'করোনার ভয়কে জয় করে আমরা কাজ করছি'

করোনার এই সংকটকালীন সময়ে যেসব পেশাজীবীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ পুলিশ। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানায় কর্মরত সাব ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদ রাহুল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। তার সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে কাজ করতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা ও পুলিশের কার্যক্রম, নির্দেশনা প্রভৃতি বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

প্রশ্ন-১ : করোনার এই সময়ে নিজেকে কিভাবে ভালো রাখছেন?
নুর মোহাম্মদ: কোভিড-১৯ একটি মহামারী ভাইরাসের নাম। পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে এ ভাইরাসটি।এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারে নাই বিজ্ঞানীরা। তাই মহান আল্লাহ ও সচেতনতা ছাড়া এখনো পর্যন্ত কিছুই করার নাই। নিজেকে কিভাবে ভালো রাখছি, এই প্রশ্নটিই আসলে আমার কাছে অনেক জটিল। পুলিশের চাকরি আসলেই অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাইতো এই মহামারীর ভিতরেও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যগণ তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেনি। করোনার ভয়কে জয় করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা যুদ্ধে সাহসী যোদ্ধার নাম বাংলাদেশ পুলিশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তারপরও নিজেকে ভালো রাখতে হচ্ছে। যেহেতু এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই সেহেতু সাবধানতা অবলম্বন করছি এবং বাংলাদেশ সরকার ও WHO-এর নির্দেশিত পথে চলছি।দায়িত্ব চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের পবিত্র পোশাক পরিধান করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি,মাক্স, হ্যান্ডগ্লাভস, গ্লাস ,হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্রয়োজনে PPE ব্যবহার করছি এবং অবশ্যই সময় মতন হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে নিম্ন পক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধৌত করছি। যখনই সময় পাই নামাজ পড়ছি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করছি আল্লাহ পাকের কাছে এই মহামারী হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সৃষ্টিকুলের সকল মানবজাতির উপর আল্লাহপাকের খাস রহমত নাযিল হোক এই দোয়াই করছি। মোবাইল ফোনে নিজের পরিবার অর্থাৎ পিতা-মাতার সাথে যতটুকু সময় পারি কথা বলে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি আমি ভালো আছি।

প্রশ্ন-২ : মাঠ পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রম কেমন হচ্ছে?
নুর মোহাম্মদ: পুলিশের কার্যক্রম কি? সংক্রামক ব্যাধি করোনা যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, দেশে ভাইরাস শনাক্ত হবার পরপরই বাংলাদেশ পুলিশ নানা ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ সদস্যগণ রাস্তায় চেকপোস্ট করে মানুষ ও যানবাহন তল্লাশি করছে, অবাধে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে ,গণজমায়েত করতে দিচ্ছে না। যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে, জরুরী সেবার যানবাহনের জন্য নিরাপদ রাস্তাঘাট সচল রাখছে, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করছে, হাটবাজারে টহল দিচ্ছে, ত্রাণ প্রদানে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে । মানুষ কোয়ারেন্টাইন মানছেন কিনা তার তদারকি করছে, বিদেশ ফেরত সকল নাগরিকদের ১৪ দিন বাসায় থাকার নির্দেশ দিচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের নিজস্ব অর্থ থেকে ত্রাণ প্রদান করছে,বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য নিশ্চিতভাবে জানে তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ১০০% সম্ভাবনা আছে এবং মৃত্যু হতে পারে। তারপরেও মানবিক পুলিশ যে সকল ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে মৃত্যু বরণ করছেন যাদের লাশ তাদের পরিবার- তাদের সন্তানেরা নিতে অনিচ্ছুক। সেই সকল মৃত ব্যক্তির দাফনের কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ। মৃত্যু ভয় কে জয় করে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছে

প্রশ্ন-৩ : লকডাউন কার্যকর করতে জনগণের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
নুর মোহাম্মদ: করোনা ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি তাই সবার মতো আমিও মনে করি ঘরে থাকা একমাত্র সমাধান বারবার বলার পরেও অনেক মানুষ সময়মতো ঘরে ফিরতে চাচ্ছে না প্রশ্নের উত্তরে জবাব আসে ঘরে থাকতে ভালো লাগে না, মেডিসিন আনতে যাচ্ছি অথচ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নাই অথবা নতুন নতুন বাহানা। ফলশ্রুতিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ঘরে থাকুন। দেশ সমাজ পরিবার ও সুন্দর আগামীর জন্য হলেও ঘরে থাকুন।জনগণ ও পুলিশ একে অপরের সাথে সুনিবিড়ভাবে সংযুক্ত। জনগণ পুলিশের বন্ধু তাই পুলিশকে সহায়তা করা জনগণের পবিত্র দায়িত্ব। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টা জীবনকে বাজি রেখে পুলিশের প্রতিটি সদস্য কাজ করছে। বিশ্বাস করি আল্লাহ পাকের রহমতে জনগণের সহযোগিতায় এই মহামারী প্রতিরোধ করা যাবে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহপাক আমাদের জন্য তার রহমতের দরজা খুলে দিবেন।

প্রশ্ন-৪ : করোনার এই সময়ে জনসাধারণের জন্য কী পরামর্শ দিবেন?
নুর মোহাম্মদ: অবশ্যই ঘরে থাকবেন অতিমাত্রায় প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না ।বেশি বেশি হাত ধৌত করেন । সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন । পুলিশকে সকল ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন ।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সকল ধরনের নির্দেশনা মেনে চলুন।. নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সামান্য জ্বর সর্দি হলে ঘরেই প্রাথমিক সেবা নিন ।পরবর্তীতে সুস্থতা না মনে করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজে একমুঠো কমক্ষেত্রে আপনার পাশের প্রতিবেশী ঘরে খাবার পৌঁছে দিন। আপনার আশেপাশে অনেক পরিবার আছে যারা মধ্যবিত্ত চক্ষুলজ্জার কারণে তারা খাবার চাইতে পারে না দয়া করে নিজ দায়িত্বে তাদের পাশে দাঁড়ান। মধ্যরাতে কেউ উত্তর দিতে আসলে ঘরের দরজা খুলবেন না অনেক অপরাধী সময় সক্রিয় থাকে বেশি সমস্যা মনে করলে ৯৯৯ এই নাম্বারে ফোন দিন । যে যে ধর্মের অনুসারী তারা ধর্মানুসারে সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করুন। আঁধার কেটে গিয়ে নতুন ভোর আসবে উদিত হবে শান্তির সূর্য। রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়বে পুরো পৃথিবীতে । আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায়।

সাব ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদ রাহুল
সাব ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদ রাহুল

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.