রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ কারা, কতটা শক্তিশালী, প্রধান কে?

রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ কারা, কতটা শক্তিশালী, প্রধান কে? এখন বিশ্বজুড়েই এসব ব্যাপারে চলছে জল্পনা-কল্পনা। রাশিয়ার মিলিটারি ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে রীতিমত আলোচনায় উঠে এসেছে ভাড়াটে সেনাদল Wagner Private Military Company বা Wagner group।

ওয়াগনার গ্রুপ কারা, সদস্য সংখ্যা কত

ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা সবাই ভাড়াটে (Mercenary) বা অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া সদস্য। রাশিয়া এতো দিন  ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বিদ্রোহীদের দমন করতে এই গ্রুপটিকে ব্যবহার করে আসছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর হয়ে কিয়েভে লড়াই শুরুর পর থেকে আলোচনায় রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপ। ইউক্রেনের বাখমুত ও সোলেদার শহর দখলে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখে ওয়াগনারের সদস্যরা।


রাশিয়ায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে আবারও আলোচনায় গ্রুপটি। যদিও এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে সন্ধি হয়েছে ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ওয়াগনার বাহিনী এবং রুশ কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

স্থানীয় সময় শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ যেসব শর্তে ওয়াগনারের সঙ্গে সন্ধি হয়েছে রাশিয়ার সেগুলো তুলে ধরেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আগে এই ওয়াগনার গ্রুপ একটি গোপন সংগঠন ছিল। সেসময় এর সদস্যরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করতো। ওই সময় ওয়াগনারে পাঁচ হাজার সদস্য ছিল বলে জানা যায়। যাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার অভিজাত ও বিশেষ বাহিনী থেকে আসা অভিজ্ঞ যোদ্ধা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ওয়াগনারের কার্যক্রম।

বিবিসি জানায়, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা এক রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিল। বর্তমানে এর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। যিনি রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বলেই জানা যায়।

২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পিএমসি ওয়াগনার’ নামে পরিচিত ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম শনাক্ত হয়। সেসময় পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করছিল তারা। এই সময় ক্রিমিয়া দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করেছিল দলটি। এটি ছিল তাদের প্রথম অপারেশন

পরে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় সরকার সমর্থকবাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনারের যোদ্ধারা। ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও ২০২২ সালে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ওয়াগনার গ্রুপ। এরপর সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সদরদফতর খোলে ওয়াগনার।

ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর হয়ে কিয়েভে যুদ্ধ করছে ওয়াগনারের সদস্যরা। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে জানায়, ইউক্রেনে ওয়াগনারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। যারা বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই করছে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সময় ২৫ হাজার ওয়াগনার সদস্য এই বিদ্রোহে সক্রিয়া ছিল। ইউক্রেনীয় সেনাদের হাত থেকে বাখমুত দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ওয়াগনার সদস্যরা। ওয়াশিংটনের মতে, ওয়াগনারের যোদ্ধারের ৮০ শতাংশই কারাবন্দিদের মধ্য থেকে নেয়া।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, রাশিয়ার হয়ে লড়াইয়ে ওয়াগনারের কোনো সদস্য নিহত হলে ৬০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণ গুনতে হয় রুশ সরকারকে।

ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান কে

ইয়েভজেনি প্রিগোজিন হলেন রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান। সাধারণত আড়ালে থেকে বাহিনী পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি ও তার বাহিনী আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আলোচনায় আসেন।

চলমান যুদ্ধে প্রিগোজিনের যোদ্ধারা রাশিয়ার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।সেন্ট পিটার্সবুর্গে বেড়ে ওঠা প্রিগোজিনের। ১৯৮০’র দশকে চুরি ও রাস্তায় ছিনতাইয়ের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৯ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন প্রিগোজিন।১৯৯০ দশক থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার পরিচয়।

ক্রেমলিনের বিভিন্ন খাবারের চুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে ধনকুবের হয়ে ওঠেন তিনি। একসময় তিনি ‘পুতিনের শেফ’ হিসেবে পরিচিত পান। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর প্রিগোজিন একজন নির্মম সেনাপতি হিসেবে আবির্ভুত হন। তিনি গড়ে তুলেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ।

এই বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াই করে। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছে। ওয়াগনার যোদ্ধারা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, ইউক্রেন ও সিরিয়াতে রয়েছে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনএন।

বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর আলোচনায় চলে আসেন প্রিগোজিন। পূর্ব ইউক্রেনের সলেদার শহর দখলের রুশ অভিযানের নেতৃত্বে ছিল ওয়াগনার যোদ্ধারা।

এটি বাখমুত থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে।গত কয়েক মাস ধরে প্রিগোজিন রাশিয়ার সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছেন। মে মাসে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বাখমুত থেকে তার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করা হবে।

এর আগে কয়েক মাস ধরে পর্যাপ্ত গোলাবরুদ না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন তিনি। এখন তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরুর পরই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমালোচনায় রুশ সরকারের অনেকেই ক্ষুব্ধ এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।