বাংলাদেশে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা, ঝুঁকিতে যেসব অঞ্চল

Rate this post

বাংলাদেশে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশীয় এবং বার্মিজ—এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করা বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল।

২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মিয়ানমারের মান্দালয়। ১০ কিলোমিটার গভীরতার এই ভূমিকম্পন বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হয়েছে।

যদিও দেশে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অন্তত ১৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে—এই মাত্রার ভূমিকম্প যদি ঢাকার কাছাকাছি কোথাও আঘাত হানে, তাহলে কী ঘটবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশীয় এবং বার্মিজ—এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করা বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল।

ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট ক্রমগত উত্তর দিকে সরতে থাকায় মধুপুর ও ডাউকি ফল্টে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ৭ মাত্রা বা এরচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিতে যেসব অঞ্চল

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, গত ২৮ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে পর পর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প দুটির মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭.৭ ও ৬.৪।

ফলে দেশ দুটি বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশেও একই মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা অঞ্চল উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

 

সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কেমন হতে পারে?

সম্প্রতি রাজউকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৪০.২৮ থেকে ৬৫.৮৩ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে সময়ভেদে প্রাণহানির সংখ্যা ব্যাপক হতে পারে—ভোরে হলে ২.১ থেকে ৩.১ লাখ, দুপুরে ২.৭ থেকে ৪ লাখ এবং রাতে হলে ৩.২ থেকে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

একইভাবে, সিলেটে যদি ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে ঢাকায় ৪০,৯৩৫ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ভবন—অর্থাৎ মোট ভবনের ১.৯১ শতাংশ থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ—ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

রাজউকের আওতায় ঢাকায় মোট ভবনের সংখ্যা ২১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি, যার মধ্যে ৫ লাখ ১৪ হাজার কংক্রিটের তৈরি। রাজউকের জরিপ করা ৩,২৫২টি ভবনের মধ্যে ৪২টিকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে।

গত বছর, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়াক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সিসমোলজি-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহসেন ঘাফোরি আশতিয়ানি টিবিএসকে জানান, মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৪৯.৬ শতাংশ প্রধান সড়ক, ৫৯.৪ শতাংশ নগর সড়ক, ৯৬.২২ শতাংশ প্রধান সেতু এবং ৯৬.৭৯ শতাংশ পর্যন্ত নগর সেতু ধসে পড়তে পারে।

আর্থিক ক্ষতির দিক থেকে তিনি জানান, পরিবহন খাতে ক্ষতি হবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে ৮৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং বিদ্যুৎ খাতে ২৭.১ মিলিয়ন ডলার।

 

বাংলাদেশে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি কতটা?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে অপরিকল্পিত ও দুর্বল ভবন, বস্তি এবং সরু গলিতে ঠাসাঠাসি করে মানুষ বসবাস করছে—যা ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির মাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

শহরের অনেক ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধে নির্ধারিত নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে নির্মাণ করা হয়নি, ফলে সেগুলো বড় ধরনের কম্পনে মৃত্যুকূপে পরিণত হতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নরম ও জলাবদ্ধ পলিমাটির ওপর গড়ে ওঠায়, প্রবল ভূকম্পনে এই মাটি সহজেই নরম হয়ে ভবন ধসের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপান বা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশে জনসচেতনতা ও দক্ষ দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে।

এডু ডেইলি ২৪

Education, News and Information-based portal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *