তথ্য প্রযুক্তি

স্মার্টফোন-ফেসবুক আসক্তি দূর করার ৪ উপায়

স্মার্টফোন কিংবা ফেসবুক আসক্তি আমাদের বাস্তব জীবনের অন্যান্য আসক্তির মতোই কাজ করে। জুয়া বা শপিংয়ের আসক্তির ক্ষেত্রে যেমন আমরা জানি যে এই কাজ আমাদের জন্য ভালো নয় তবুও আমরা এ থেকে নিজেদের আটকাতে পারি না, ঠিক তেমনি ফোনের ব্যবহারও আমরা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সুতরাং ‘আমরা কি ফোনের প্রতি আসক্ত’ এই প্রশ্নটা এখন পুরোপুরি অর্থহীন, বরং কীভাবে ফোনের আসক্তি থেকে বের হওয়া যায়- এটাই এখন মুখ্য আলোচনার বিষয়।

অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞই ফোনের আসক্তি দূরীকরণের প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো টেকনিক্যাল সহায়তা বা আ্যপ্লিকেশন ডাউনলোডের মাধ্যমে কোনো কার্যকারী সমাধান পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে গবেষকদের মতে, অভ্যাস পরিবর্তনই এর আসল সমাধান। অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারলেই কেবল ফোনের আসক্তি উপেক্ষা করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পূর্ণ ফোকাস করতে পারবেন।

স্মার্টফোন কিংবা ফেসবুক আসক্তি দূর করতে এবং কাজের প্রতি আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ ফিরে পেতে এই চারটি কৌশল অনুসরণ করতে পারেন-

কৌশল ১ : স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং এটি কঠোরভাবে মেনে চলুন। আপনি হয়তো প্রাচীন গ্রীক রূপকথার ওডিসিয়াসের কাহিনি পড়ে থাকবেন, যেখানে ওডিসিয়াস তার এক জাহাজযাত্রায় চরম আসক্তি-সৃষ্টিকারী সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন যা তাকে আত্মহত্যার প্রতি প্ররোচিত করছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি তার নাবিকদলকে অনু্রোধ করেন তাকে জাহাজের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে।

আমাদের স্মার্টফোনগুলি আধুনিক কালের সাইরেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আসক্তি-সৃষ্টিকারী ও ক্ষতিকর। তাই ফোনের আসক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদেরও ওডিসিয়াসের মত নিজেদেরকে একটা নিয়মের খুঁটিতে বেঁধে ফেলতে হবে। অর্থাৎ ফোন ব্যবহারের প্রতি একটা সীমারখা নির্ধারণ করে, সেই সময়সূচী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। নির্ধারিত সময়সূচী মেনে চলার জন্যে নিচের উপায়গুলি অনুসরণ করুন :

  • আসক্তি যুক্ত অ্যাপ ডিলিট করুন। তবে, সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ হলে মেইন স্ক্রিন থেকে দূরে কোথাও সরিয়ে রাখুন বা কোনো ফোল্ডারে ঢুকিয়ে রাখুন।
  • রিমাইন্ডার অ্যাপ ব্যবহার করুন, যা নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনি কতক্ষণ ফোন চালাচ্ছেন তা জানাবে ।
  • স্ক্রিন থেকে রঙিন ওয়ালপেপার সরিয়ে ফেলুন, এর পরিবর্তে ধুসর রঙ এর কিছু রাখুন।
  • ‘অ্যারোপ্লেন মোড’ বা ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ অপশনগুলি ব্যবহার করুন।
  • রাতে বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাউটার অফ রাখতে পারেন।
  • ডাউন গ্রেডের কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারেন, যেমন আইফোন এসই।

কৌশল ২ : কোন বিষয়টি আপনাকে ফোনের প্রতি আকৃষ্ট করছে তা চিহ্নিত করুন এবং এ সম্পর্কে সচেতন হন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- ব্যস্ততার কোনো এক দিনে, কাজের মাঝে একটু বিরতি নিতে গিয়ে ফোনটা একটু হাতে নিলেন। আর অমনি বাকি সব ভুলে গিয়ে ডুবে গেলেন মেইল, ফেসবুক, ইউটিউব বা এমন অন্য কিছুতে। এই ব্যাপারটি আরও বেশি ঘটে থাকে যখন আপনি আপনার নিজের বাসায় থাকেন। হাতের ফোনটির দিকে তাকিয়েই থাকেন,আর বাচ্চাদের মতো ভাবতে থাকেন “আর এক মিনিট।” এভাবেই ফোনের আসক্তি, যেকোনো কাজের মধ্যে আপনার মনোযোগকে ব্যহত করে।

যখনই আমাদের কোনো খেলার স্কোর, স্টক মূল্য অথবা কোনো মেসেজ চেক করার প্রয়োজন বোধ হবে, তখনই সেই প্রয়োজনের গভীরতা কতটুকু তা উপলব্ধি করতে হবে এবং সচেতনতার সাথে কাজটা শেষ করেই ফোন রেখে দিতে হবে।

আপনি ফোনের ব্যবহারের প্রতি সচেতন হলে, এই সচেতনতাই আপনার ফোনের আসক্তি বদলে দিতে পারবে। ধরুন, আপনার ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম স্টক করা যদি শেষ নাও হয় তবুও আপনার সচেতনতা আপনাকে এর অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। এভাবেই সচেতনতা আপনাকে আবার সময়ের সঠিক ব্যবহার করার সক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারবে।

কৌশল ৩ : মনোবিজ্ঞানী মিহলি সিসিকসেন্টমিহালির প্রবর্তিত ‘ফ্লো স্টেট’ অনুসরণ করে কাজ করুন।

‘ফ্লো স্টেট’ এমন মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ উৎসাহ ও মনোযোগের সাথে তার কাজটাতে এমন ভাবে মনোনিবেশ করেন যে তার আশেপাশের সমস্ত কিছু অদৃশ্য হয়ে যায়। ‘ফ্লো স্টেট’ অনুসরণ করে কাজ করলে, ফোনের আসক্তি আপনাকে আর আকৃষ্ট করতে পারবে না এবং আপনি সম্পূর্ণভাবে আপনার কাজে ফোকাস করতে পারবেন। ‘ফ্লো স্টেট’ অনুসরণের জন্য কিছু কার্যকরী টিপস নিচে দেওয়া হলো :

  • আপনার ক্যালেন্ডারে একটি ‘ফ্লো ব্লক’ শিডিউল তৈরি করুন।
  • ‘ফ্লো ব্লক’ এর সময়গুলিতে সম্ভব হলে বাড়িতে, কফি শপে বা এমন কোনো পরিবেশে কাজ করুন যেখানে আপনি সহকর্মীদের খোশগল্প, অহেতুক প্রশ্ন বা এ ধরনের বাধা থেকে মুক্ত থাকবেন।
  • প্রয়োজনে ফোনটিকে ‘অ্যারোপ্লেন মোডে’ রাখুন।
  • ওয়েব ব্রাউজার, ইমেইল প্রোগ্রাম ইত্যাদির নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।

কৌশল ৪ : বিরতি নিন। আমাদের এই আধুনিক যুগে, আমরা কে কতটা অর্জন করতে পারলাম সেই প্রতিযোগিতাতেই ব্যস্ত থাকি। বিরতিহীন ভাবে কাজ করে গেলেই যেন সব অর্জন করে নেওয়া যায় এটাই আমাদের বিশ্বাস। তাই আমরা আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো বিরতি বা অবসর নেই না বললেই চলে। কিন্তু বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, আমাদের দেহ ও মন এমন ভাবে তৈরি নয় যে সার্বক্ষণিক কোনো না কোনো কাজ করে যেতে পারবে। সার্বক্ষণিক কাজ আমাদের শরীরকে দুর্বল এবং মনকে বিষণ্ণ করে তোলে। তাই আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

যখন আমরা বিরতি নেই, শূন্য দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকি তখন আমদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা, উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন কিছু সময় নিজেকে দিন। নিজেকে কিছু মুহূর্তের জন্য ভবিষ্যতের চিন্তা, কাজের চাপ এসব ভাবনা থেকে বিরতি দিন। এ সময়ে হাঁটাচলা করতে পারেন বা কোনো সুন্দর দৃশ্যের দিকে তাকিয়েও সময় কাটাতে পারেন। জীবনের এই মুহূর্তগুলি ক্ষণিকের জন্য হলেও আপনাকে শান্তির পরশ দেবে এবং ক্ষণস্থায়ী এ জীবনটাকে উপভোগ করার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেবে। এভাবে, কাজের মাঝের বিরতি আপনাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তুলবে যাতে আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে আবার আপনার কাজে ফিরে যেতে পারেন।

[ সংগৃহীত ]

এডু ডেইলি ২৪