খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন মো. মেহেদী হাসান। তিনি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভার অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ
অনুমতি নিয়ে ভাইভা রুমে প্রবেশ করে সালাম দিলাম, চেয়ারম্যান স্যার বসতে বললেন।
‘ধন্যবাদ’ দিয়ে বসলাম।
চেয়ারম্যান : কোন বিষয়ে পড়েছেন? কোন বিশ্ববিদ্যালয়?
আমি : ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
আচ্ছা, আপনার তো টেকনিক্যাল সাবজেক্ট, প্রশাসনে আসতে চান কেন? আপনারা নিজ ট্র্যাক ছেড়ে যে বিসিএসে আসছেন, তাতে তো একটা শূন্য পদ তৈরি হচ্ছে আপনাদের সেক্টরে, সেটার প্রভাব কেমন পড়বে?
—স্যার, এই সংখ্যাটা অনেক কম, তাই উল্লেখযোগ্য তেমন প্রভাব পড়ছে না আমাদের সেক্টরে, এমনটাই মনে করি।
দেশে তো এখন অনেক ইন্ডাস্ট্রি, আপনাদের জবের সুযোগ এখন কেমন?
—স্যার, দেশে অনেক ইন্ডাস্ট্রি এখন, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে চাকরির সুযোগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসে দেখি, তাহলে আমাদের দেশের লোকেরা কী করছে? বড় জায়গায় কেন বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার বেশি?
—স্যার, ওপরের কিছু পোস্টে বিদেশি দক্ষ জনবল আনা হচ্ছে। কিছু নতুন প্রজেক্টে আমাদের একটু অভিজ্ঞতার অভাব আছে, তবে এই অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে স্যার, এখন দেশের ইঞ্জিনিয়াররাও ওপরের পোস্টগুলোতে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন।
আপনি যে প্রশাসনে আসতে চান, এমন বিশেষ কী করবেন প্রশাসনে এসে?
—স্যার, আমি নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। আমার নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা আছে হস্তশিল্পে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গ্রামে হাত সেলাইয়ের কর্মপরিবেশ তৈরি করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে চাই। আরেকটা বিষয় স্যার, আমি দেখেছি আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে, কিন্তু তারা সঠিক দিকনির্দেশনা এবং শিক্ষার যথেষ্ট উন্নত সুযোগ পায় না। স্যার, আমি এসব পিছিয়েপড়া অঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নেও কাজ করতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের বই পড়েছেন?
—স্যার, ‘মূলধারা একাত্তর’ পড়ছি, তবে পুরো বই পড়ে শেষ করতে পারিনি এখনো। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাস পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখেছি কয়েকটা, বঙ্গবন্ধুর বইগুলো পড়েছি।
বঙ্গবন্ধুর লেখা বই কয়টি ও কী কী?
—‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর নাম বললাম।
এক্সটার্নাল-১ : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাম শুনেছেন? কী কী অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো সেখানে?
—শুনেছি। প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে—চরমপত্র, জল্লাদের দরবার, বজ্রকণ্ঠ।
এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে পার্থক্য বলেন।
—এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন সরকারের নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএসের (প্রশাসন) মাধ্যমে নিয়োগ পান তাঁরা। আর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন সরকারের বিচার বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগ পান।
সিআরপিসি ও সিপিসি সম্পর্কে কী জানেন?
(ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ ও দেওয়ানি কার্যবিধির কথা বললাম, এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা হলো আমাদের মধ্যে)
এক্সটার্নাল-২ : আপনার বাড়ি তো নওগাঁয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁ কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল?
—স্যার, ৭ নম্বর।
নওগাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কী? বলুন।
—পতিসর কুঠিবাড়ি নওগাঁয়, তিনি জমিদারির কাজে সেখানে আসতেন।
এখানে এসে কী কী লিখেছেন উনি?
—কয়েকটি কবিতা লিখেছেন, যেমন—আমাদের ছোট নদী, তালগাছ; এ ছাড়া কাব্যগ্রন্থ চৈতালী, কণিকা। (স্যার ছিন্নপত্রের কথা জিজ্ঞেস করলেন, বললাম, জ্বি স্যার, ছিন্নপত্রের কিছু লেখা এখানে বসে লিখেছেন।)
উনি আশপাশে আর কোথায় আসতেন?
—সিরাজগঞ্জ।
২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে, এমন একটা সূচকের নাম বলেন, যেটা দেখে বুঝব যে আমরা উন্নত দেশ হয়েছি।
—স্যার, মাথাপিছু আয়।
কত হবে তখন?
—স্যার, ১২৫০০ ডলার হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি আসুন।
সূত্র: কালের কণ্ঠ