কারিগরি বোর্ডের মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধের পথে

Rate this post

প্রায় ১৫ বছর পর অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স। ফলে ওই দুটি কোর্স আগের মতোই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত এসংক্রান্ত আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি ইতিমধ্যেই এমন সুপারিশ করেছে।

কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রইছ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে গিয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাকে দায়িত্ব দেন। সে অনুসারে আমরা দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটি সমাধানের পথ তৈরি করেছি যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৬২ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিক্যাল টেকনোলজি কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০০৫ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিক্যাল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ১৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে চলছে টানা-হেঁচড়া। মাঝে এই জটিলতা নিরসনে ২০০৭ সালে আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি ওই কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের’ আওতায় পরিচালনার সুপারিশ করে। তাও বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাসকৃতরা হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। ফলে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট’ বাস্তবায়নের আদেশ দেন।

ওই সূত্রটি জানায়, মেডিক্যাল টেকনোলজি কোর্স নিয়ে জটিলতার মধ্যেই ২০১২ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নার্সিং কোর্সও পরিচালনা শুরু করে। ফলে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স পরিচালনাসংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এবং আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে গত ১৭ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে মন্ত্রণালয় আট সদস্যের আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দেয়। যার সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব রইছ উদ্দিন এবং কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ); অতিরিক্ত সচিব (সিপিটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়); অতিরিক্ত সচিব (স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ); উপসচিব (আইন ও বিচার বিভাগ), চেয়ারম্যান (বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড); রেজিস্ট্রার (বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল); সচিব (বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ)। ওই কমিটি গত ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ করাসহ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং-সংক্রান্ত সব শিক্ষা কার্যক্রম ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের’ আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালনার কথাও উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো, তালিকা প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল এবং পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এবং নার্সিং কাউন্সিলে নিবন্ধন-অন্তর্ভুক্তীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্সে নতুন করে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়।

একই প্রতিবেদনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮ সংশোধন করার জন্য বলা হয়। ওই আইনের তফশিল-১ এর ক্রমিক ‘ঞ’ ও ক্রমিক ৪সহ তফশিলে উল্লেখিত মেডিক্যাল টেকনোলজি ও নার্সিং প্রশিক্ষণ কোর্স সংক্রান্ত বিধানাবলি বিলুপ্ত-সংশোধন করার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বলা হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮ এর উল্লিখিত তফশিল সংশোধন করা হলে আদালতের দেওয়া রায়ে উল্লিখিত ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট’ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে আন্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের কার্যক্রম মনিটর করার জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ); অতিরিক্ত সচিব (স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ); চেয়ারম্যান (বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড); রেজিস্ট্রার (বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল) ও সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সহকারী সচিব-উপসচিবের (স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ) সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়।

আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়েরকারী বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট’ তিন বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এখন আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে জটিলতা নিরসন করা হবে বলে আশা করছি।”

  • তৌফিক মারুফ । সূত্র : কালের কণ্ঠ । ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

এডু ডেইলি ২৪

Education, News and Information-based portal

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *