হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ পদ্ধতি ২০২৩, যাচাই ও ফি কত টাকা [Holding Tax BD]
হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ পদ্ধতি ২০২৪, যাচাই ও ফি কত টাকা – এসব বিষয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। হোল্ডিং ট্যাক্স ফি (holding tax fee) ও পদ্ধতি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদভুক্ত এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন।
যাদের নিজের জায়গা বা জমি রয়েছে এবং সেই জমিতে বাসা-বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। সেসব বাসা-বাড়ির জন্য প্রতি বছর সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। রাজস্ব হিসেবে সরকারকে বাসা-বাড়ির পরিমাণ ও স্থান অনুযায়ী ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। আর এটিই হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স (Holding tax)।
হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়ার আগে অবশ্যই হোল্ডিং নাম্বার থাকাটা জরুরী কারণ হোল্ডিং নাম্বার এর উল্লেখ করে আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করে থাকি। সাধারণত প্রত্যেক বাসা বাড়িতে একটি নাম্বার প্লেট দেওয়া থাকে। সেটি হতে পারে পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন।
প্রত্যেকটা বাসা বাড়িতেই নাম্বার প্লেটে একটা নাম্বার উল্লেখ করা থাকে। আর এটিই হচ্ছে হোল্ডিং নাম্বার। আপনি যখন ট্যাক্স দিতে যাবেন তখন অবশ্যই এই হোল্ডিং নাম্বারটি আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। এটি হচ্ছে আপনার বাড়ির ট্যাক্স প্রদানের প্রমাণ।
সচরাচর গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহরে সিটি এই ট্যাক্স নির্ধারণ করে থাকে। বার্ষিক কত শতাংশ কর দিতে হবে তা মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
সাধারণত সব বাড়িতেই হোল্ডিং নম্বর দেয়া থাকে। তবে নতুন জায়গা কেনা বা বাড়ি করার সময় রাজস্ব বিভাগে আবেদনের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করতে হয়। এক্ষেত্রে কর কর্মকর্তা বরাবর জায়গার মালিককে মালিকানা সংক্রান্ত কাগজ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হয়। যাচাইয়ের মাধ্যমে তা সঠিক মনে হলে তাকে হোল্ডিং নম্বর প্রদান করা হয়।
আমরা জানলাম হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে গেলে হোল্ডিং নাম্বার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু যদি হোল্ডিং নাম্বার না থাকে সেক্ষেত্রে করনীয় কি? হোল্ডিং নাম্বার না থাকলে করণীয় হচ্ছে আপনার সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গিয়ে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করা।
সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভায় হোল্ডিংহোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করলে তাকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ফি প্রদান করতে হয়। ফি প্রদানের পর সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যে হোল্ডিং নাম্বার প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করলে এই ক্ষেত্রে ফি অর্ধেকেরও কম হয়ে থাকে। সুতরাং আপনার যদি হোল্ডিং নাম্বার না থাকে সে ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের জন্য সর্বাগ্রে আপনাকে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করতে হবে।
হোল্ডিং নাম্বার না থাকলে আপনি যদি শহরাঞ্চলে হয়ে থাকেন তাহলে পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আপনাকে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করতে হবে।
অন্যদিকে আপনি যদি গ্রামে বসবাস করেন সে ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আপনাকে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করতে হবে। হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। যেমন-
হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করে উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো সহ আপনাকে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। তবে বর্তমানে সবকিছু ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে এজন্য আপনি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার অফিসে গিয়ে হোল্ডিং নাম্বারের জন্য আবেদন করলে তারা আপনাকে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করে দিবে।
এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি এবং উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলোর সঙ্গে নিয়ে যাবেন। হোল্ডিং ট্যাক্স এর জন্য আপনাকে স্থানীয় কর কর্মকর্তার অধীনে আপনার এলাকা ভেদে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স এবং হোল্ডিং নাম্বার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হলো। এখন জানব হোল্ডিং ট্যাক্স গণনা বা হিসাবের পদ্ধতি। কিভাবে হিসাব করতে হয় সেটি জানতে হলে নিচের তথ্যগুলো খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।
শহর অঞ্চলের ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্স এর হিসাব যেভাবে হয়, গ্রাম অঞ্চলের ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্সের হিসাব সেভাবে হয় না। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্স সাধারণত ফুট আকারে হিসাব করা হয়। সাধারণত প্রতি বর্গফুটের জন্য ৬.৫০ টাকা হারে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করতে হয়।
অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে হোল্ডিং ট্যাক্স এর হিসাব বার্ষিক মূল্যের ওপর পার্সেন্ট আকারে হিসাব করা হয়। এখন চলুন আমরা সবরাঞ্চল এবং গ্রাম অঞ্চলের হোল্ডিং ট্যাক্স গণনা বা হিসাবের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেব।
আপনি যদি শহরাঞ্চলে বসবাস করেন তাহলে এই পয়েন্টটি আপনার জন্য। এই পয়েন্টে আপনি দেখতে পারবেন কিভাবে আপনি আপনার বাসা বাড়ির জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স হিসাব করবেন। চলুন তাহলে হিসাবের কাজ শুরু করা যাক।
মনে করুন ঢাকা শহরের কোন একটি স্থানে আপনার ৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বাসা রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের জন্য আপনাকে ৬.৫০ টাকা হারে ট্যাক্স প্রদান করলে আপনার ৫০০ বর্গফুট বাসাবাড়ির মোট ট্যাক্স হবে (৫০০ x ৬.৫০) = ৩২৫০ টাকা। এটি হচ্ছে আপনার প্রতি মাসের ট্যাক্স।
তবে যদি আপনি বাৎসরিক অর্থাৎ বারো মাসের ট্যাক্স একবারে প্রদান করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার দশ মাসের হোল্ডিং ট্যাক্স গণনা করা হবে। কারণ সরকার কর্তৃক দুই মাসের ট্যাক্স মওকুফ করা হয়।
সাধারণত বাসাবাড়ির বিভিন্ন সংস্কার করার জন্য বাসার মালিকের অনেক সময় খরচ করতে হয়, এজন্য দুই মাসের ট্যাক্সকে সরকার কর্তৃক মওকুফ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে দশ মাসের ট্যাক্স দিলেই হয়ে যাবে। তাহলে প্রতি মাসের ট্যাক্সকে ১০ দিয়ে গুন করলে আপনার মোট ট্যাক্স আসে (৩২৫০ x ১০) = ৩২৫০০ টাকা।
তবে মনে রাখবেন, আপনাকে মাসিক অথবা বাৎসরিকভাবে ট্যাক্স দিতে হবে না। হোল্ডিং ট্যাক্স প্রতি তিন মাস পর দিতে হয়। আপনার মোট বাৎসরিক টাকা কে যদি আমরা চার দিয়ে গুন করি তাহলে আপনার প্রতিটি তিন মাসের ট্যাক্স চলে আসবে। এক্ষেত্রে আপনার প্রতি তিন মাসের ট্যাক্স হবে (৩২৫০০ / ৪) = ৮১২৫ টাকা।
সুতরাং আপনাকে প্রতি তিন মাস পর পর আপনার বাসা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে ৮১২৫ টাকা প্রদান করতে হবে।
আপনার বাসাবাড়ির মূল পরিমাপ অনুযায়ী উপরোক্ত বর্গফুটের স্থানে সেই বর্গফুট বসিয়ে দিয়ে গুন করলেই আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স এর পরিমাণ চলে আসবে।
তবে এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে আপনি যদি নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন তাহলে আপনাকে ৪০% ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। ট্যাক্স হিসাব করার পর যদি আপনার ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি মনে হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে আপনার পৌরসভার পর্যালোচনা পরিষদ বরাবরের অধীনে একটি আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স সর্বোচ্চ ১৫% পর্যন্ত মওকুফ হতে পারে।
এতক্ষণ শহরাঞ্চলে কিভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হলো সেটি জানলাম। এখন জানবো ইউনিয়ন পরিষদে কিভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং ট্যাক্স সাধারণত ফুট হিসাব করে গণনা করা হয় না।
আপনার যে বসতবাড়ি রয়েছে সেই বাড়ির বার্ষিক মোট মূল্যের উপরে সর্বনিম্ন ১% থেকে সর্বোচ্চ ৭% পর্যন্ত হিসাব করতে হবে। আপনার বসতবাড়ির লোকেশন অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে একদম কম মূল্যের স্থানে হোল্ডিং ট্যাক্স সর্বনিম্ন ১% এবং তুলনামূলকভাবে ভালো জায়গার হোল্ডিং ট্যাক্স সর্বোচ্চ ৭% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের আগে আপনার লোকেশন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আপনাকে এটি সম্পর্কে জানতে হবে কারণ ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং ট্যাক্স সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন বিধান বর্ণিত হয়নি। এটি আপনার লোকেশন অনুযায়ী হিসাব করে নিতে হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। এখন হোল্ডিং ট্যাক্স আমরা কিভাবে দিব সেটি হচ্ছে মূল কথা। হোল্ডিং ট্যাক্স দুইভাবে দেওয়া যায়। একটি হচ্ছে সরাসরি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার ট্যাক্স অফিসে গিয়ে, অন্যটি হচ্ছে অনলাইনে।
আপনি যেকোনো এক উপায়ে আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবেন। হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি আপনার পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের কর অফিসে গিয়ে আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পেমেন্ট সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে হবে।
এক্ষেত্রে তারা আপনাকে একটি ফর্ম প্রদান করবে। এই ফর্মটিতে আপনার তথ্যসমূহ পূরণ করে তাদের নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী আপনাকে টাকাটা পরিশোধ করে দিতে হবে। তাহলে আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ হয়ে যাবে।
আপনি যদি চান অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স দিবেন সেক্ষেত্রে আপনি এটি বাসায় বসেই করতে পারবেন।