ইসমাইল হানিয়া কে? হামাসের এই শীর্ষ নেতা ইরানে নিহত
হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া (ismail haniyeh) তেহরানে গুপ্ত হামলায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পেছনে ইসরাইলের গোয়ান্দা সংস্থাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর আগেও ইরানে গুপ্ত হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নজীরবিহীন হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা, সেসময় হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়াসহ সংগঠনটির অন্যান্যদেরও হত্যার হুমকি দেয় ইসরাইল। সেই সূত্রে হত্যাকারীদের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকেই সন্দেহের প্রথমে রাখতে চাইছে অনেকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে এই ইসমাইল হানিয়া। কিভাবে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বছরের পর বছর ধরে হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে কাতারে বসবাস করতেন হানিয়া। সেখান থেকেই তিনি হামাসকে পরিচালনা করতেন। ১৯৮০ এর দশকের শেসের দিকে হামাসের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সেসময় ইসরাইলি বাহিনীর কাছে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন হামাসের ওই নেতা। ১৯৯২ সালে জেল থেকে তাকে হামাসের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দক্ষিণ লেবাননের একটি জনমানবশূন্য একটি স্থানে নির্বাসিত করা হয়। এর এক বছর পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
২০০৬ সালে যখন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর এবং গাজায় সংসদীয় নির্বাচন করেছিল, তখন হানিয়া হামাসের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন। সেসময় ইসলামপন্থী দল নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে বিজয় অর্জন করে এবং হানিয়া ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী’ নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট আব্বাস হামাস সরকার ভেঙ্গে দেন।
ইসমাইল হানিয়া কে
ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান এবং সব শাখার শীর্ষ নেতা। ১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় তার বাবা-মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের নিকটের বাড়ি থেকে উদ্বাস্তু হন। জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন।
১৯৮৫ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন হানিয়া। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে ইসরায়েলে স্বল্পকালীন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৯২ সালে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়াকে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফেরেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি।
ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হানিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।
পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। পরের বছর ইসমাইল হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে ইসমাইল হানিয়া কাতারে বসবাস করে আসছিলেন।
ইসমাইল হানিয়া কি শিয়া?
ইসমাইল হানিয়া শিয়া নন, তিনি সুন্নি ইসলামে বিশ্বাসী। ফিলিস্তিনের প্রায় সবাই সুন্নি। তবে ইরানের শিয়াদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের।