সত্যিই কি ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন?
নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে চান!

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন! এদিকে, নাহিদ ইসলামও জানিয়েছেন, ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে চান! উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই খবরের মধ্যে আরেকটি খবর চাওর হয়েছে, তা হলো- কয়েকজন উপদেষ্টাকে পরিবর্তন করা হতে পারে।
দৈনিক সমকাল এ বিষয়ে আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো-
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদত্যাগের আলোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নানা পক্ষের প্রতিবন্ধতা, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতায় সরকার কাজ করতে পারছে না’। এই অবস্থায় সরকারের থাকা উচিত কী না- এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের দ্রুত মতামত জানাতে বলেছেন ড. ইউনূস। এ খবর ছড়ানোর পর তাঁর সঙ্গে যমুনায় দেখা করে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।
তিনজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার দুই কর্মকর্তা এবং ছাত্র নেতারা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বেলা ১১টায় উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টা এই বৈঠক এক ঘণ্টা এগিয়ে আনেন।
বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, এক ঘণ্টা নিয়মিত সভা হয়। এর সচিবরা বেরিয়ে যান। শুধু উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ড. ইউনূস। চার ঘণ্টা চলে অনির্ধারিত এই বৈঠক। দুইজন উপদেষ্টা সমকালকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা শুরুতেই বলেন ‘আর দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে চাপ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যে পরিস্থিতি তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দায় নিতে চাই না’।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং মুখ্য-সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারি।
এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা। নাসীরুদ্দীন সমকালকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে যমুনায় গিয়েছিলেন। ড. ইউনূস বলেছেন ‘আর দায়িত্বে থাকতে চান না’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্কা পূরণে তাঁকে সরকারপ্রধান হিসেবে থাকতে হবে বলে বুঝিয়েছি। তিনি ভাববেন বলে জানিয়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, ছাত্রনেতাদেরও সংযত নন। এ বিষয়ে নাসীররুদ্দীন সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে এমন কিছু বলেনি।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠকে ড. ইউনূস পদত্যাগের প্রসঙ্গ তোলেন
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে অবিশ্বাস করায় ড. ইউনূস হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ‘বারবার বলে আসছি, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। জুনের পর একদিনও থাকব না। কিন্তু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন বিষয়কেও নির্বাচনী ইস্যু করে তোলা হচ্ছে’।
বিএনপি নেতাদের অনেকেই গত কয়েক মাস ধরে খোলাখুলি অভিযোগ করছেন, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে সরকারের কেউ কেউ। মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার আলোচনাকেও নির্বাচন বিলম্বের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কয়েক নেতা।
এতে ক্ষুব্ধ ড. ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলেন, ‘এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে, আমি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছি! এমন অপবাদ নিয়ে থাকতে চাই না’। তখন তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ তৈরি করতে বলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় অন্তত চার জন উপদেষ্টা এত একমত পোষণ করে বলেন, তারাও অপবাধ নিয়ে থাকতে চান না। অন্য উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসায় সরকারের দায়িত্ব রয়েছে দেশবাসীর প্রতি। এই অস্থিতিশীল সময়ে সরকার বিদায় নিলে, দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই দায়ও ড. ইউনূসকে নিতে হবে।
তখন, অধ্যাপক ইউনূস উপদেষ্টাদের শনিবারের মধ্যে মতামতা দিতে বলেন। বলেন, ‘উপদেষ্টারাই ঠিক করবেন, সরকার থাকবে কী না’। তবে একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেছেন, শনিবারের মধ্যে নয়, দ্রুত মতামত দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।