ব্র্যান্ডিং ও পিআর : চাকরিতে সৃজনশীল প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পান
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়তই কৌশল বদলাচ্ছে, নিচ্ছে অভিনব পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে চাকরির বাজার। দরকার পড়ছে ব্র্যান্ডিং, জনসংযোগ (পিআর) বা কমিউনিকেশনে দক্ষ জনবলের। চাকরির বাজার, যোগ্যতা, সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ব্র্যান্ডিং, যোগাযোগ ও বিপণনকাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের যোগাযোগ ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের ইনচার্জ সফিকুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিব তারেক
- বর্তমানে ব্র্যান্ডিং এবং পিআর বিভাগে কাজের সুযোগ কেমন?
– প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক বাজারে টিকে থাকতে অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের ব্র্যান্ডিং ও পিআর (জনসংযোগ) নিয়ে সিরিয়াস হচ্ছে। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার পরিধি বাড়ছে। তাই এ খাতে কাজের পরিধিও বড় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ছোট কিংবা বড় হোক, তার পিআর এবং ব্র্যান্ডিং বিভাগের দরকার আছে। ভোক্তা টানতে এবং পণ্য বা সেবার বাজার বড় করতে একদিকে ব্র্যান্ডিং বিভাগ, আরেক দিকে জনসংযোগ বা প্রচারণার জন্য পিআর বিভাগকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে বা হবে। এসব কারণে বলা যায়- এ খাতে বর্তমানে কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই সুযোগ বাড়বে। বিশ্বজুড়েই এ খাতে কাজের পরিধি দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। - কোন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা ব্র্যান্ডিং, পিআর বা কমিউনিকেশন বিভাগে চাকরির অগ্রাধিকার পান?
– সাধারণত গণসংযোগ, সাংবাদিকতা, বিপণন ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পেলেও মূলত এ ক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতাটাকেই বড় যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়। কেউ যদি অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করেও যোগাযোগ দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তিনিই যোগ্য। পাশাপাশি প্রার্থীকে সৃজনশীল ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। - যেসব কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জনসংযোগ, যোগাযোগ, ব্র্যান্ডিং এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
– জনসংযোগ, যোগাযোগ, ব্র্যান্ডিং, বিজ্ঞাপন বা এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে কেউ ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে তাঁকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে। সাম্প্রতিক খবরাখবর, সমকালীন পণ্যসেবা সম্পর্কে জানাশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোজক-বিশ্লেষণাÍক চিন্তার অধিকারী এবং একজন চমৎকার গল্পকার হতে হবে। নতুন কিছু করবার জন্য উৎসুক থাকতে হবে। যদি কারো কাছে নতুন ধারণা বা নতুন কিছু করার ভিন্ন উপায় থাকে, তাহলে তা করা থেকে কোনোভাবেই যেন তিনি বিরত না হন। ‘নিজেকে জানা’ আর তা ‘জানান দেওয়া’টা এ ক্ষেত্রে জরুরি। - একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং এবং পিআর বিভাগ কিভাবে কাজ করে?
– ব্র্যান্ডিং আর পিআর- একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক আছে। পণ্যের ইউনিক বা অনন্য নাম এবং পরিচিতি তৈরি করাকে ব্র্যান্ডিং বলা হয়। এককথায়, ব্র্যান্ডিং মানে হচ্ছে কম্পানির পক্ষ থেকে নিজেদের পণ্যের মান ও সেবার ব্যাপারে পজিটিভ কমিটমেন্ট নিশ্চিত করা। আর পণ্যের পরিচিতি, মান ও সেবার এই কমিটমেন্ট-বার্তা নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা। সঠিকভাবে সঠিক সময়ে এবং নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে তাঁর পণ্যের কথা পৌঁছে দেওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বন্দুকের গুলি একবার বেরিয়ে গেলে যেমন ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি পিআরের ভুল একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তথা একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। - নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলুন- বইয়ের সিলেবাসের বাইরে কোন কোন দক্ষতা বা জানাশোনা একজন প্রার্থীর প্রথম চাকরি পেতে কিংবা ক্যারিয়ার গড়তে বড় ভূমিকা রাখতে পারে?
– সৃজনশীলতা হলো এমন একটি অনুপম যোগ্যতা, যা একজন মানুষকে অন্য দশজন থেকে আলাদা করে তুলবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, নিকট ভবিষ্যতে কাজের যোগ্যতা ও দক্ষতা হিসেবে সৃজনশীলতাকে সবচেয়ে বড় করে দেখা হবে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে সৃজনশীলতা ছাড়া একটি নতুন পণ্য বা সেবা নিয়ে চিন্তাভাবনা করাটা ভীষণ কঠিন ব্যাপার! চাকরিতে নিয়োগদাতারা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার লোকদের পছন্দ করেন, যাদের মাধ্যমে কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানটিকে সৃজনশীলতার মাধ্যমে সফল একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। নিজের কথাই বলি, কবিতা, সৃজনশীলতা কিংবা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ক্ষমতা আমার কিশোর জীবন থেকেই ছিল। কর্মক্ষেত্রে এটি কাজে দিচ্ছে।
নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি আমরা দুজন প্রার্থীকে বিবেচনা করি, যাঁরা একই পদে আবেদন করেছেন এবং তাঁদের উভয়েরই স্নাতক ডিগ্রি। তবে এর মধ্যে একজনের লেখালেখি বা চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ রয়েছে এবং অন্যজনের একাডেমিক যোগ্যতা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে দক্ষতা নেই। সে ক্ষেত্রে কার চাকরিটা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে? নিশ্চয়ই প্রথমজনের। কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা একজনের কাজে পূর্ণতা দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি একাডেমিক যোগ্যতার চেয়েও বড় যোগ্যতা। - এ সেক্টরে ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য কী কী গুণ থাকা জরুরি?
– জনসংযোগ (পিআর) এমন একটি ক্ষেত্র, যা প্রতিষ্ঠানের পটপরিবর্তন করে দিতে পারে। জনসংযোগ একটি প্রতিষ্ঠানের আয়না এবং সেই আয়নায়ই প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি ভাসে। মনে রাখতে হবে- দেখানোটা বড় বিষয় নয়; কী দেখাচ্ছি, কোথায় এবং কিভাবে দেখাচ্ছি- এটাই বড় কথা। এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে পুরনো ভোক্তা এবং ভবিষ্যৎ ভোক্তার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়ে গেছে। তরুণ প্রজš§ অনেক বেশি সোশ্যাল মিডিয়ামুখী, তাই জনসংযোগ কাজের গতিধারায়ও পরিবর্তন এসেছে। জনসংযোগ কর্মকর্তাকেও আধুনিক আবহের সঙ্গে নতুন কলাকৌশল ঠিক করতে হচ্ছে। যাঁরা বাস্তব অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন; যোগাযোগের দক্ষতার পাশাপাশি লেখালেখি, কৌত‚হলী এবং কাজের পরিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখছেন- তারাই সফল হচ্ছেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ । চাকরি আছে । ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০