বিসিএস স্পেশাল-৪ : লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি ১ম পর্ব

সামনে ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। এ পরীক্ষার বিষয় ছয়টি—বাংলা, ইংরেজি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। এ পর্বে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

 বাংলা

১. ব্যাকরণ : আগের বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় প্রতিবছরই শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া, বাংলা একাডেমির বাংলা বানানের নিয়ম, বাক্য শুদ্ধি, বাক্য রূপান্তর ও প্রবাদের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন হয়েছে। একটু পরিশ্রম করলে এই অংশে গণিতের মতো ৩০-এ ৩০ পাওয়া সম্ভব। ব্যাকরণের জন্য গাইড বইয়ের পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই, প্রবাদের জন্য সমর পালের ‘প্রবাদের উৎস সন্ধান’ বইটি দেখতে পারেন।

২. ভাব-সম্প্রসারণ : বিগত চারটি বিসিএস প্রশ্নে দেখা গেছে, প্রচলিত দুটি ভাব-সম্প্রসারণ থেকে যেকোনো একটি লিখতে বলা হয়েছে। ভাব-সম্প্রসারণের বেলায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই গতানুগতিকভাবে লিখেন। এ অংশের নম্বর যেহেতু ২০, তাই লেখাটা অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র করার চেষ্টা করুন। লেখার শুরুটা যেন ভালো হয়। আর সম্প্রসারণ অংশে বিশ্লেষণাত্মকের চেয়ে গবেষণাধর্মী সাহিত্য লেখার চেষ্টা করবেন।

৩. সারাংশ/সারমর্ম : এ অংশে ২০ নম্বর।

২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সময় পাবেন মোট চার ঘণ্টা অর্থাৎ প্রতি নম্বরের জন্য গড় সময় ১.২ মিনিট। সে হিসাবে সারমর্ম/সারাংশ লেখার জন্য সময় থাকছে ২৪ মিনিট। অথচ এই অংশে তিন-চার লাইন লিখতে হয়। তাই ভেবেচিন্তে লিখুন।

৪. সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর : প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি এ ক্ষেত্রে কিছুটা কাজে দেবে। এখানেও ব্যাকরণের মতো পুরো নম্বর তোলা সম্ভব। তবে  যেহেতু এখানে ১০টি প্রশ্নের ১০টিই দিতে হবে, তাই প্রস্তুতিতে সাবধানী হোন। বাংলা সাহিত্যের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো একবার হলেও চোখ বুলিয়ে নিন। গাইড বইয়ের পাশাপাশি সময় পেলে হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলী, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা বইগুলো দেখতে পারেন।

৫. অনুবাদ : বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ৯০০ নম্বরের মধ্যে ইংরেজি থেকে বাংলা (১৫+২৫) এবং বাংলা থেকে ইংরেজি (২৫) মিলিয়ে ৬৫ নম্বর অনুবাদের জন্য বরাদ্দ। বিগত বিসিএস পরীক্ষায় যে অনুবাদগুলো এসেছে, সেগুলো মোটেই সহজ ছিল না। তাই অনুবাদচর্চায় বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে। অনুবাদ করার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অনুবাদের চেয়ে ভাবানুবাদে জোর দিতে হবে। অনুবাদের কথাগুলো সুমিষ্ট করতে অনুবাদের সময় একটি লাইন ভেঙে দুটি বা দুটি লাইন জোড়া দিয়ে একটি করতে পারেন। এর জন্য অনলাইন সংবাদপত্রের ইংরেজি-বাংলা সংস্করণগুলো দেখতে পারেন।

৬. কাল্পনিক সংলাপ : গাইড বই থেকে কাল্পনিক সংলাপের কতগুলো নমুনা উত্তর দেখে নেবেন। সাম্প্রতিক সময়ের টপিকগুলো নিয়ে কাল্পনিক সংলাপ আসতে পারে। কাল্পনিক সংলাপ লেখার সময় কল্পনা করবেন—আপনি কারো সঙ্গে কথা বলছেন। তাহলে লেখায় সত্যিকারের অনুভূতি ফুটে উঠবে।

৭. পত্র লিখন : হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ বা সৌমিত্র শেখরের ‘দর্পণ’ থেকে ব্যক্তিগত পত্র, সংবাদপত্রে প্রকাশের পত্র, আবেদনপত্রসহ বিভিন্ন পত্রের ফরম্যাট দেখে নেবেন। বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংবাদপত্রে প্রকাশের পত্র প্রতিবছর আসে। তাই পত্রিকায় পত্র লেখার চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে।

৮. গ্রন্থ সমালোচনা : গ্রন্থ সমালোচনার জন্য আসার মতো উপযোগী বইগুলোর রিভিউ চোখ বুলিয়ে নেবেন, বিভিন্ন গাইড বই বিশ্লেষণ করে গ্রন্থ সমালোচনার জন্য নিজের মনের মতো একটি সেরা ফরম্যাট তৈরি করে নেবেন। এর মাধ্যমে গ্রন্থ সমালোচনার ক্ষেত্রে আপনার সাহিত্যবোধ ফুটে উঠবে। তাই সাহিত্যরসযুক্ত কমন কিছু বাক্য আগে থেকেই তৈরি করে রাখবেন, যাতে যেকোনো গ্রন্থ সমালোচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব, চরিত্র সৃষ্টির দক্ষতা, গল্প বলার সাবলীলতা, ঘটনার সন্নিবেশ, পরিবেশ রচনা, ভাষা নির্মাণ—প্রতিটি বিষয় নিয়েই আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো থেকেই প্রতিবছর গ্রন্থ সমালোচনা চাওয়া হয়। এর জন্য মোহসীনা নাজিলার ‘শীকর’, মফিজুল ইসলাম মিলনের গ্রন্থ সমালোচনা বই ‘অগ্রদূত’ দেখতে পারেন।

৯. রচনা : রচনায় ৪০ নম্বর বরাদ্দ। তাই স্কুলজীবনের গতানুগতিক রচনা থেকে বের হয়ে তথ্য-উপাত্তসমৃদ্ধ রচনা তৈরি করতে হবে, যেন একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন হয়ে ওঠে।

পরীক্ষার শেষের দিকে লেখা হয় বলে অনেক পরীক্ষার্থীই রচনা সম্পূর্ণ করতে পারেন না। তাই যে রচনাই লিখুন, প্রথমেই একটি ফরম্যাট তৈরি করবেন, পয়েন্টগুলো রাফ করে নেবেন। কোন পয়েন্টে কী কী তথ্য-চিত্র থাকবে তারও খসড়া করে ফেলবেন। একটি কবিতার পঙক্তি বা গবেষণা উক্তি দিয়ে রচনা শুরু হতে পারে। যেমন—ভাষা আন্দোলনের রচনায় আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো, ওরা বলে’ কবিতার কিছু অংশ।

রচনার জন্য বিভিন্ন বই থেকে বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, সরকারের সফলতা, পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক টপিকগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ও ইংরেজি রচনা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে সুবিধা হবে।

 ইংরেজি

Reading Comprehension : বর্তমানে প্রতিটি বিসিএসেই কঠিন Comprehension আসছে। এর জন্য ইংরেজি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়, মতামত নিয়মিত পড়বেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে Comprehension test চর্চা করতে পারলে ভালো হয়। Answering question অংশে ১০টি প্রশ্নে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। প্রশ্নগুলোর উত্তর করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, যেন কম্প্রিহেনশন থেকে হুবহু মিলে না যায়।

কম্প্রিহেনশন উত্তর করার সবচেয়ে ভালো কৌশল হচ্ছে—আগে প্রশ্নগুলো পড়ে তারপর কম্প্রিহেনশন রিডিং পড়া। আর গ্রামার অংশে কম্প্রিহেনশন থেকে Synonym, Changing parts of speech, Sentence making, Joining Sentences প্রতিবারই পরীক্ষায় আসছে।

Summary : ২০ নম্বরের জন্য ১০০ শব্দের একটি সামারি লিখতে হয়। ১০০ শব্দ মানেই যে কমবেশি হওয়া যাবে না, এমনটি নয়। মূল কম্প্রিহেনশনটি কয়েকবার পড়ুন, কৌশল হিসেবে কম্প্রিহেনশনের বাক্যগুলোর Synonym ব্যবহার করে বাক্য রিমেইক করতে পারবেন। তবে বাক্যের সংখ্যা কমানোর জন্য অবশ্যই লিংকিং ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন।

Letter to Editor : এই অংশ অনেকটাই ফরম্যাটনির্ভর। ফরম্যাট ঠিক থাকলেই নম্বর পাবেন। Letter to Editor-এর ‘টপিক’ কম্প্রিহেনশনের সঙ্গে মিল থাকতে পারে, আবার না-ও থাকতে পারে। যেকোনো গাইড বই থেকে এই অংশটি চর্চা করতে পারেন।

Translation : ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি মিলিয়ে ৫০ নম্বরের (২৫+২৫) প্রশ্ন থাকবে। বাংলা বিষয়ের অনুবাদের মতো ইংরেজি বিষয়ের অনুবাদও কঠিন হবে। ভাবানুবাদে দক্ষ হতে হবে। বাংলা বিষয়ের অনুবাদের মতো করেই এর প্রস্তুতি নেবেন।

Essay : ৫০ নম্বরের জন্য ১০০০ শব্দের একটি Essay লিখতে হবে।

প্রথমেই রচনার পয়েন্টগুলো রাফ করে নেবেন, কোন পয়েন্টে কী কী তথ্য-চিত্র থাকবে তারও খসড়া করে রাখুন।

একটি কবিতার পঙক্তি বা উক্তি দিয়ে রচনা শুরু হতে পারে। যেমন—Climate Chanage-সংক্রান্ত রচনার শুরুতে ‘When the last tree is cut down, the last fish eaten and the last stream poisoned, we will realize that we cannot eat money.’ উক্তিটি লিখতে পারেন। রচনার কোটেশনে লেখকের নাম, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়র ক্ষেত্রে পত্রিকার নাম ও তারিখ, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, অন্যান্য প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স অবশ্যই উল্লেখ করবেন।

রচনার জন্য বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, সরকারের সফলতা, পরিবেশবিষয়ক টপিকগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজি রচনার প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করুন। লেখার মান উন্নত করতে কমন শব্দগুলো বারবার ব্যবহার না করে Synonym ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র : কালের কণ্ঠ । চাকরি আছে । বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯