মাস্টার্স, বিএসসি ও ডিপ্লোমা পর্যায়ের নার্সিং ভর্তি ও নার্সিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (BNMC) কর্তৃক প্রণীত ভর্তি নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী বিএসসি ইন নার্সিং ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ে ভর্তির জন্য ন্যূনতম কত, কত সালের পাশ করা প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন, নার্সিং ভর্তির যোগ্যতা, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন, নার্সের মাসিক আয় (বেতন), কোথায় পড়বেন নার্সিং ইত্যাদি এখানে তুলে ধরা হলো।
আমাদের দেশে প্রতিবছরই যোগ্য ও পেশাদার নার্সের চাহিদা বাড়ছে। একজন নার্স চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে রোগীর সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচর্যার কাজ করে থাকেন।
BSc in Nursing, Diploma in Nursing Science and Midwifery & Diploma in Midwifery ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২০২২ এ অংশগ্রহণ করার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পাশের সাল নির্ধারণ ছিল-
এইচএসসি ২০২০/২০২১ ও এসএসসি ২০১৮/২০১৯।
এখানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা সবাই পড়তে পারবেন), এসএসসি ও এইচএসসি এই ২টা মিলে জিপিএ ৬ লাগবে। একটিতে কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে।
অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থাকতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে মিলিয়ে মোট কমপক্ষে জিপিএ ৭ থাকতে হবে এবং এসএসসিতে জিপিএ কমপক্ষে ৩.০০ ও এইচএসসিতে কমপক্ষে জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে এবং উভয় পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে জিপিএ ৩.০০ গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতা ও মানবন্টন : ২০২১-২২ সেশনে ভর্তির জন্য এইচএসসি পাশের সাল ছিল ২০২০ ও ২০২১ এবং এসএসসি পাসের সাল ২০১৮ ও ২০১৯। সুতরাং পরবর্তী সেশনগুলোতে পাশের সাল কত নির্ধারণ হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
নার্সিং লিখিত পরীক্ষা : | ১০০ (MCQ) |
এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে : | ৫০ [ HSC GPA×6 ও SSC GPA×4 ] |
পাশ মার্ক : | ৪০ |
HSC কমপক্ষে 3.00
SSC কমপক্ষে 3.00
Total কমপক্ষে 7.00
বাংলা : ২০
ইংরেজি : ২০
গণিত : ১০
পদার্থ বিজ্ঞান : ১০
রসায়ন বিজ্ঞান : ১০
জীববিজ্ঞান : ১০
সাধারণ জ্ঞান : ২০
HSC কমপক্ষে 2.50
SSC কমপক্ষে 2.50
Total কমপক্ষে 6.00
ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ে বিষয় ভিত্তিক মানবন্টন
বাংলা : ২০
ইংরেজি : ২০
গণিত : ১০
সাধারণ বিজ্ঞান : ২৫
সাধারণ জ্ঞান : ২৫
HSC কমপক্ষে 2.50
SSC কমপক্ষে 2.50
Total কমপক্ষে 6.00
বাংলা : ২০
ইংরেজি : ২০
গণিত : ১০
সাধারণ বিজ্ঞান : ২৫
সাধারণ জ্ঞান : ২৫
বিশেষ দ্রষ্টব্য : ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি। এই কোর্সে শুধুমাত্র মহিলা প্রার্থীরাই আবেদন করতে পারবেন।
নার্সিং কোর্সে আবেদন করতে হলে আপনাকে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.25 এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.50 পেয়ে পাস হতে হবে। সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর। তাই নিয়োগ পাওয়ার জন্য আপনাকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত যেকোন সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে Diploma in Nursing বা BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।উক্ত কোর্স সম্পন্ন করে যে কেউ নার্সিং পদের জন্য আবেদন করতে পারেন।
বর্তমানে দেশে ৭টি সরকারি ও ২১টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ কলেজ রয়েছে। পাশাপাশি ৪৩ টি সরকারি ও ৭০ টি বেসরকারি নার্সিং ইনিস্টিটিউট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আপনি তিন বছর মেয়াদী Diploma in Nursing Science and Midwifery ও Diploma in Midwifery কোর্স করতে পারবেন। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছর মেয়াদী Bachelor of Science in Nursing পড়ানো হয়।
তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নার্সিং বিষয়ক ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এছাড়া অর্থোপেডিকস, সাইকিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু রয়েছে। নার্সিংয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্সের শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আপনি একজন নার্সিংকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন।
নার্স মানে চিকিৎসক নয়। কিন্তু তারপরেও নার্সদের হাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে। একজন নার্স চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। যেমন রক্তচাপ মাপা এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা ইত্যাদি। আবার ডাক্তারের নির্দেশনা মোতাবেত রোগীকে সময়মত ও সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানোও নার্সের কাজের মধ্যে পরে। পাশাপাশি অপারেশনের আগে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামসহ অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুতের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ নার্সদের করতে হয়। এরপরে রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া এবং অপারেশনের সময় ডাক্তারকে সাহায্য করা নার্সের দায়িত্ব। সবশেষে রোগীর সার্বিক পরিচর্যার করা স্বাস্থ্যের অগ্রগতি বা অবনতি সম্পর্কে ডাক্তারকে নিয়মিত জানানো নার্সদের নিয়মিত কাজের অন্তর্ভুক্ত।
সরকারি-বেসরকারি উভয় সেক্টরে নার্সদের কর্মক্ষেত্র প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। তবে সরকারী নার্সদের কাজের ক্ষেত্র কিছুটা বিস্তৃত। সরকারী নার্সরা সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।পাশাপাশি দেশের জরুরী প্রয়োজনে আকষ্মিক কোন দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সরকারী নার্সদের দায়িত্ব দেয়া হয়।
অপরদিকে বেসরকারি নার্সরা সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং ব্যক্তিগত ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। তবে নার্সদের কাজেরও বেশকিছু পদ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্র ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স, স্টাফ নার্স, ওটি সিস্টার বা নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। আবার অনেকে নার্সিং কলেজে ইন্সট্রাক্টর বা ডেমোনস্ট্রেটর ইনচার্জ হিসেবেও নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া ভালো দক্ষতা থাকলে নার্সিং অধিদপ্তরে প্রজেক্ট অফিসার বা সহকারী পরিচালক পদেও কাজ করতে পারেন।
নার্স হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স বা ওটি সিস্টার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে যোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সরকারি বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সম্ভাব্য গড় বেতন ৮,০০০ টাকা – ১৬,৫৪০ টাকা মাসিক বেতন পাবেন। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সাধারণত ১৪,০০০ টাকা থেকে বেতন নার্সদের বেতন শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
১. নার্সিং পড়ার যোগ্যতা কি? SSC পাশ করে নার্সিং পড়া যায়?
উত্তর : না, নার্সিং এ পড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই SSC এবং HSC পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
২. মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগ থেকে কি নার্সিং এ পরীক্ষা দিতে পারব?
উত্তর : হ্যাঁ, পারবেন। তবে Bsc in Nursing-এ শুধুমাত্র সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের পরীক্ষার্থীরা এপ্লাই করতে পারবে।
৩. নার্সিংয়ে কি সেকেন্ড টাইম আছে?
উত্তর : হ্যাঁ, নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেকেন্ড টাইমের এর জন্য কোনো পয়েন্ট কাটা যাবে না।
৪. ছেলেরা কি নার্সিং কোর্স করতে পারে?
উত্তর : হ্যাঁ, ছেলেরাও বিএসসি ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারী কোর্স করতে পারবে। সকল নার্সিং কলেজ বা ইন্সটিটিউটে ১০% আসন ছেলেদের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারী তে শুধুমাত্র নারীপ্রার্থীদেরই নেওয়া হয়।
৫. আমরা জন্য কোন কোর্সটি সবচেয়ে ভালো হবে?
উত্তর : আপনি যদি সাইন্সের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে ৪ বছর মেয়াদী অর্নাস সমমানের বিএসসি ইন নার্সিং এর বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য সাইন্সের স্টুডেন্টদের জন্য বিএসসি ইন নার্সিং ভালো হবে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা এবং নামী দামী এনজিওতে বিএসসিদের অগ্রাধীকার বেশি দেওয় হয়।আর মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারী এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারী ভালো হবে। দুটি কোর্স সম্পন্ন করার পর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ পাবেন।
৬. নার্সিং করার পর কি নিশ্চিত সরকারি চাকুরী পাওয়া যাবে?
উত্তর : না, সব প্রফেশনের মত প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নার্সিংয়ে সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। যেহেতু নার্সিং এখন ২য় শ্রেণির মর্যাদার একটি পদ, এ কারণে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে নন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়।
৭. নার্সিংয়ে প্রমোশন আছে?
উত্তর : অন্যান্য পেশার মত নার্সিংয়েও প্রমোশন আছে। শুরুতে সিনিয়র স্টাফ নার্সে প্রবেশের পর আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১ম শ্রেণির পদে প্রমোশন হয়ে থাকে।
৮. নার্সিংয়ে ক্লিনিক্যাল প্রাকটিস এবং ইন্টার্নশিপ কেমন?
উত্তর : প্রথম বর্ষ থেকেই নার্সিং স্টুডেন্টকে ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসে অংশগ্রহণ করতে হয়। প্রতিটি কোর্স সম্পন্ন করার পর ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ রয়েছে। এ সময়ে ইন্টার্ন নার্সগণ নির্দিষ্ট সম্মানী পেয়ে থাকেন।৯. নার্সিং শিক্ষা কি ইংলিশ মিডিয়াম?উত্তর: হ্যাঁ, নার্সিংয়ের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই ইংরেজিতে পরিচালনা হয়। এ কারিকুলামের সকল পাঠ্যপুস্তক ইংরেজিতে লেখা। সুতরাং ইংরেজি অতি দুর্বল শিক্ষার্থীদের নার্সিংকে পছন্দ না করাই ভালো।
১০. মাদ্রাসা, কারিগরি, বিএম, ও লেভেল ইত্যাদি শিক্ষার্থীরা কি নার্সিংয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে?
উত্তর : পারবে। তবে মাদ্রাসা বোর্ড বাদে বাকিদের সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন করতে ডিজিএনএন অফিসে আলাদা আবেদন করতে হবে।
>> নার্সি ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট : www.mefwd.gov.bd, www.dgnm.gov.bd, www.bnmc.gov.bd