অনলাইন ক্লাসে গেলে অনেকে শিক্ষা বৈষম্যের শিকার হবে
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেশনজট এড়াতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাসের আওতায় আনা যায় কিনা, এ ব্যাপার নিয়ে ভাবছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন শিক্ষকদের অনেকে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা রাজশাহীতে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চলাতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারে নিম্ন আয়ের পথটুকুও এখন বন্ধ হয়ে গেছে এই লকডাউনে। সেখানে অনলাইনে তাদের ক্লাস করাটা কতটা কঠিন তা বোধহয় সহজেই অনুমেয়। অনেক শিক্ষার্থীদের নিকট অনলাইনে ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সুবিধা নেই। যেখানে মুষ্টিমেয় কজন ধনী শিক্ষার্থীদের আছে আনলিমিটেড ডাটা এক্সেস। আর গরীব বাবা-মায়ের সন্তান হলে তো কোন কথায় নেই। তাই তিনি মনে করেন, অনলাইন ক্লাসে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিত শিক্ষা বৈষম্যে শিকার হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আমাদের সাধারণ পরিবার থেকে আসা। তাদের হাতের স্মার্ট ফোনে ২০এমবি-৩০এমবি ডাটা প্যাক দেখে হয়ত আপনি ভাবছেন তারা নেটে আছে! কিন্তু, অনলাইন ক্লাসের ভিডিও ডাউনলোড করতে এমবি নয়, জিবির পর জিবি ডাটা লাগে। সর্বোপরি আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ ছাড়া যা প্রায় অসম্ভব। এই করোনায় যখন তাদের পরিবার বেচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত তখন আমরা কি পারি তাদের উপর ডাটা প্যাক কেনার বোঝা চাপিয়ে দিতে? তাছাড়া আমাদের অনেক ক্লাসে ১০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী আছে তাদেরকে নিয়ে অনলাইন ক্লাস মেনেজমেন্টও একটু চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার বলেই বোধকরি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কারণ তাদের প্রতি ব্যাচে কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী থাকে যাদেরকে নিয়ে খুব সহজেই ক্লাস ম্যানেজমেন্ট করা যায়। আর তারা মোটামুটি সবাই সচ্ছল পরিবারের বলেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায় ভার বহন করতে পারে। তাদের সবারই রয়েছে আইসিটির সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধা, যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের অনেকাংশেই কম। করোনা পরিস্থিতির এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে ক্লাস করাও সম্ভব নয় বলেই আমি মনে করি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাসে কোনভাবেই সামাজিক দূরত্ব পালন করা সম্ভবপর নয়। সুতরাং, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আরও একটু সময় নিয়ে ভেবে চিন্তেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
অনুলিখন : আব্দুন নুর নাহিদ