পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের কাছে বিকল্প শিক্ষামাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ‘ই-লার্নিং’। সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত না হয়েও এ ব্যবস্থায় অনলাইনে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিক্ষালাভ করা যায়। এতে খরচও অনেক কম। লিখেছেন হাবিবুর রহমান তারেক
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অন্তর্ভুক্তির খবরটি নতুন নয়। তবে প্রযুক্তিনির্ভর ‘ই-লার্নিং’ শিক্ষাপদ্ধতি অনেকটা নতুন। কার্যকর এ শিক্ষাব্যবস্থার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্সের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছর ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন ডিগ্রি নিয়েছে। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ই-লার্নিংয়ে ডিগ্রিধারী গ্র্যাজুয়েটদের কাজের সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ই-লার্নিং কী
ই-লার্নিং একধরনের দূরশিক্ষণ (ডিসটেনস লার্নিং) পদ্ধতি। প্রচলিত দূরশিক্ষণ অর্থাৎ ‘অফলাইন’ পদ্ধতির সঙ্গে এর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে শিক্ষার্থীকে সরাসরি ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। শুধু একটি ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারই যথেষ্ট এ শিক্ষাব্যবস্থায়। যেকোনো সময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে শুরু করা যাবে পড়াশোনা। তবে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটুকু থাকতে হবে শিক্ষার্থীর। সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসেরও খুব বেশি পার্থক্য নেই এ ব্যবস্থার। ই-লার্নিং তিন ধরনের_কম্পিউটার বেইসড ট্রেনিং (সিবিটি), ইন্টারনেট বেইসড ট্রেনিং (ইবিটি) এবং ওয়েববেইসড ট্রেনিং (ডবি্লউবিটি)।
ভার্চুয়াল ক্লাসে পাঠদান
এ শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা বৈশ্বিক। বিশ্বের যেকোনো দেশে থেকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি (লাইভ) ক্লাসে অংশ নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা ইমেইলে লগইন আইডি বা ইউজার আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট সাইটে ব্রাউজ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা-উপকরণই এখানে পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপূর্ব শর্ত পূরণ করে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।
কেন ই-লার্নিং
প্রচলিত মাধ্যমে যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেন তখন অন্য কোনো বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকে কম। ই-লার্নিং এ ধারণা বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থী কিংবা পেশাজীবীরা অন্য কাজের ফাঁকে ই-লার্নিংয়ে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, কোনো ভিসা জটিলতা ও অতিরিক্ত ফি ছাড়াই নিজ দেশে অবস্থান করেই আন্তর্জাতিক ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব হবে এ ব্যবস্থায়। শিক্ষা বিরতি ও বয়সের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই এ মাধ্যমে। সেশনজট না থাকায় কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি অর্জনে সময় অপচয় হওয়ারও কোনো
আশঙ্কা নেই।
যেভাবে যুক্ত হবেন
ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করতে চাইলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামগুলো থেকে খরচ ও সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে আপনার পছন্দেরটি বেছে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য ও দিকনির্দেশনা জেনে শুরু করতে পারেন ‘ই-স্টাডি’। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের কাপলান ইউনিভার্সিটি ‘ই-লার্নিং’ সেবাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। শিক্ষার্থীরা এর অফিশিয়াল সাইট (http://online.kaplanuniversity.edu) থেকে জেনে সরাসরি ভর্তি আবেদন করতে পারবেন এ লিংক থেকে http://online.kaplanuniversity.edu/Pages/ApplyNow.aspx।
যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই-লার্নিং’ প্রোগ্রামের আওতায় শতাধিক বিষয়ের ওপর বিভিন্ন পর্যায়ে তিন হাজারের বেশি কোর্স চালু আছে। উচ্চশিক্ষায় ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ও পিএইচডি ছাড়াও অ্যাসোসিয়েট, প্রফেশনাল সার্টিফিকেট ডিগ্রি অর্জন করা যাবে এ পদ্ধতিতে। অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি, ম্যানেজমেন্ট, হেলথ সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স, নার্সিং, হিউম্যান সার্ভিস, ক্রিমিনাল জাস্টিসসহ প্রচলিত অনেক বিষয়েই পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে ই-লার্নিং ব্যবস্থায়।
পরীক্ষা ও নম্বর প্রণয়ন পদ্ধতি
অন্য সব পরীক্ষার মতো ই-লার্নিংয়েও নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে ৬০ নম্বর সরাসরি অনলাইন পরীক্ষায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর থাকে ৩০ নম্বর। অনলাইন ফোরামে অংশ নেওয়ার ওপর নির্ভর করে বাকি ১০ নম্বর। ছয়টি গ্রেডে পরীক্ষার ফল প্রণয়ন করা হয়। সর্বোচ্চ গ্রেড ‘এ’ নির্ধারণ করা হয় ৯০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। বি, সি ও ডি গ্রেড নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ৮০ থেকে ৮৯, ৭০ থেকে ৭৯ এবং ৬০ থেকে ৬৯ নম্বরের ভিত্তিতে। পাস নম্বর অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৯ নম্বরের ক্ষেত্রে ‘ই’ গ্রেড বিবেচনা করা হয়।
কেমন খরচ হবে
ই-লার্নিংব্যবস্থায় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় খরচ অনেক কম। কিছু বিশেষ বিষয়ে খরচ সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় বেশি না হলেও প্রায় সমান। ক্রেডিট আওয়ারের ওপর ভিত্তি করে টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়। ফি জমা দিতে হয় ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। ব্যাংকের মাধ্যমেও ফি জমা দেওয়া যায়। অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সময়ই ফি জমা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ই-লার্নিংয়ের সুযোগ পাবেন যেসব ওয়েবে
বিশ্বের অনেক মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ‘ই-লার্নিং’ সুবিধা দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের। ভর্তি, পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতিসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন এসব সাইট থেকে-
১. ইউনিভার্সিটি অব পিপলস
ওয়েব : www.uopeople.org
২. ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স
ওয়েব : www.phoenix.edu
৩. আমেরিকান ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ইউনিভার্সিটি
ওয়েব : www.aiuonline.edu
৪. ইউনিভার্সিটি অব ব্রেমেন, জার্মানি
ওয়েব : elearning.uni-bremen.de
৫. ওয়েস্টার্ন গভর্নর ইউনিভার্সিটি
ওয়েব : www.wgu.edu
৬. ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম
ওয়েব : www.nottingham.ac.uk
৭. লিবার্টি ইউনিভার্সিটি
ওয়েব : www.luonline.com
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-লার্নিং
বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ‘অফলাইন’ ডিসটেনস এডুকেশন ব্যবস্থা চালু করলেও অনলাইন-ভিত্তিক ‘ই-লার্নিং’ এখনো চালু হয়নি। সরকারি সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা না থাকাও এর আরেকটি কারণ। তবে দেরিতে হলেও এগিয়ে এসেছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের নির্দিষ্ট লিংকের (http://e-education.daffodilvarsity.edu.bd) মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস পদ্ধতি চালু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের কয়েকটি বিষয়ের ক্লাসে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারছেন। ক্লাস ছাড়াও ‘লাইব্রেরি’ ও ‘ফাইল ম্যানেজার’ অপশন থেকে অনলাইনে আরো কিছু একাডেমিক সেবা পাবেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্র: কালের কন্ঠ । টেকবিশ্ব । ২৩ জুলাই, ২০১০
সময় এখন 'ই-লার্নিং'-এর
Edu Daily 24 - Bangladesh-based popular education & job related site
Leave a review
Leave a review