চীনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর কনটেন্ট, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে এআইজিসি।
ডিজিটাল টেক্সট, ছবি ও ভিডিও তৈরি করে নির্মাতাদের ভিন্নধর্মী ও সৃজনশীল কনটেন্ট উপস্থাপনের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে এ প্রযুক্তি।
সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি একটি এআই-থিমযুক্ত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে, যেখানে পুরোপুরি এআই দিয়ে তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও প্রদর্শিত হয়। আর গত ৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ এ আয়োজন কুড়িয়ে নিয়েছে ৬০ কোটিরও বেশি ভিউ।
চীনের এআই ক্রিয়েটিভ স্টুডিও ক্লিং এআই-এর ক্রিয়েটিভ পার্টনার হুয়াং চোং চোং-এর নির্দেশনায় তৈরি একটি চলচ্চিত্রও ছিল এ প্রদর্শনীতে।
ক্লিং এআই-এর ক্রিয়েটিভ পার্টনার হুয়াং চোংচোং জানালেন, ‘প্রচলিত চলচ্চিত্রে স্পেশাল ইফেক্ট তৈরিতে বড় অঙ্কের অর্থ ও সময় লাগে, কিন্তু এআই ব্যবহার কাজটাকে বেশ সহজ করে দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহে এই শর্টফিল্মের কাজ শেষ করতে পেরেছি।’
হুয়াংয়ের মতে, তিনি যে এআই টুলটি ব্যবহার করেছিলেন তাতে প্রয়োজনীয় অভিব্যক্তিপূর্ণ দৃশ্য এবং মানুষের নড়াচড়া বেশ প্রাকৃতিকই ছিল।
তিনি আরও জানালেন, ‘ক্লিং এআই দিয়ে চরিত্রের মডেলিং, ধারাবাহিকতা, বিস্তারিত প্রপস, সঠিক দৃশ্য তৈরি, মসৃণ ট্রানজিশন এবং বাস্তবসম্মত শারীরিক নড়াচড়া করানো যায়। যা আমাদের চাহিদা পূরণ করেছে।’
এআই-থিমযুক্ত ওই সান্ধ্য উৎসব তুলে ধরেছে চীনে এআই-উত্পাদিত কন্টেন্টের সম্ভাবনা।
ক্লিং এআই-এর সিনিয়র প্রোডাক্ট অপারেশন ম্যানেজার ওয়াং রুওসুয়ান জানালেন, ‘২০২৪ সালের জুন থেকে, সারা বিশ্বে ক্লিংয়ের ব্যবহারকারী সাড়ে চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, ক্লিংয়ের আয় ২৫ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।’
বেইজিং ফিল্ম অ্যাকাডেমির ডিজিটাল মিডিয়া স্কুলের ডিন লিউ মেংয়া জানালেন, এআই এখন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। এটি নতুন কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্র উন্মুক্ত করছে, যা বাজারকে আরও বহুমাত্রিক করছে।
একই কথা প্রতিধ্বণিত হয়েছে সিছুয়ানের ছেংতু সিটিতে অনুষ্ঠিত ২০২৫ গোল্ডেন পান্ডা ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ফোরামেও।
এই ফোরামে জড়ো হয়েছিলেন চীন ও বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
ফোরামে এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বৈচিত্র্যে সম্প্রীতি, ঐক্যে ভবিষ্যৎ’। এর লক্ষ্য ছিল ধারণা বিনিময়, দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করা এবং বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ঐকমত্য তৈরি করা।
অনুষ্ঠানে মার্কিন ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস শিল্পী জোয়েল হাইনেক বলেন, এআই চলচ্চিত্র নির্মাণকে সহজ ও সাশ্রয়ী করছে, ফলে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষও চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে নৈতিক দিকগুলো মেনে চলা জরুরি, বিশেষত এআই-এর জন্য ব্যবহৃত তথ্য যেন নিজস্ব বা লাইসেন্সকৃত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের কম্পিউটিং সক্ষমতা ও প্রতিভার ভাণ্ডার বিশ্বমানের। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো বিশ্বকে চীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে সাহায্য করবে এবং উন্মুক্ত সহযোগিতার পথ আরও প্রশস্ত করবে।
লেখক: ফয়সল আবদুল্লাহ, সংবাদকর্মী, সিএমজি