ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত : ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর দু’টি ঈদ উদযাপন করে। ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বছরে দুই বার ঈদের নামাজ পড়ার কারণে অনেকেই নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যান। ঈদের নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো।
ঈদের নামাজ পড়ার পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। যেমন : ঈদের দুই রাকাত নামাজের কোনো আজান, ইকামত নেই। এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির রয়েছে। সেগুলো আদায়ের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিম্নে সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো:
ঈদের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
- ১। প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন।
- ২। তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।
- ৩। তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।
- ৪। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
- ৫। দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।
- ৬। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।
- ৭। নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
- ৮। খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।
ঈদের নামাজের নিয়ত (বাংলায় আরবি উচ্চারণ)
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতা সালাতি ঈদিল ফিতর, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত (বাংলা)
ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি…
ঈদের নামাজের ধাপ
ঈদের নামাজের নিয়ত (বাংলা)
ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি…আল্লাহু আকবার।
প্রথম রাকাত
- ১. তাকবিরে তাহরিমা : ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা।
- ২. সানা পড়া : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
- ৩. অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া : এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেওয়া।
- ৪. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
- ৫. সুরা ফাতিহা পড়া
- ৬. সুরা মেলানো। অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
- ১. বিসমিল্লাহ পড়া
- ২. সুরা ফাতিহা পড়া
- ৩. সুরা মেলানো।
- ৪. সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া; অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।
- ৫. তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
- ৬. সিজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
সবশেষে খুতবা
ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবেন আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবেন।
দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ ছয়টি অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবিরসহ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবিরে ভুল হলে অর্থাৎ তাকবির কম বা বেশি হলে অথবা বাদ পড়লে সাহু সিজদা প্রয়োজন নেই।