সেশনজট না থাকা, পর্যাপ্ত সুবিধা আর পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশের কারণে এখন অনেক শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। মানসম্মত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে পছন্দসই বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে খোঁজখবর নিয়েই। জানাচ্ছেন হাবিবুর রহমান তারেক
নটর ডেম কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী ফারহান আহমেদের কথাই বলা যাক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না মিললে তবেই সে ভর্তি হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যদিকে বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী মিনহাজ রানা ভাবছে, পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলে কাঙ্ক্ষিত বিষয়টিতে ভর্তি হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকে অবশ্য সেশনজটে সময় নষ্ট করতে রাজি নয়, এক বাক্যেই তারা ভর্তি হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভর্তি বছরে তিনবার
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মনিরুদ্দিন আহমেদ জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে তিনবার ভর্তি করা হয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বসন্তকালীন সেশন’-এর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় জানুয়ারিতে। মে ও সেপ্টেম্বরে যথাক্রমে গ্রীষ্ম এবং শরৎকালীন সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শীতকালীন সেশনেও ভর্তির সুযোগ দেয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি তথ্য, আবেদন ফরম, মোট ক্রেডিট সংখ্যা, টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচের তথ্য পাবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।
পড়তে পারো যেসব বিষয়ে
চাকরির বাজারে চাহিদা আছে_এমন সব বিষয়েই পড়ার সুযোগ পাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তবে যে বিষয়ে নিজের আগ্রহ বেশি, সে বিষয়ই নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করেন অভিজ্ঞরা। বিবিএ (মার্কেটিং, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিং), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফার্মাসিতে পড়াশোনার আগ্রহী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি, ইলেট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছেন অনেক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ফ্যাশন ডিজাইন, আর্কিটেকচারেও ঝুঁকছে অনেক শিক্ষার্থী। আবার অনেকে বেছে নিচ্ছে ইংরেজি সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও বাংলা।
ভর্তি হতে হলে
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন হয়ে থাকে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে নূ্যনতম জিপিএ ২.৫ থাকতে হয়। তবে প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদনের বেলায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ থাকতে হবে ৩.৫০ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বেলায় ‘ও’ লেভেলে অন্তত তিন বিষয়ে জিপিএ ২.৫ এবং ‘এ’ লেভেলে দুই বিষয়ে ২.৫ থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে যোগ্যতার মাপকাঠি কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে পাসপোর্ট আকারের ছবি যুক্ত করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি ও এইচএসসির সব সনদ, নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি, প্রশংসাপত্র ও আবেদন ফি জমার রসিদ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। তবে নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, এআইইউবি, আইইউবিসহ প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
কেমন খরচ হবে
বিবিএতে পড়াশোনায় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে নূ্যনতম দেড় লাখ টাকা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোর্সে গুনতে হবে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনায় খরচ পড়বে আড়াই থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। ড্যাফোডিলে ফার্মাসিতে পড়াশোনা করতে খরচ পড়বে সাড়ে পাঁচ লাখ। একই বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্টে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ এবং নর্থ সাউথে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হবে। ইউল্যাবে সাংবাদিকতায় (মিডিয়া ও জার্নালিজম) পড়াশোনায় চার বছরে খরচ (টিউশন ফি) প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এ বিষয়ে ড্যাফোডিল, স্টামফোর্ড এবং ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে টিউশন ফি পড়বে যথাক্রমে আড়াই, চার এবং ছয় লাখ টাকা। শিক্ষার্থীরা ভালো ফল এবং আবেদনের ভিত্তিতে আর্থিক ছাড় পেয়ে থাকেন। ওয়েভার বা ছাড় দেয় প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়। জিপিএর ভিত্তিতে শতভাগ পর্যন্ত ছাড় দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ভর্তির আগে খোঁজ নাও
ভর্তির আগে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়েছে কি না, খোঁজ নাও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকলেও তাদের পরিচালিত অনেক কোর্সের অনুমোদন থাকে না, এ বিষয়টি যাচাই করে নাও। ঢাকার বাইরের কোনো শাখার অনুমোদন নেই, এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে পড়াশোনার মানের বিষয়েও। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি কেমন, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা আছে কি না, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করছে এমন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা জেনে নাও।
এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। অসচেতনতার কারণে তাদের অনেকে ‘সাইনবোর্ডসর্বস্ব’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি ইউজিসি কর্তৃপক্ষ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জেনেশুনে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে। আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইউজিসি ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে যেন প্রতারিত না হয়, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেওয়া হয়।
কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.northsouth.edu
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.ewubd.edu
ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.iub.edu.bd
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.aiub.edu
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.bracuniversity.net
আহছানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.aust.edu
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
ওয়েব : www.ulabd.net
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ওয়েব : www.uiubd.com
ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েব : www.daffodilvarsity.edu.bd
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
ওয়েব : www.uap-bd.edu
সূত্র: কালের কন্ঠ ।। সিলেবাসে নেই ।। ১৭ আগষ্ট, ২০১১