সদকাতুল ফিতর ২০২৪ / ফিতরা ২০২৪ : ২০২৪ সালের জনপ্রতি ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব।
‘সদকাতুল ফিতর’-এ দুটি আরবি শব্দ রয়েছে। সদকা মানে দান, আর ফিতর মানে রোজার সমাপন বা ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা সদকাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়। এটিকে জাকাতুল ফিতর বা ফিতরাও বলা হয়ে থাকে। ইসলামী শরিয়ত মতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে—হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারি শরিফ, হাদিস ১৫১২)
ইসলামী ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ’ এর অনুকরণে নিম্নে এবছরের (১৪৪৫ হিজরী/২০২৪ইং) এর সদকাতুল ফিতরের বাজার মূল্য তুলে ধরা হলো:
দেশের সকল বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এই ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যে কোনো একটি পণ্য বা এর বাজার মূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।
ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই ফিতরা দিয়ে দেয়া উত্তম। অবশ্য নামাযের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও চলবে। তবে সওয়াব কম হবে। তাছাড়া রমজানে দিলেও আদায় হবে। তবে ঈদের দিনের পর বিলম্ব করা মাকরূহ। (বুখারি ১৫০৩)
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কিত হাদিস ও সুন্নাহে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে:
আর তা হলো— যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দিয়ে আদায় করলে এক সা’ তথা ৩ কিলো ২৭২ গ্রাম। আর গম দ্বারা ১ কিলো ৬৩৬ গ্রাম।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ জব অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির দিয়ে জাকাতুল ফিতর তথা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারি, হাদিস নং ১৫০৬)
শরিয়তের দলিল দ্বারা এটাও প্রমাণিত যে, উপরোক্ত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করার ও অবকাশ রয়েছে। আমরা এর স্বপক্ষে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
হজরত যুহাইর (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত ইসহাক (রহ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন— আমি সাহাবায়ে কেরামকে (র) এ অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সদকাতুল ফিতর খাবারের পরিবর্তে টাকা দিয়ে আদায় করতেন। (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ১০৩৭১)
২. হজরত হাসান বসরি (রহ) বলেন, টাকা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ১০৩৭০)
৩. অনুরূপভাবে হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের (রহ) চিঠি— হজরত কুররা (রহ) বলেন, আমাদের কাছে হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজের (রহ) চিঠি এসেছে যে, সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষ থেকে নিসফে সা’ খাবার অথবা অর্ধেক দেরহামের মূল্য গ্রহণ করা হবে । ( ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ১০৩৬৯)
ইমাম বুখারির (রহ) অন্যতম শিক্ষক হলেন ইমাম আবু বকর ইবনে আবি শাইবা (রহ)। তিনি তার জগৎ বিখ্যাত কিতাব মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা এর জাকাত অধ্যায়ে সদাকাতুল ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা সংক্রান্ত একটি পরিচ্ছেদ এনেছেন এবং পাঁচটি হাদিস এনে প্রমাণ করেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন।
এ ছাড়া ইমাম বুখারি (রহ) তার সহিহ বুখারিতে হজরত মুয়াজ ইবনে জাবালের (র) বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, তিনি ইয়ামেনবাসীদের বলেন, তোমরা সদকার মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে কাপড় নিয়ে আসো। কেননা, এটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদিনার সাহাবীগণের জন্যও অধিক উপযোগী। (বুখারি, হাদিস নং ১১৪৭)
ইমাম আবু হানিফা (রহ) এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেছেন— টাকা দিয়ে আদায় করা উত্তম। কারণ এটি মানুষের জন্য সহজ ও উপকারী।
আল্লামা ইবনু রুশাইদ (রহ) বলেন, এ মাসায়ালার ক্ষেত্রে ইমাম বুখারি হানাফিদের সহমত পোষণ করেছেন। (ফতহুল বারি, ইবনে হাজার : ৩/৩১২)
মোটকথা, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফদের কর্ম ও বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট যে, টাকা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়; বরং ক্ষেত্র বিশেষ টাকার দ্বারা আদায় করা উত্তম।