৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন নাঈমুর রহমান। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায়। বাবা মো. আব্দুল জলিল শেখ এবং মা নাসরিন পারভীন। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন নাঈমুর। এরপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ থেকে।
স্নাতকের শেষ বর্ষের পরীক্ষার পরই শুরু করেন বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতি। প্রথমে একটি স্কুলে চাকরি করেন। এরপর বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকেও চাকরি করেছেন। বর্তমানে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
সকালে পত্রিকা দেখে জানতে পারি আজ পিএসসির বিশেষ সভা আছে। তাই বিকালের পর থেকেই পিএসসির ওয়েবসাইট দেখতে থাকি ফল প্রকাশিত হলো কিনা। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যায় জানতে পারি ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডার আমার প্রথম চয়েস ছিল। তাই প্রশাসন ক্যাডার পাব সে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু একেবারে প্রথম হব, কখনো ভাবিনি। সবার ওপরে নিজের রোল দেখে কিছুটা বিস্ময় কাজ করেছে। আমার একজন সহকর্মীকেও মিলিয়ে দেখতে বলেছিলাম। প্রথম হওয়ার পর পরম করুণাময় আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করেছি। প্রথম হওয়ায় অনেক আনন্দিত হয়েছি।
আমি যেহেতু চাকরিতে ছিলাম, তাই রাত ছাড়া পড়ার সুযোগ পাইনি। অফিস থেকে এসে রাতে লেখাপড়া করেছি। এ ছাড়া শুক্র-শনিবার কোনো কাজ না থাকলে দিনেও কিছুটা সময় পেয়েছি।
নাঈমুর রহমান : সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সুবাদে অনেক বড় ভাইকে বিসিএস ক্যাডার হতে দেখেছি। এর একটা প্রভাব হয়তো ছিল। তবে আমি চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিসিএসের পড়া শুরু করি।
যখন যা কিছু করতে চেয়েছি, আমার পরিবার সমর্থন দিয়েছে। বিসিএসের জন্য পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও পিকেএসএফের সহকর্মীদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।
প্রতিকূলতা ছিল। তবে এ বিশ্বাস আমার ছিল- প্রতিকূলতা সব সময়ের জন্য নয়, আল্লাহ একটা সময় সব প্রতিকূলতা দূর করে দেন।
প্রশাসন ক্যাডারের যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, সেটা হলো কাজের বৈচিত্র্য। এ ক্যাডারে খুব কাছ থেকে জনগণকে সেবা দেওয়া সম্ভব। এছাড়া এ ক্যাডারে সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদাও ভালো। তাই প্রশাসন ক্যাডার প্রথম পছন্দ ছিল।
চাকরিতে যোগদানের পর একটা দীর্ঘ সময় তো প্রশিক্ষণে থাকতে হবে। মাঠপর্যায়ে আলাদা করে কোনো দায়িত্ব পেতে বেশ সময় হয়তো লেগে যাবে। তাই চাকরিতে যোগদানের পর প্রথম লক্ষ্য থাকবে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ ভালোভাবে সম্পন্ন করা।
নাঈমুর রহমান : আমরা সরকারি-বেসরকারি যে চাকরিই করি না কেন; আমরা প্রকারান্তরে দেশের সেবাই করি; আমাদের কাজ থেকে জনগণ সেবা পায়। তবে ক্যাডার সার্ভিসে জনগণের অনেক কাছাকাছি থেকে সেবা প্রদানের সুযোগ থাকে বলে আমি মনে করি। তাই নতুন যারা বিসিএসে আসতে চান, শুরু থেকেই সেবার মানসিকতা যেন নিজের ভেতর থাকে। আরেকটি বিষয়, শুধু বিসিএস পরীক্ষার্থী নয় সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই- নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করার চেষ্টা করবেন। নিজের ভালো লাগার কাজে কিছুটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হবেন।