আব্দুল্লাহ আল সাদমান পড়াশোনা করেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ৪৩তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আমি ৪৩তম বিসিএস ভাইভা বোর্ডে ছিলাম ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মতো। আমার ক্যাডার পছন্দক্রম ছিল যথাক্রমে পররাষ্ট্র, পুলিশ, প্রশাসন, কাস্টমস প্রভৃতি।
আমি : আসসালামু আলাইকুম স্যার, আসতে পারি?
চেয়ারম্যান : ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জি, বসুন।
আমি : আসন গ্রহণ করলাম।
চেয়ারম্যান : মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান, রুয়েটে পড়েছেন, ৪১তম বিসিএসে গণপূর্ত ক্যাডার, জেনারেলে আসতে চাচ্ছেন?
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : So tell me what are the qualities you have that you can be considered as an ambassador?
আমি : Sir, my dream… (থামিয়ে দিয়ে)
চেয়ারম্যান : স্বপ্ন তো সবাই দেখে, আপনাকে কেন নেব, সেটা বলুন। Tell the qualities.
আমি : Sir, I think I can blend with people of all classes, from top to bottom which is important because most of our migrants are of lower social class.
চেয়ারম্যান : মানে কমিউনিকেশন স্কিল আছে, তাই বলছেন তো?
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : What else?
আমি : Sir, I can analyze any situation well, then make a quick decision and manage that situation.
চেয়ারম্যান : মানে ডিসিশন মেকিং আর ম্যানেজমেন্ট স্কিল, তাইতো?
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, একজন ক্যাডারের আর কী কী গুণাবলি থাকা দরকার বলে আপনার মনে হয়?
আমি : স্যার, প্যাশন; দেশের প্রতি আনডিভাইডেড লয়্যালিটি, প্রফেশনালিজম… (থামিয়ে দেন)।
চেয়ারম্যান : How important do you think leadership is?
আমি : Sir I think it’s one of the skill sets I’ve, I like to lead by example, I think people will follow you better when you lead them instead of ordering them.
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, বলুন তো এই মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোথায় আছেন?
আমি : দুঃখিত স্যার, আমার জানা নেই।
চেয়ারম্যান : রাষ্ট্রপতি?
আমি : দুঃখিত স্যার, আমার জানা নেই।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, অর্ডার অব প্রিসিডেন্স কী, বোঝেন?
আমি : জি, স্যার। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের পদক্রম।
চেয়ারম্যান : বলুন তো দেখি কতগুলো পারেন…
আমি : রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী…
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, Tell me who’s the head of the state at absence or PM & President?
আমি : Speaker of the National Parliament.
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, আপনি প্রশ্ন করুন (এক্সটার্নাল-১ স্যারকে দেখিয়ে)।
এক্সটার্নাল-১ : আচ্ছা, আপনি তো গণপূর্ত ক্যাডার পেয়েছেন। জেনারেলে আসতে চাচ্ছেন। এখানে অ্যাডমিনে তো অনেকে আসবে, ইংরেজি, অর্থনীতি সব বিষয়ের মানুষ। আপনার ইনপুটটা কী হবে?
আমি : স্যার, আমার প্রিয় একজন শিক্ষক প্রফেসর আব্দুল আলিম স্যার আমাদের বলেছিলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তোমাকে সূত্র, ইকুয়েশন এসব মুখস্থ করাবে না, শেখাবে কিভাবে যেকোনো পরিস্থিতি ম্যানেজ করবে।
এক্সটার্নাল-১ : সেটা ঠিক আছে, আমি বলতে চাচ্ছি আপনার জ্ঞান আপনি এখানে কিভাবে কাজে লাগাবেন? এটাতে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান লাগবে আপনার।
আমি : স্যার, বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের মতে, পৃথিবীতে কোনো মিরাকল নেই। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট শ্রম ও সময় দিলে সেটাতে তার দক্ষতা অর্জন সম্ভব। আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হলে স্বপ্নের দেশ গড়তে সবটুকু দিয়ে পরিশ্রম করব।
এক্সটার্নাল-১ : আমি বলছি আপনি যা শিখেছেন; যেমন—আপনি কিসে থিসিস করেছেন?
আমি : স্যার, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।
এক্সটার্নাল-১ : হ্যাঁ, এসব জ্ঞান কিভাবে কাজে লাগাবেন?
আমি : স্যার, আমাকে যেকোনো কিছু দিলে আমি সেটাতে যথেষ্ট শ্রম দিলে মনে করি সেটাতে আমার দক্ষতা অর্জনের যোগ্যতা রয়েছে। জিওটেকের খুব বেশি কিছু আমাকে সাহায্য করবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। সত্যি কথা বলতে দুটি খুবই ভিন্ন, তবে যেহেতু সিভিলে বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রয়েছে, এটা কাজে লাগতে পারে বলে মনে করি।
এক্সটার্নাল-১ : আচ্ছা, ঠিক আছে।
এক্সটার্নাল-২ : আচ্ছা, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধকে আপনি কিভাবে দেখেন? কী মনে করেন আপনি?
আমি : স্যার, আসলে এটা পারসপেক্টিভের ওপর, যখন আপনার কাছে যথেষ্ট ফায়ারপাওয়ার থাকবে, তখন আপনি যেটাই করবেন, সেটাই ঠিক। না থাকলে আপনাকে নেতিবাচকভাবে চিহ্নিত করা হবে, আবার আপনিই যদি যুদ্ধে জিতে যান, আপনি হয়ে যাবেন স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা। তবে সাধারণ নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা গণহত্যার শিকার হওয়া কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না, স্যার।
এক্সটার্নাল-২ : (হেসে বললেন) কূটনীতিকদের মতোই উত্তর দিলেন! আপনি তো বাংলাদেশ ব্যাংকে আছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
আমি : স্যার, আমরা যদি যেকোনো টাইম ফ্রেম নিই, তাহলে আমরা কিন্তু কোনোটাতেই জিডিপি গ্রোথ ছাড়া কোনো হ্রাস দেখতে পারব না। ব্যক্তিগতভাবে আমি নাম্বারের চেয়েও যেটা বেশি প্রিফার করি, তা হচ্ছে দৃশ্যমান পরিবর্তন।
এক্সটার্নাল-২ : এটা কেমন, ব্যাখ্যা করুন।
আমি : স্যার, আমি একটা এলাকা সম্পর্কে অ্যানালাইজ করার চেষ্টা করি। ১০ বছর আগে ওই এলাকা কেমন ছিল, তার মানুষগুলো কেমন ছিল, আমি দেখি সামগ্রিকভাবে একটা উন্নতির চিত্র ফুটে ওঠে, সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারটিতেও দেখা যায় বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। শতভাগ দারিদ্র্য নির্মূল হয়ে গেছে বললে মিথ্যা বলা হবে, তবে সামগ্রিক উন্নতির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করি এবং তা ত্বরান্বিত করতে অবদান রাখতে আমার সমস্ত মেধা-মনন বিনিয়োগ করতে পারব বলে আশা রাখি।
এক্সটার্নাল-২ : আচ্ছা, আপনি এখন আসুন। কাগজগুলো নিয়ে যাবেন।
আমি : ধন্যবাদ, স্যার (সালাম দিয়ে চলে এলাম)।
সূত্র: কালের কণ্ঠ