। সময় বদলেছে, ভর্তির চিরাচরিত চিত্রটাও গেছে পাল্টে। এখন থেকে ঘরে বসেই কলেজে ভর্তির আবেদন করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থী তার পছন্দের কলেজে আবেদন করতে পারছে এসএমএসের মাধ্যমেই। গত জুনে ঢাকার ১৬টি, চট্টগ্রামের পাঁচটি, কুমিল্লার ১১টি সেরা কলেজ প্রথমবারের মতো মুঠোফোনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। ফলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আর আগের মতো জটিলতা থাকছে না। তেজগাঁও কলেজে এ বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ফিরোজ জানায়, এসএমএসে ভর্তির সুযোগ না থাকলে হয়তো গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আবেদন করা হতো না। এ প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থ_দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন : ঝক্কি-ঝামেলা আর না, আর না
শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিকে এখন আর শিক্ষা বোর্ডে ছুটতে হবে না। অনলাইনে করা যাবে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নিবন্ধন। ইলেকট্রনিক ফরম ফিলআপ (ইএফএফ) ও ইলেকট্রনিক স্টুডেন্ট ইনফরমেশন ফরম (ইএসআইএফ) পদ্ধতিতে ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারের সামনে বসেই স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ সহজেই শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন সেরে ফেলতে পারছে। ২ নভেম্বর পদ্ধতিটির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোন : নয়া ফরমান
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের মোবাইল ফোনে কথা বলার অভিযোগ পাওয়ার পর ১১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ জারি করে, শ্রেণী ও পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোনে শিক্ষকদের কথা বলার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বিঘি্নত ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে বলেও উল্লেখ করা হয় এতে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘চাইল্ড পার্লামেন্টে’র সপ্তম অধিবেশনে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে মোবাইলফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পরও বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ আসতে থাকায় সরকার এ নির্দেশনা জারির উদ্যোগ নেয়।
স্টুডেন্ট প্রোফাইল : মাউসের নাগালেই সব তথ্য
স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কে গাইবে, কে নাচবে_তা নির্ধারণ করতে শিক্ষককে হিমশিম খেতে হবে না আর। সফটওয়ারই খুঁজে বের করবে যোগ্য শিক্ষার্থীকে। কারণ ‘স্টুডেন্ট প্রোফাইল’ সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক তথ্যের পাশাপাশি যুক্ত থাকবে তার আগ্রহ, দক্ষতা, দুর্বলতাসহ দরকারি আরো তথ্য। নাম-ঠিকানা, জন্মতারিখ, ফলাফল, পারদর্শিতা (নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন), কোন কোন বিষয়ে দুর্বলতা আছে_সবই সংরক্ষিত থাকবে ডেটাবেইসে। ২২ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. আফসারুল আমিনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি স্কুলে চালু হয় এ কার্যক্রম। সারাদেশে এটি চালুর কথা থাকলেও এখনো সে রকম উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
টিভি পর্দায় পাঠদান : ঘরে বসেই সেরা স্কুলের ক্লাস
১৪ জুন থেকে দেশের সেরা স্কুলের নির্বাচিত শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক পাঠদান ভিডিওতে ধারণ করে তা প্রচার করা হচ্ছে টিভির পর্দায়। শুরুতে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হতো সপ্তাহে তিন দিন।
বিটিভির মহাপরিচালক কাজী আবু জাফর মোহাম্মদ হাসান সিদ্দিকী জানান, এখন রবি থেকে বৃহস্পতিবার নবম-দশম শ্রেণীর পঁাঁচটি বিষয়ের (গণিত, রসায়ন, পদার্থ, ইংরেজি ও বাংলা) ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রস্তুতি চলছে দেশের ২০ হাজার ৫০০ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের।
অনলাইনে পাঠ্য বই : পড়া যায়, শোনাও যাবে
মাউসের ক্লিকেই উল্টে যাবে বইয়ের পাতা। দেখতেও হবে হুবহু মূল বইয়ের মতো। পড়ার পাশাপাশি চাইলে ডাউনলোড এমনকি প্রিন্টও করা যাবে। এমন সুবিধা নিয়েই চালু হয়েছে ‘ই-বুক’। www.ebook.gov.bd ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বইয়ের ই-সংস্করণ। ২৪ এপ্রিল সাইটটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামাল উদ্দিন জানান, আগামী ২৯ ডিসেম্বর সাইটে নতুন কারিকুলামের আরো সাতটি বই যুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে ‘টেক্সট টু স্পিচ’ সেবাও যুক্ত হবে, যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শব্দ শুনেই পড়তে পারে বই।
 সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ । সিলেবাসে নেই । ২৮ ডিসেম্বর ২০১১
 
 

Rate this post

প্রাসঙ্গিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page