যারা অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশন নিয়ে আসতে চান

যারা অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশন নিয়ে আসতে চান, তাদের জন্যই এই পোস্ট। এক জন ফেসবুকে মেসেজ দিয়েছেন–“আমি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র।সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করছি একটা পলিটেকনিক থেকে।সাধারণত পলিটেকনিকে দুর্বল ও কম মেধাবি আর্থিক দিক থেকে অস্বচ্চল ঘরের ছেলেরা পড়ে।আমি এখন ৫ম পর্বে পড়ি তো আমার পাশ করতে ২০১৫ লেগে যাবে।পাশ করেই আমি কোন প্রথম বিশ্বের দেশে যেতে চাই।যেখানে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাই। আমার পছন্দের তালিকাই আছে আমেরিকা , কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সহ যে কোন ইংলিশ স্পিকিং দেশ।আমি যত সম্ভব ইংরেজি চর্চা করছি।আমার মেইন লক্ষ্য ওয়ার্ক পারমিট।যদি সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট পাই তাহলে আমার জন্য খুব সহায়ক হবে সবকিছু ঠিক রাখা।আমি শুনেছিলাম কানাডাতে নাকি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্ট হিসাবে সরাসরি যাওয়া যাই । এই বিষয় এ যদি কারও জানা থাকে তাহলে জানাবেন। আর সকলেই আলোচনা করে ব্যাচেলর এর পর থেকে। ডিপ্লোমা ও দরকার সকল ক্ষেত্রে ই।প্রতেক দেশেই ডিপ্লোমা কোর্স আছে এবং ডিপ্লোমা এর পর এ সেই বিষয় এ কাজ করার সুযোগ থাকে।তাই কেও যদি এই বিষয় কিছু টা তথ্য দ্যান তাহলে আর কিছু খুদে স্বল্প শিক্ষিত দের জীবন বদলাতে পারে।ধন্যবাদ।”
প্রথম তথ্য হলো বিদেশে তথা উন্নত বিশ্বে স্কিল্ড মাইগ্রেশনের নিয়ম-কানুন প্রায় সমান। অস্ট্রেলিয়ায় যে কোন ক্ষেত্রে স্কিল্ড হিসাবে আবেদন করতে সংশ্লিষ্ট শাখায় চার বছরের জব এক্সপেরিয়েন্স লাগে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, আপনি স্কিল্ড কিনা তা আপনি ভেবে সন্তুষ্ট হলে হবেনা! যাদের দেশে যেতে চাইছেন, তারা নিশ্চিত হতে হবে তাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ডে আপনি স্কিল্ড! কারন এসব দেশের পড়াশুনার কারিক্যুলাম-স্টাইল, কাজের স্টাইল, মেশিনারিজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের দেশগুলোর চাইতে ভিন্ন এবং অগ্রসর। ভাষাগত একটি বিষয়তো আছেই।
অস্ট্রেলিয়ায় স্কিল্ড মাইগ্রেশনে আসতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে এদেশের এসেসমেন্ট অথরিটির কাছে অনলাইনে নির্ধারিত ফী সহ কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এসেসমেন্ট অথরিটি কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাবে আপনি তাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে স্কিল্ড কিনা। তারা স্কিল্ড মনে করলে আপনাকে ই-মেইল করে হ্যাঁ বা না উত্তর জানাবে। স্কিল্ড মনে করলে আপনাকে কিভাবে ফারদার অগ্রসর থে তথা কিভাবে আবেদন করতে হবে তা বলে দেবে। মনে রাখবেন স্কিল মাইগ্রেশনেও আইএলটিএস স্কোর মাস্ট। ক্ষেত্র বিশেষে এই আইএলটিএস স্কোর সব ক্ষেত্রে ৭ লাগে। আইএলটিএস স্কোর কত লাগবে, আবেদনের সংগে কত হাজার ফী কিভাবে জমা দিতে হবে তাও তারা বলে দেবে তারা! উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় এসব তথ্য অনলাইনে আছে(www.immi.gov.au)। আপনি কনফিডেন্ট হলে নিজেই সব চেক করে অগ্রসর হতেপারবেন অথবা এজেন্টের কাছেও যেতে পারেন। তবে এজেন্টের সব কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। এজেন্টের কথাগুলোও আপনি অনলাইনে চেক করতে পারবেন অথবা অস্ট্রেলিয়ার অথরিটির কাছে ই-মেইল করলে সত্যমিথ্যা তারা ই-মেইল করে জানাবে। এসব দেশের ভব্যতার একটা দিক হলো এদের লিখলে তারা জবাব দেয়। এসব অভিবাসনের চেষ্টায় কোথাও কোন ঘুষ বা তদবিরের সুযোগ নেই। যা আইনানুগ তাই শুধু হবে। ঘুষ অথবা তদবিরের চেষ্টা করলে আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
আপনার স্কিল্ড মাইগ্রেশনের আবেদন গৃহিত হলে একইসংগে আপনার ফ্যামিলি মাইগ্রেশনও হবে। অর্থাৎ আপনার সংগে আসতে পারবেন আপনার স্ত্রী সন্তানেরা। আপনার স্ত্রী ইংরেজিতে দূর্বল হলে তাকে এখানে এসে ইংরেজি কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করতে হবে। এরজন্য ইংরেজি কোর্সের ফী তারা ঢাকায় থাকতেই আপনার কাছে চেয়ে রাখবে। আপনার স্ত্রীর ইংরেজি দক্ষতা দরকারের কারন, সবগসার চালাতে এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই চাকরি করতে হয়। স্ত্রীর ইংরেজিটা ঝরঝরে থাকলে বাসায় বাচ্চাদের পড়াতে পারবেন।
আপনার সংগে অভিবাসন নিয়ে আসা বাচ্চারা এদেশের সরকারি স্কুলে ফ্রী পড়তে পারবে। এখানে আসার পর আপনাকে দেয়া হবে একটি মেডিকেয়ার কার্ড। এই কার্ড দেখিয়ে আপনি ও আপনার পরিবারের সদস্যা এদেশে ফ্রী ডাক্তার দেখাতে পারবেন। সরকারি হাসপাতালে ফ্রী চিকিৎসা পাবেন। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন ছাড়া এই স্কুলিং ও চিকিৎসার বিষয়গুলো খুবই ব্যয়বহুল। তা এদেশে অভিবাসন ছাড়া আসা ছাত্রছাত্রীরা ভালো জানেন!
আরেকটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য আপনি স্কিল্ড হিসাবে আসলেও সংশ্লিষ্ট শাখায় চাকরি পাবার কোন নিশ্চয়তা নেই! কারন আপনি ওই সেক্টরে এদেশে পড়াশুনা করেননি এবং ওই সেক্টরে এদেশে আপনার কোন জব এক্সপেরিয়েন্সও নেই! সে কারনে আপনি পড়বেন আরেক সংগ্রামে। রেষ্টুরেন্ট, দোকান বা অন্য কোথাও জীবিকার জন্য কাজ করে তখন আপনাকে সংশ্লিষ্ট শাখায় পড়াশুনা করতে হবে। সে এক আরেক সংগ্রাম! তখন বুঝবেন দেশে পড়াশুনা ছিল সময় নষ্ট করা! এদেশে ডাক্তার এসেও তাকে অস্ট্রেলিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের এমএমসির দুটি কঠিন পরীক্ষায় পাশ করার আগে ডাক্তারি করতে পারেন না। তখন তাদের রেষ্টুরেন্ট- দোকান অথবা যে কোন জব করতে হয় বাঁচার তাগিদে। এদেশে কোন জবই কিন্তু অসম্মানের নয়।
মনে রাখবেন আপনার মাইগ্রেশন মানে এদেশের নাগরিকত্ব নয়। এটি হলো পারমানেন্ট রেসিডেন্সি। এদেশে আইনানুগ চারবছর থাকার পর আপনি নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট, ভোট দেবার অধিকার ছাড়া সব সুবিধাই ভোগ করবেন। কিন্তু বেকার ভাতা, ছয় বছরে নিচে বাচ্চার জন্য মায়ের পেরেন্টিয়াল পেমেন্ট এসব পাবেন এখানে থাকার দু’বছর পর। আবার এই সময়ে আপনার চাকরি না থাকলে অথবা আয় কম হলে বাচ্চদের জন্য ভাতা পাবেন আপনি। এদেশে নাগরিক অথবা অভিবাসন পাওয়া বাচ্চা এবং বৃদ্ধদের ভরনপোষনের দায়িত্ব এই কল্যান রাষ্ট্রের।
এদেশের জীবন খুব ব্যয়বহুল। একটি পরিবারের চলতে সপ্তাহে কমপক্ষে সাড়ে সাতশ ডলার লাগে। বাসা ভাড়া সপ্তাহে চারশ ডলারের কম নয়। তিন মাস পর পর বিদ্যুত বিল আসবে ৬ শ ডলারের মতো। ফোন ইন্টারনেট মোবাইল এসবেও মাসে তিনশ ডলারের বেশি খরচ হবে। কাজেই নতুন একটি পরিবারের কমপক্ষে ২-৩ মাস চলার মতো টাকা নিয়ে আসা ভালো। জব না হওয়া পর্যন্ত আপনার যাতে চলতে অসুবিধা না হয়। আল্লারওয়াস্তে ড্রাইভিংটা শিখে আসবেন। অভিবাসন প্রাপ্তরা এখানে গাড়ি চালাতে সব পরীক্ষা পাশ করতে হয়। দেশে গাড়িটা রপ্ত করে আসলে এখানে শিখতে কম সময় লাগবে। খরচ কম হবে। গাড়ি চালানো শিখতে এখানে ঘন্টায় ৩৫-৪০ ডলার লাগে। গাড়ি ছাড়া এদেশের পারিবারিক জীবন অকল্পনীয় কঠিন।
এতকিছু লিখি কেন জানেন? প্রায় এক কোটি মানুষ এখন দেশের বাইরে আছে বলে এত সমস্যার পরও দেশটা এখনও ভাল চলছে। পরিবারগুলো ভালো আছে। ষোল কোটি মানুষকে ধারনের ক্ষমতা আমার ছোট বাংলাদেশের নেই। তাই আমি চাই আরও লাখ লাখ বাঙ্গালি ছড়িয়ে পড়বে সারাবিশ্বে। নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নেবে সর্বত্র। সব জায়গায় গড়ে উঠবে একেক খন্ড বাংলাদেশ। প্রতিবেশিরা তাদের দেখিয়ে বলবে এরা বাংলাদেশ থেকে আসা পরিশ্রমী মানুষ। তিরিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এদেশটি স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭১ সালে। এখন শুধু এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু এগিয়ে যাবে।
[অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশির স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত]