খবর

ওমিক্রন কী ও কতটা ভয়ঙ্কর? সারাদেশে সতর্কতা

ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বজুড়েই শুরু হয়েছে নতুন আতঙ্ক। করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট হলো Omicron (SARS-CoV-2)। কোভিড-১৯ বা করোনার আগের স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় এটা অনেক শক্তিশালী। ২৮ নভেম্বর ওমিক্রন নিয়ে বাংলাদেশে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া নতুন এই করোনা ভাইরাস (ওমিক্রন) রোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ৪টি সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওমিক্রন এখন পর্যন্ত ৫০ বার রূপ বদল করেছে। স্পাইক প্রোটিনের বদল ঘটেছে ৩০ বারের বেশি। এটি সহজেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দেহকোষে ঢুকে পড়ার জন্য যে কোনও ভাইরাস মূলত এ স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। আর স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করেই বেশিরভাগ টিকা তৈরি করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে শনাক্ত হওয়া এই স্ট্রেইন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনই খুব বেশি কিছু ধারণা দিতে পারছেন না। তবে তাদের আশঙ্কা, এটি অতি সংক্রামক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা উদ্বেগজনক হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। আফ্রিকার দেশসহ বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন।

দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও বতসোয়ানা, ইসরায়েল, হংকং, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইতালিতেও নতুন এ ধরনের সন্ধান মিলেছে। ডব্লিউএইচও করোনার নতুন ধরনের নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার আগের সব ধরনের চেয়ে এটি অনেক বেশি সংক্রামক। তবে ওমিক্রন করোনার অন্য ধরনের তুলনায় কম নাকি বেশি মারাত্মক, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।

ওমিক্রনের নামকরণ ও প্রজাতি

দক্ষিণ আফ্রিকাতে সদ্য শনাক্ত হওয়া সার্স-কোভ-২ (ওমিক্রন) করোনা ভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্ট বা প্রজাতি। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি অণুবিদ্যায় বিদ্যমান থাকলেও রূপভেদে এটি প্রধানত ৪ প্রকারের ছিল। এঁদের প্রত্যেকের নাম গ্রিক বর্ণমালার অক্ষর দিয়ে। লামডা, আলফা, বিটা এবং গামা।

২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে করোনাভাইরাস, সেই সময় জিনগত পরিবর্তনের (মিউটেশন) মাধ্যমে রূপে ও চরিত্রে বদল আনতে শুরু করল। কোনও রূপ উদ্বেগের (ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন) হয়ে উঠল, কোনওটি আবার কেবল ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট’ হয়ে রয়ে গেল। নয়া প্রজাতির মধ্যে বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল ডেল্টা ও ডেল্টার কিছু উপপ্রজাতি (ডেল্টা প্লাস)।

ওমিক্রন নিয়ে বাংলাদেশে সতর্কতা

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বাংলাদেশের সব বন্দরে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ২৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ওমিক্রনের ব্যাপারে দেশের সব ধরনের পোর্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সবাইকে নিয়মিত মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দেশে ওমিক্রন রোধে ৪ সুপারিশ

যেসব দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশে আসা-যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা এবং সভা-সমাবেশ সীমিত করাসহ ৪টি সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

১. এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এসব দেশ এবং যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আগমন বন্ধ করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
২. কোনাে ব্যক্তির এসব দেশে ভ্রমণের সাম্প্রতিক (বিগত ১৪ দিনে) ইতিহাস থাকলে তাদের বাংলাদেশে ১৪ দিন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন করতে হবে।

৩. প্রতিটি পোর্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করা (স্কুল-কলেজসহ), চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন (রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়) সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করা হলো।
৪. কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হচ্ছে।

এদিকে, করোনার এই নতুন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সুইজ্যারল্যান্ডে সরকারি সফরে যাত্রা করেও মাঝপথ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button