৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ
বাংলাদেশের ১ নং সার্ভিস হচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস(বিসিএস)। বিভিন্ন ক্যাডারে লোক নিয়োগের জন্য ১৮০৩টি শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)।এখানে সাধারণ ক্যাডারে ৪৫৫ জন, প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৪, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৮২৯ জন। নিঃসন্দেহে এটা চাকরি প্রার্থীদের জন্য একটা বিশাল সুযোগ বিশেষ করে যাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়া একটা বিশাল লক্ষ্য।
পরীক্ষার পূর্ণ সময় দেয়া হবে ২(দুই) ঘণ্টা। এই পরীক্ষায় মোট ২০০(দুইশত) টি প্রশ্ন থাকবে। প্রার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১(এক) নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা হবে।
সুতরাং পরীক্ষার্থীরা একটু চিন্তায় ই থাকবেন যে নতুন এই নিয়মের প্রশ্ন কেমন হবে, কিভাবে প্রস্তুতি নেব। আজকের এই লেখাটি মুলত তাই নিয়ে।
একটা অসাধারণ প্রস্তুতি আপনাকে পৌঁছে দিবে আপনাকে আপনার অভীষ্ট লক্ষে। আপনি হয়ে যাবেন ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস এর একজন গর্বিত সদস্য। আপনি হবেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন এ এস পি, একজন শিক্ষক ইত্যাদি! আর তাই এখনই অস্বাভাবিক সকল চিন্তাকে (কোটা, রাজনীতি, দুর্বল সিজিপিএ ইত্যাদি) পিছনে ফেলে এখন থেকে ই প্রস্তুতির জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আপাতত আপনি ভুলে জান অস্বাভাবিক কোটা এর কথা, আপনার দুর্বল সিজিপিএ এর কথা। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন এইটা ও আপনাকে ভুলে যেতে হবে! শুধু জানুন যে আপনাকে নতুন ভাবে শুরু করতে হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য সহজ চিন্তা করুন, প্রস্তুতিও তত সহজ হবে। |
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য যত বেশী জটিল চিন্তা করবেন , প্রস্তুতি নেওয়াও তত কঠিন হবে। পরিকল্পনা করে পড়ুন, নিজস্ব সাজেশান করুন প্রিলিমিনারি পাস নিশ্চিত।
> নিয়মিত আল্লাহ্র কাছে পরীক্ষায় পাস করার জন্য দোয়া করবেন কারণ আপনি যতই জ্ঞানী ব্যক্তি হউন আল্লাহ্ না চাইলে আপনি কোন দিন ই পাস করবেন না ।
নতুন সিলেবাস অনুযায়ী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ৩৫ নম্বর, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়াবলী ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ২০ এবং ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
এছাড়া সাধারণ বিজ্ঞানে ১৫, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫ এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন বিষয়ে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।
১) বিষয় ভিত্তিক পরামর্শ:
সাধারণ বিজ্ঞানঃ আমার মতে আপনি বিজ্ঞান বিষয় প্রথমে পড়া শুরু করবেন। এই বিষয় থেকে আপনি ১৫ মার্ক কমন পাবেন। আর এই বিষয়ের প্রশ্ন হুবহু কমন আসে। বিজ্ঞান বিষয় পড়ার জন্য বোকার মত সকল শ্রেণির বই মুখস্ত করার দরকার নেই, যেখানে রেডিমেট প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যায় সেখানে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
বিজ্ঞান বইয়ের জন্য দেখুনঃ ওরাকল প্রিলিমিনারি বিজ্ঞান বা MP3 বিজ্ঞান । এই বিষয় পড়তে হবে যেই সব প্রশ্নগুলো বিগত বছরে এসেছে সেইসব প্রশ্নগুলো অর্থাৎ ওরাকল প্রিলিমিনারি বিজ্ঞান বা MP3 বিজ্ঞান বইয়ের মধ্যে যেই সকল রিয়েল প্রশ্ন দেয়া (ক্যাডার ও নন ক্যাডার) আছে সেইসব গুলো ।
২) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিঃ
২) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এই বিষয়ের নামটা দেখতে যত আতঙ্কের মনে হচ্ছে আসলে এই বিষয় টা অত্যন্ত সহজ ও মজার। কারন আপনি এখন ফেসবুক এর মাধ্যমে আমার এই লেখাটি পড়ছেন ! আপনার কাছে কি কঠিন মনে হচ্ছে ? বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির উপর যেসকল প্রশ্ন এসেছে শুধু তাই পড়বেন, এর বাহিরে দেখার দরকার নেই ।
৩) বাংলাদেশ বিষয়াবলি + আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিঃ
বাংলাদেশ বিষয়াবলি + আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশ্ন কমন পাওয়ার বিষয় । এতে আপনি ৫০ এ ৪৫ মার্কই কমন পাবেন !! এই বিষয়ে পড়ার জন্য একটু পরিকল্পনা করে পড়তে হবে । প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য “আজকের বিশ্ব” বা “নতুন বিশ্ব” এই জাতীয় বই না পড়ে বরং জব সল্যুশন থেকে সব গুলো নোট করে পড়তে পারেন। কারণ “আজকের বিশ্ব” বা “নতুন বিশ্ব” এই সব বইয়ের মধ্যে যত তথ্য আছে তা আপনি মুখস্ত করে ধরে রাখতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে, আবার কষ্ট করে মুখস্ত করলেন দেখবেন আপনি হলে গিয়ে তথ্যের ঠ্যালায় উত্তর দিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন। আর যারা জব সল্যুশন থেকে সব গুলো নোট করে পড়েছেন তাঁরা সবচেয়ে বেশী সঠিক উত্তর দিয়েছেন। কারণ আপনি যখন জব সল্যুশন পড়বেন তখন আপনি নিজেই আবিষ্কার করে ফেলবেন কিভাবে প্রশ্ন করে আর কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় বারবার আসে।
আপনি জব সল্যুশন টা যখন পড়বেন তখন নোট করুন আর উত্তর টা খাতার একদম ডান পাসে লিখে স্কেল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রিভিশন দিন।
জব সল্যুশন কিভাবে নোট করবেন ? বা কিভাবে পড়বেন ?
জব সলুশন পড়ার সময় বিষয় অনুযায়ী নোট করবেন । যেমন যখন বিজ্ঞান পড়বেন তখন প্রথম থেকেই জব সল্যুশন এর শুধু বিজ্ঞানের প্রত্যেকটা প্রশ্ন উত্তর এক লাইনে লিখবেন ।
আবার যখন ঐ প্রশ্নটা রিপিট পাবেন তা আর লিখতে হবে না । এই ভাবে পুরো বিজ্ঞান টা একটা খাতায় ক্রমিক নং অনুযায়ী ১,২,৩,৪,…… করে নোট করে নিবেন এরপর জব সলুশন না খুলে শুধু ঐ খাতাটা পড়বেন । এতে করে বারবার জব সলুশন এর পৃষ্ঠা উল্টানো লাগবেনা । আর খুব সহজেই কয়েক দিনের মধ্যে বিজ্ঞান শেষ করে পেলতে পারবেন । এই ভাবে সব বিষয় নোট করবেন , এতে করে আপনি নিজেই নিজের জন্য প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন । সাধারণ জ্ঞান এর জন্য দেখুনঃ জব সলুশন + ১০-৩৪ এর প্রশ্ন + কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ।
(পুনশ্চ জব সল্যুশন থেকে পড়তে হবে ১৯৯৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সকল ক্যাডার ও নন ক্যাডার প্রশ্ন অর্থাৎ শুধু বিসিএস নয় সকল পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে হবে।)
৪) গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাঃ
এই বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি গণিত বই সমাধান চ্যাপ্টার অনুযায়ী করবেন । তাহলে আপনি গণিতের প্রশ্নের ধরণ টা খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারবেন , বুঝতে পারবেন গণিত প্রশ্ন কিভাবে করে ! তার রহস্য টা কি ! গণিত এ ভালো করার জন্য ক্যালকুলেটর এর ব্যাবহার ভালো করে অনুশীলন করে রাখুন। ১০ ডিজিটের সাধারণ ক্যালকুলেটর। কারণ অনেকেই Scientific ক্যালকুলেটর ব্যাবহার করতে করতে সাধারণ গুলতে ভুল করে। গাণিতিক যুক্তি বিষয়ের জন্য দেখুন অ্যাসিওরেন্স এর গণিত ও মানসিক দক্ষতা । আরেকটি বই কিনবেন শর্টকাট ফরমুলা শেখার জন্য তা হল এক্সক্লুসিভ ম্যাথ , মধুমতি প্রকাশনির।
৫) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যঃ
এই বিষয়ের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে, কারন এই বিষয়ে ভুল করার বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি !!! এই ২ মাসে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সহজ পন্থা হচ্ছে জব সল্যুশন থেকে নোট করে পড়তে হবে ১৯৯৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সকল ক্যাডার ও নন ক্যাডার প্রশ্ন অর্থাৎ শুধু বিসিএস নয় সকল পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে হবে। সাথে MP3 বাংলা থেকে সব কিছু পড়তে হবে ।
৬) ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যঃ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য এই বিষয়ের জন্য একমাত্র পরামর্শ হচ্ছে English for competitive exam, professor
এই বইটা কে পীর মনে করে পড়ুন অবশ্যই আল্লাহর নাম নিয়ে ভালো করবেন ।
আর এই বই থেকে প্রায় সব কমন পাবেন । বিশেষ করে রিয়েল প্রশ্ন একটিও বাদ দিবেন না ।
বাকি থাকল ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন ।
এই খানে মোট মার্ক হচ্ছে ২০। এই বিষয় দুইটা যেহেতু নতুন সেহেতু এই গুলো আপনার কমন সেন্সের উপর ছেড়ে দিন। আর এই ২০ মার্ক এ কি আসবে বা কি আসবে না তা নিয়ে চিন্তা না করে বাকি ১৮০ মার্ক নিয়ে চিন্তা করুন। বোকার মত ২০ মার্কের জন্য ২ মাস অনিশ্চিত পড়ালেখা করার কোন মানে হয় না ।
[সংগৃহীত]