২০২১ সালের শুরুতেই একটি বড় সরকারি সার্কুলার এসেছে। ১৬ ক্যাটাগরিতে মোট ৯৯০ জনকে এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিয়োগ দেয়া হবে ওয়াচার কনস্টেবল (৫৭০ জন), সহকারী পরিচালক (১০২ জন) ও ফিল্ড অফিসার (৭৯ জন)
অনলাইনে (cnp.teletalk.com.bd) আবেদন আবেদন করতে হবে ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে।
সার্কুলার বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দপ্তরের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাই অনেকেই বলছেন এটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) অর্থাৎ জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার বিজ্ঞপ্তি।
এনএসআই সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় অনেক তথ্য পাবেন। আমি এখানে মূলত সহকারী পরিচালক পদটি সম্পর্কেই বলবো।
শুরুতে বলে নিচ্ছি এনএসআই এর সর্বশেষ সার্কুলারে সহকারী পরিচালক পদে ভাইভা দিয়েছিলাম। জব হয়নি তবে খুব কাছের এক বন্ধুসহ পরিচিত কয়েকজনের হয়েছে।এনএসআই সম্পর্কে অনেকেই না জেনে অনেক কিছু বলছেন।তাই আমি ওদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে কিছু লিখছি।
“সহকারী পরিচালক” পদটি জাতীয় বেতন স্কেলের ৯ম গ্রেড বা প্রথম শ্রেণির পোস্ট।এটি এনএসআই এর এন্ট্রি লেভেলের সবচেয়ে বড় পদ।এর উপরের পদগুলো প্রমোশন পেয়ে হয়।এর পদক্রমগুলো নিম্নরূপ:
১।সহকারী পরিচালক(গ্রেড-৯)-পুলিশের এএসপি,প্রশাসনের সহকারী কমিশনার/সহকারী সচিবের সমান পদমর্যাদার।
২।উপপরিচালক(গ্রেড-৬)-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,প্রশাসনের সিসিয়র সহকারী কমিশনার/সিনিয়র সহকারী সচিব/ইউএনও/এডিসির সমান পদমর্যাদার।
৩।যুগ্ম পরিচালক(গ্রেড-৫)-পুলিশের পুলিশ সুপার,প্রশাসনের উপসচিব পদমর্যাদার। [নিকট ভবিষ্যতে এই পদটি “পরিচালক” পদে নামকরণ হতে পারে কারণ দুদকসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদটি ৫ম গ্রেডের]
৪।অতিরিক্ত পরিচালক(গ্রেড-৪)-পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি,প্রশাসনে এই গ্রেডের কোন পদ নাই। [নিকট ভবিষ্যতে এর নতুন নামকরণ হতে পারে “উপমহাপরিচালক/ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল(DDG)”]
৫।পরিচালক(গ্রেড-৩)-পুলিশের ডিআইজি, প্রশাসনের যুগ্ম সচিবের সমান পদমর্যাদার। [নিকট ভবিষ্যতে এ পদের নতুন নামকরণ হতে পারে ” অতিরিক্ত মহাপরিচালক(ADG)”]
৬।মহাপরিচালক(গ্রেড-১)-পুলিশের গ্রেড-১ এর অতিরিক্ত আইজিপি,প্রশাসনের সচিবের সমান পদমর্যাদার।
★প্রমোশন গ্রোথ কেমন?
এনএসআই নিয়োগ বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী আপনি সহকারী পরিচালক/গবেষণা কর্মকর্তা পদে ৬ বছর চাকরি করলে উপপরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন।উপপরিচালক পদে ৫ বছর চাকরি করলে যুগ্ম পরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন।যুগ্ম পরিচালক পদে ৩ বছর চাকরি করলে অতিরিক্ত পরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন।অতিরিক্ত পরিচালক পদে ৩ বছর চাকরি করলে পরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন।পরিচালক পদে ৩ বছর চাকরি করলে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন।
তবে পরিচালক পদে সশস্ত্র বাহিনীর কর্নেল/ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ডেপুটেশনে নিয়োগ দেয়া হয়।মহাপরিচালক পদে সশস্ত্র বাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ডেপুটেশনে নিয়োগ পান।
★সহকারী পরিচালক পদ থেকে কতদূর যেতে পারবেন?
নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী মহাপরিচালক হওয়ারও পথ খোলা আছে।তবে এখন পর্যন্ত এনএসআই এর নিজেদের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ অতিরিক্ত পরিচালক হতে পেরেছেন।সর্বশেষ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা অতরিক্ত পরিচালক(গ্রেড-৪) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।এর উপরের ২ টি পদে সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা নিয়োগ পান।
অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিচালক পদে স্বাভাবিকভাবেই যেতে পারবেন।তবে এনএসআইতে একসময় সরাসরি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ হত না।তাই ডিরেক্টর পদে যাওয়ার সুযোগ হয়নি স্বাভাবিকভাবেই।তবে আগামী কয়েক বছরেই ডিরেক্টর হতে পারবেন এনএসআই এর কর্মকর্তারা বলে আশা করা হচ্ছে।অর্থাৎ গ্রেড-৩ এ যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে।এছাড়া পদগুলোর গ্রেড উন্নীতকরণের লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য ২০০৯ এর ব্যাচ থেকে গতবছরই যুগ্ম পরিচালক(৫ম গ্রেড) হয়েছেন যা একই সময়ে শুরু করা প্রশাসন বা পুলিশের থেকেও ভালো গতিতে হওয়া প্রমোশন।আবার ২০০১ ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত পরিচালক হয়ে গেছেন ১৮/১৯ বছরেই যাদের কম করে হলেও আরও ১০ বছর চাকরি আছে।তাঁরা এর মধ্যে প্রমোশন পেয়ে পরিচালক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।অর্থাৎ গ্রেড ৩ এ যেতে পারবেন।এই পদের গ্রেড উন্নয়ন হলে ভবিষ্যতে গ্রেড ২ ও হতে পারে।সুতরাং এনএসআইতে প্রমোশন কম হয় বলে যে কথাটি বহুল প্রচলিত তা বহুলাংশেই ভুল।
★এনএসআইতে অতিরিক্ত পরিচালক পদে সব এডমিন/পুলিশের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান।এটা কতটুকু সত্য?
এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।একজন বই লেখক তার গ্রুপে এই ভুল তথ্যটি দেয়ার পর কেউ কেউ সত্য বলে ধরে নেন।বাস্তবতা হলো বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক পদে সশস্ত্রবাহিনীর কেউ নাই,সবাই এনএসআই এর নিজেদের কর্মকর্তা।এডমিনের কেউ এনএসআইতে নাই।পুলিশ থেকে নিকট অতীতে একজন পরিচালক থাকলেও বর্তমানে কেউ নাই।অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিচালক এনএসআই এর নিজেদের কর্মকর্তারাই হন।
★বেতন ও সুযোগ সু্বিধা কেমন?
একজন সহকারী পরিচালক জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড-৯ এর ২২০০০ টাকা স্কেলে বেতন পান।তবে ১ টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্টসহ ২৩১০০ টাকা দিয়ে শুরু হয়।বাড়ি ভাড়া,মেডিকেল ভাতা,বিশেষ ভাতা ৩০% সহ সর্বসাকুল্যে ৪০-৪২ হাজার টাকার মতো আসে শুরুতে।
(তবে সোর্স মানি,মোবাইল ভাতা,ফিক্সড টিএ/ডিএ(৮০০০ টাকা) সব মিলে ৫০-৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আসবে শুরুতেই)
এরপর প্রতি বছর ৫% ইনক্রিমেন্ট আছে।ঈদ বোনাস এক মাসের বেসিকের সমান।বছরে ২ বার পাবেন।
এছাড়া যে সকল সুযোগ সুবিধা আছে-
১। রেশন
২। গাড়ি সুবিধা(সবাই পান না।জেলার ইন চার্জ বা যুগ্ম পরিচালক হলে ব্যক্তিগত গাড়ি সুবিধা।বাকীরা অফিস থেকে যাওয়া-আসার জন্য ট্রান্সপোর্ট সুবিধা পান,অফিশিয়াল কাজে কোথাও গেলে গাড়ি সু্বিধা পান।তবে গাড়ি সু্বিধা বর্ধিত করার কাজ চলমান বলে জানা গেছে)।
৩। দেশের বাইরে একাধিক পোস্টিং এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ।
৪। দেশের বাইরে উচ্চতর প্রশিক্ষণ
৫। টিএ/ডিএ
৬। ভিভিআইপিদের সফরের অংশ হতে পারা
৭। সোর্স মানি
৮। উপসচিবদের মতো যুগ্ম পরিচালকদেরও সুদমুক্ত ঋনে গাড়ি কেনা ও মেইন্টেট্যান্স খরচ পাওয়ার সুবিধা চালু হতে পারে অচিরেই।
৯। চাকরি শেষে পেনশন সুবিধা।
১০। আবাসন সুবিধা সকলের নেই।এ ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা আছে বলে জানা গেছে।তবে সরকারি অফিসারদের জন্য এমনিতে যে ফ্ল্যাট বরাদ্দ থাকে সেখানে আবেদন করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে পারেন।
১১।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বলে এই সংস্থা অন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না তাই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাওয়াও একটি সুবিধা। এছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
★এডমিন/পুলিশ তথা বিসিএস ক্যাডারদের মতো ক্ষমতা বা সোশ্যাল ভ্যালু কতটুকু?
সাধারণ মানুষদের অধিকাংশই এনএসআই চিনে না তাই এসপি,ডিসি,ইউএনওর মতো আপনাদের নাম ওদের সাথে সাধারণ মানুষের মুখে উচ্চারিত হবে না।তবে শিক্ষিত ও অভিজাত মহল, সরকারের অন্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপনাকে যথেষ্ট সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবে।নিজের পরিবারের কেউ সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করতে পারবেন।অন্যান্য দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্যও আপনার প্রতিবেদন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।তাই আপনার একটি ফোন কলও অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
★ক্যাডার বনাম এনএসআই সহকারী পরিচালক?
আমাদের দেশে বিসিএস আর সাধারণ একটা চাকরি বা চাকরির পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।এর গ্ল্যামারটা অন্য লেভেলে চলে গেছে।বিসিএসের সাথে কোনরকম তুলনা করতে গেলেও অনেকের গালি খেতে হতে পারে।তবে জাস্ট “বিসিএস” শব্দটাই আপনার কাছে বিরাট কিছু না হলে,এটা বলা যায় যে বিসিএস জেনারেল ক্যাডার ছাড়া দেশের অন্য জবগুলোর মধ্যে এনএসআই সহকারী পরিচালক অন্যতম শীর্ষ একটি চাকরি।সর্বশেষ এডি ব্যাচে ৩৮ তম বিসিএসের গণপূর্ত,কৃষি,শিক্ষা ইত্যাদি ক্যাডারের অনেকেই এডিতেই থেকে গেছেন।এছাড়া আগের বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার,বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিসহ অন্যান্য সরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এনএসআই সহকারী পরিচালক পদে জয়েন করেছেন।
আর যেখানেই জব করেন,সেই জবকে সেটার মতো করেই চিন্তা করা উচিত।কম্যারিজনে যত যাবেন তত নিজেকে অসুখী ভাববেন সেটা আপনি যেই জবেই যান না কেন।জব স্যাটিসফেকশন বড় ব্যাপার।
★কাজের চাপ কেমন?
কজের চাপ ভালোই।কোথাও বেশি,কোথাও কম।কাজের চাপ একেবারে কম না আবার কেউ কেউ অতিরঞ্জিত করেও বলে।বেশি ভয়ের কিছু নাই।একদম রোবট বানায়ে ফেলবে না।পরিমিত পরিমাণে ছুটি-ছাটা,রেস্ট নেয়ার সময় পাওয়া যায়।
★যেসব কারণে এনএসআইতে আপনার আসা উচিত-
১। কম সময়ে স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা শেষ করে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ।
২। উপরে বর্ণিত সুযোগ সুবিধাদি পাওয়ার জন্য।
৩। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় অবদান রাখার জন্য।
৪। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিজের ভূমিকা রাখবার জন্য।
৫। সৎ উপায়ে সচ্ছলতার সাথে জীবনধারণের জন্য।
★যেসব কারণে আপনি এনএসআইতে আসবেন না-
১। অগাধ সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক হতে চাইলে
২। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যা খুশি তাই করতে চাইলে
৩। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আয় করতে চাইলে
৪। ফেসবুকে নিজের কাজ নিয়ে শো অফ/ফটোসেশন করতে চাইলে
৫। নিজের কাজ সম্পর্কে পরিচিত-অপরিচিত সকলকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলতে চাইলে।
৬। কাজে ফাঁকি দিয়ে বেশি আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে চাইলে।
এনএসআই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ : NSI Job Circular 2021 :
লেখক : মাহমুদুল হাসান