পরামর্শ

বুঝে পড়বো নাকি মুখস্ত করবো?

পড়া আত্মস্থ করার প্রধানত দুটি উপায়, একটি মুখস্থ করে ফেলা, অন্যটি বুঝে বুঝে আত্মস্থ করা। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরে কিছু গবেষণা, জার্নালে মুখস্থ করাকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে, বুঝে পড়ার উপর জোর দেয়া হচ্ছে; দীর্ঘমেয়াদে ফল পেতে চাইলে মুখস্থ করার চাইতে বুঝে পড়া এগিয়ে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গৎ বাঁধা কিছু তথ্য, সারণি এরকম বিষয় মনে রাখার জন্য শিক্ষকরা মুখস্থের উপরে জোর দেন, ভরসা করেন। সন, তারিখ, সারণি, ক্রমানুসার মনে রাখার জন্য মুখস্থই সবচেয়ে কার্যকর টুল।

মুখস্থ করলে-

  • কয়েকবার লিখে চর্চা করলেই কিংবা বার কয়েক পড়লেই পড়াটি মুখস্থ হয়ে যায়, অর্থাৎ সময় কম লাগছে।
  • শিক্ষার প্রাথমিক বিষয় যেমন বর্ণমালা, ছন্দময় ছড়া ইত্যাদির জন্য মুখস্থের অন্য বিকল্প নেই।
    -অন্যদিকে, মুখস্থ বিদ্যা প্রয়োজনের সময় কিংবা পরীক্ষার বাইরে এই তথ্য মনে করতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরী হয়, অনেকসময় পরীক্ষার সিটে বসেও মনে পড়ে না এরপর কি হবে?
  • পরীক্ষা শেষ বা বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঐ পড়া ভুলে যাবার সম্ভাবনাই বেশী।
    -মুখস্থ করতে করতে কোন বিষয়ের গভীরে না যাবার, চিন্তা না করার অভ্যাস তৈরী হয়।
    -মুখস্থলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগে মুখস্থবিদ্যার নায়কেরা সমন্বয় করতে পারে না।

অন্যদিকে, বুঝে পড়ার অর্থ হলো বিস্তৃতভাবে পড়া। একটির সাথে অন্যটি কীভাবে সম্পর্কিত, ভিন্ন অবস্থায় এদের আচরণ, বাস্তবিক জীবনে এদের প্রয়োগ, পড়ার বিষয়কে এরকম পুরোপুরি পারঙ্গম করাই হচ্ছে বুঝে পড়া। বুঝে পড়লে-

-পড়া আত্মস্থ করতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়।
-কিন্তু বুঝে পড়তে চাইলে বিস্তর তথ্যের/বইয়ের প্রয়োজন, শিক্ষকের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
-আর, বুঝে পড়া টপিক কখনো ভুলে যাওয়া যায় না।
-গভীরভাবে বোঝার ফলে একটির সাথে অন্যটি কীভাবে সম্পর্কিত তার ধারণা পাওয়া যায়।
-বাস্তবজীবনে এর প্রয়োগ খুঁজে পেলে পড়া বিরক্তিকর না হয়ে আনন্দের হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ অর্থপূর্ণ হয়।

আমাদের মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য হলো কোন কিছু দেখলে চিন্তা করা। আমরা যখন চিন্তা না করে কেবল তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই তখন আমরা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রবণতার বিপরীতে চলি। এভাবে একসময় আমরা চাইলেও আর মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পারি না, গভীরভাবে ভাবতে পারি না, গণিতের মত বিষয়গুলো জটিল মনে হয়। যত উপরের ক্লাসে উঠি পড়ালেখা তত জটিল মনে হতে থাকে। তাই বলে মুখস্থ না করবার কোন উপায়ও নেই। সন, তারিখ, সারণি আমাদের মনে রাখতে হয় প্রায় সব সময়ের জন্য, সেগুলো মুখস্থ করতেই হবে। আমরা যদি পরম্পরা খেয়াল করি, কোন টেকনিক ফলো করি তাহলে কিছু বৈশিষ্ট্য পাবো যা আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে, জোর করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে হবে না। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা সময় নিয়ে বুঝে পড়ে তাদের প্রবলেম সলভিং দক্ষতা, লেগে থাকার ধৈর্য্য অন্যদের চাইতে বেশী।

জোর করে মুখস্থ করে প্যারার পর প্যারা, বিস্তর তথ্য দিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে ভরে ফেলে আমরা হয়তো রেজাল্ট অনেক ভালো করবো, সামনে এগিয়েও যাবো কিন্তু সেই তথ্যগুলো কাজে লাগানোর মত গাণিতিক যুক্তি, বিশ্লেষনী জ্ঞান কি আমাদের?

সূত্র : উদ্ভাস

Rate this post

প্রাসঙ্গিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page