ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২০২২ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে দেশের বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক। ২০২২ সালের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলো নিজেদের মুনাফার হিসাব কষেছে। বিদায়ী ২০২২ সাল শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। অনাদায়ী ঋণের সুদ আয়খাতে দেখাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সুবিধা ও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি ডজনখানেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে আগের বছরের তুলনায় অধিকাংশ ব্যাংকের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করেছে তার থেকে তাদের পরিচালন ব্যয় বাদ যাবে। একইসঙ্গে এই মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের প্রভিশনিং করতে হবে। তারপর দেখা যাবে অধিকাংশ ব্যাংকের নিট মুনাফা খুবই কম।
সম্প্রতি ছাড় দেয়া ঋণের সুদ ব্যাংকগুলোর আয়খাতে দেখানোর সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় ও ‘শক এবজর্বিং ক্যাপাসিটি’ (Shock absorbing capacity) বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কাল পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তিগুলোর ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ চলতি ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলোর বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ পরিশোধে নীতি ছাড়ের কারণে অনেক ব্যাংকেরই আদায় কমেছে। কিছু ব্যাংক কৌশলে অনাদায়ী সুদও আয়ের খাতে নিয়ে আসায় পরিচালন মুনাফা বেশি দেখাচ্ছে।
তবে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা।
বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও ৯ মাসে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা বেড়েছে খেলাপী ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট বিতরণ করা ঋণ রয়েছে ১৪.৩৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। জুন শেষে এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।