খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে, বর্গী কারা? পুরো কবিতা
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে, বর্গী কারা? পুরো কবিতা ও বর্গীদের পরিচয় নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই ছড়াটি কবি সুকুমার রায়-এর।
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো পুরো কবিতা
খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গি এল দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরল, পান ফুরল, খাজনার উপায় কী?
আর ক’টা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি।।
ধনিয়া পিঁয়াজ গেছে পচে সর্ষে ক্ষেতে জল।
খরা-বন্যায় শেষ করিল বর্ষার ফসল।।
ধানের গোলা, চালের ঝুড়ি সব শুধু খালি।
ছিন্ন কাপড় জড়িয়ে গায়ে শত শত তালি।
বর্গী কারা? তাদের পরিচয় কী?
বর্গী হলো অষ্টাদশ শতাব্দীর লুটতরাজপ্রিয় অশ্বারোহী মারাঠা সৈন্যদলের নাম। ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দশ বছর ধরে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিয়মিতভাবে লুটতরাজ চালাত বর্গিরা। এদের ডাকাতি, খুন, লুটতরাজ বা বর্গিহানা এই সময়ের নিত্যদিনের ঘটনা।
মারাঠি ধনগর জাতীয় লোকেরা অভিযানে যাওয়ার সময় কেবলমাত্র একটি সাত হাত লম্বা কম্বল ও বর্শা নিয়ে বের হত। এই বর্শাকে মারাঠি ভাষায় বলা হত ‘বরচি’। এই নাম থেকেই ধনগররা বারগির বা বর্গা ধনগর বা বর্গি নামে পরিচিত হয়। বর্গি শব্দটি মারাঠি বারগির শব্দের অপভ্রংশ। বারগির বলতে মারাঠা সাম্রাজ্যের সেই সব অশ্বারোহীদের বোঝাত। এরা ছিল ধনগর জাতীয় এবং মারাঠা নেতা ছত্রপতি শিভাজী মারাঠী প্রশাসন কর্তৃক এদের ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করা হত। মারাঠারা প্রধানত ভারতের মহারাষ্ট্রের অধিবাসী হলেও তারা ভারতবর্ষের গোয়া গুজরাট কর্নাটক অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়ু– ও মধ্য প্রদেশেও বাস করে। সনাতন ধর্মের অনুসারী মারাঠারা মুগল আমলে ছিল ক্ষত্রিয় যোদ্ধা।
১৭৪০ সালের এপ্রিল মাসে আলিবর্দি খাঁ সরফরাজ খাঁকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার নবাব হন। সরফরাজ খাঁর শ্যালক তথা উড়িষ্যার নায়েব নাজিম (উপশাসক) রুস্তম জং আলিবর্দি খাঁর কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। আলিবর্দি বালাসোরের নিকট ফলওয়াইয়ের যুদ্ধে রুস্তম জংকে পরাজিত করে, নিজের ভাইপোকে উড়িষ্যার উপশাসক নিয়োগ করেন। রুস্তম জং এরপর নাগপুরের মারাঠা শাসক প্রথম রঘোজি ভোঁসলের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মারাঠাদের সাহায্যে রুস্তম জং উড়িষ্যার অধিকার পুনরুদ্ধার করেন। এদিকে মারাঠারা বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লুটতরাজ শুরু করে। আলিবর্দি পুনরায় উড়িষ্যায় এসে রুস্তমকে পরাজিত করেন। কিন্তু তিনি মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই ভোঁসলে মারাঠা সর্দার ভাস্কর পণ্ডিতকে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতা করে বাংলায় পাঠান। তাঁরা পাঞ্চেত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন চালাতে থাকেন।
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো কবিতার লেখক কে
এই ছড়াটিটি বাংলা কবি ও লেখক সুকুমার রায় (Sukumar Ray) লিখেছেন। সুকুমার রায় ছিলেন একজন বিখ্যাত বাংলা কবি, লেখক, কারিকাটুরিস্ট, এবং শিশুসাহিত্যের প্রথম অভিজ্ঞতা রাখেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে আপনার চরিত্রগুলির মাধ্যমে মজার কাহিনি ও কবিতা রচনা করেন।