*#62# কিসের কোড, call forwarding এ অপরিচিত নাম্বার? কি করবেন

*#62# কিসের কোড, call forwarding এ অপরিচিত নাম্বার? কি করবেন

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোবাইল ফোন ট্যাপিং বা ট্র্যাকিং প্রসঙ্গে একটি বিষয় ভাইরাল হয়েছে। এতে কেউ ট্যাপিং বা ট্র্যাকিং করছে কিনা তা জানতে *#62# এবং সব ধরণের কল ডাইভার্ট বাতিল করতে ##002# বা ##21# ডায়াল করতে বলা হচ্ছে। তবে *#62# দিয়ে ডায়াল করার পর অনেকের মোবাইলে ভেসে উঠছে পরিচিত নম্বর।

 

এ বিষয়ে এক ব্যবহারকারী জানান, ফেসবুকে এ ধরণের পোস্ট দেখে বিষয়টি সে এবং তার বন্ধুরা মোবাইলে চেক করে দুটি নম্বরে কল ফরওয়ার্ড অপশন অন দেখে আতঙ্কিত পড়েছেন। কদিন শুধুমাত্র ফোন চালু থাকায় অনেকের সাথে অনেক কথা বলা হয়েছে, নজরদারি করে ব্যবস্থা নিতে চাইলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখনও বিষয়টি নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।

ফোনে কারো কথোপকথন শুনতে গোপনে বিশেষ কোনও ডিভাইস বসানোকে বোঝানো হয় ট্যাপিং। আর ট্র্যাকিং সাধারণত কারও গতিবিধি নজরদারিকে বোঝানো হয়। সিম কার্ড ছাড়াও ডিভাইসের আইএমইআই অথবা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি করা সম্ভব। যদিও সহজেই যে কেউ আরেকজনের কথায় আড়ি পাততে বা ট্র্যাক করতে পারবেন তেমনও না। গোপনীয়তার অধিকার যেমন বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধী ধরতে বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নজরদারির সুযোগ অনেক ক্ষেত্রেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, লোকেশন এমন বিভিন্ন অনুমতি দিতে হয়। এজন্য অনেক সময়েই আমাদের গতিবিধি, কথোপকথন, সার্চ বা ক্লিক হিস্ট্রি, আগ্রহের ভিত্তিতে অ্যালগরিদম এমন নানা তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনও আমরা দেখি।

তবে ফোন ডাইভার্ট বা ফরোয়ার্ড একটি ভিন্ন ব্যবস্থা। এটি ব্যবহারকারীর নাম্বার ব্যস্ত বা বন্ধ থাকলে অন্য নাম্বারে ফোন বা মেসেজ যাওয়াকে বোঝানো হয়। এটি সাধারণত ব্যবহারকারীর নিজস্ব পদক্ষেপ হিসেবে থাকে।

 

*#62# কিসের কোড

‘*#62# দিয়ে চেক করার প্রসঙ্গে’ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘এটি দিয়ে চেক করার পর অপরিচিত যে নাম্বারটি দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নাম্বার। কল ট্যাপিং এর জন্য কল ফরওয়ার্ডের দরকার হয়না। কল ট্যাপিং এর জন্য এ মুহূর্তে আমাদের সরকারের, বিশেষত এনটিএমসির (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) যে সক্ষমতা আছে তাতে তারা আসলে বাংলাদেশের যে কোনও ফোনকল যে কোনও সময় চাইলে ট্যাপ করতে পারে। একটা বড় অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয়, তারা চাইলে সেটা দেখতে পারেন, টার্গেটেড যারা তাদের কল রেকর্ড তো তারা করেনই।’

তিনি বলেন, কল ফরওয়ার্ড অপশনে ব্যবহারকারীর নির্ধারিত নাম্বারের বাইরে অপারেটরদের নাম্বার দেখানোর পেছনে একটা কারণ মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিস। কারণ ফোন বন্ধ বা ব্যস্ত থাকলে ও মোবাইলে মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিস চালু থাকলে সেই তথ্য সংবলিত মেসেজ পাঠাতে অপারেটরের সেই নাম্বার ব্যবহার করা হয়।

ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোবারক হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস থেকে সেটি সম্ভব। যেমন ভয়েজ মেইল সার্ভিসের ক্ষেত্রেও এমন সম্ভব। আর এমন ফরোয়ার্ড সার্ভিস বন্ধ করার পরও যদি সেই ফরওয়ার্ড সার্ভিস সচল দেখায় সেটা টেকনিক্যাল কারণে হয়। যেমন নির্দিষ্ট কোনও সার্ভিস বা সাবস্ক্রিপশন যেভাবে চালু করা হয়েছে সেটার নির্দিষ্ট মেয়াদে থাকলে তার আগে অকার্যকর নাও হতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের কল ডেটা রেকর্ডের প্রক্রিয়া আলাদাভাবে করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি এই কল ফরোয়ার্ড বা ডাইভার্টের সাথে সম্পর্কিত না। আমরা অনেক সময় শুনি বাইরের দেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস কেনা হয়েছে, অন্য দেশের সরকার কিনেছে বা কেনে। এটা অপারেটরদের মাধ্যমেও করা সম্ভব। আবার তেমন সংবেদনশীল ডিভাইস যদি থাকে তাহলে অপারেটরদের হেল্প ছাড়াও এটা করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘নানা ভাবে মোবাইল ফোনে নজরদারি সম্ভব এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তি জগতেও একরকম প্রতিযোগিতা রয়েছে। কোনও পক্ষ নিরাপত্তা বাড়াতে বা ক্রমাগত কাজ করে, বিপরীতে কোনও পক্ষ নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে কাজ করে।’

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ফোনে আড়িপাতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেক্ষেত্রে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে আরেকটি ধারাও রয়েছে। সরকার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সে বিধান প্রযোজ্য না।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিটিআরসির একজন উপদেষ্টা খন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, ‘রাষ্ট্রের যে কোনও জরুরী পরিস্থিতি বা প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী গোয়েন্দা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এটা করতে পারে। টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরদেরও নির্দেশ দিলে এটা তারা মানতে বাধ্য থাকবে।’

 

সূত্র: বিবিসি

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.