জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত : প্রথম ১০ দিনের ফজিলত
জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত; রাত ও দিনের আমল ও জিজ্ঞাসার উত্তর।

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত : জিলহজ্জ (ذو الحجة) মাস হলো হিজরি বর্ষের ১২তম মাস এবং ইসলামী ক্যালেন্ডারের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ মাস। এই মাসে রয়েছে হজ্বের মতো ফরজ ইবাদত, ঈদুল আজহা এবং কুরবানির মত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিশেষ করে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও বরকতময়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দিনগুলোর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে আমাদের অবহিত করেছেন।
📌 জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
জিলহজ্জ শব্দের অর্থ – “হজের মাস”। এই মাসে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ ‘হজ’। এটি ইবাদত, আত্মত্যাগ ও ত্যাগের মহাসম্মিলন।
🔹 কুরআনুল কারিমে উল্লেখ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“শপথ ফজরের, এবং দশ রাতের।”
— (সূরা আল-ফজর: ১-২)
মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে ‘দশ রাত’ বলতে জিলহজ্জের প্রথম দশ রাতকে বোঝানো হয়েছে।
🔹 হাদীসে এসেছে:
“আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় কোনো দিন নেই যাতে সৎকর্ম করা এই দশ দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়।”
— (বুখারি)
🕋 জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত
✅ ১. আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন
এই ১০ দিনে ইবাদত, দোয়া, রোযা, দান-সদকা, জিকির ইত্যাদি করলেই বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়।
✅ ২. আরাফাহ দিবস (৯ জিলহজ্জ)
আল্লাহ তাআলা এই দিনে হজ পালনকারীদের জন্য হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান’ ফরজ করেছেন। রাসূল (সা.) বলেন:
“আরাফাহ দিবসে রোযা রাখলে আগের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
— (মুসলিম)
✅ ৩. কুরবানির গুরুত্ব (১০ জিলহজ্জ)
১০ জিলহজ্জ – ঈদুল আজহা বা কুরবানির দিন। এটি ইসলামি ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের প্রতীক।
📖 জিলহজ্জ মাসে যে আমলগুলো করা উচিত
🕋 ১. হজ পালন (যাদের জন্য ফরজ)
যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে, তারা এই মাসে হজ আদায় করবেন। এটি ইসলামের একটি রোকন।
🕌 ২. ১ম থেকে ৯ জিলহজ্জ পর্যন্ত নফল রোযা
বিশেষ করে ৯ তারিখের রোযা রাখলে এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
🕯️ ৩. তাকবির, তাহলিল, তাহমিদ ও তাসবিহ
এই দিনগুলোতে বেশি বেশি পড়া উচিত:
“الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد”
(আল্লাহু আকবার… ওয়ালিল্লাহিল হামদ)
🤲 ৪. দোয়া ও ইস্তেগফার
তওবা, কুরআন তিলাওয়াত, সাদকাহ, দরুদ শরীফ, নফল নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যেতে পারে।
🐄 ৫. কুরবানি করা
যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কুরবানি করা সুন্নাতে মুআক্কাদা।
👳♂️ ৬. নখ, চুল ও ত্বক না কাটা (কুরবানির নিয়ত থাকলে)
রাসূল (সা.) বলেন, কুরবানি দেওয়ার নিয়ত করলে ১ জিলহজ্জ থেকে কুরবানি দেওয়া পর্যন্ত নখ, চুল, ত্বক না কাটার নির্দেশনা রয়েছে।
— (মুসলিম)
🌙 জিলহজ্জ মাসের রাত ও দিনের আমল
দিন/রাত | সুন্নত আমল | ফজিলত |
---|---|---|
১ম-৯ম | রোযা, দোয়া, জিকির, তাকবির | অধিক সওয়াব |
৯ জিলহজ্জ | আরাফা দিবসের রোযা | ২ বছরের গুনাহ মাফ |
১০ জিলহজ্জ | ঈদের নামাজ, কুরবানি | ইবরাহিম (আ.) এর স্মরণ |
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
❓ জিলহজ্জ মাস কখন শুরু হয়?
জিলহজ্জ মাস শুরু হয় হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জিলকদ মাস শেষ হওয়ার পর। চাঁদ দেখার ভিত্তিতে দিন নির্ধারিত হয়।
❓ জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে রোযা রাখা কি সুন্নত?
জি হ্যাঁ, ১ম থেকে ৯ জিলহজ্জ পর্যন্ত রোযা রাখা নফল ইবাদত হিসেবে সুন্নত। বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ (আরাফা দিবস) রোযা রাখা খুবই ফজিলতপূর্ণ।
❓ আরাফাহ দিবস কোনটি?
৯ জিলহজ্জ, হজের জন্য নির্ধারিত আরাফার দিনকেই আরাফাহ দিবস বলা হয়।
❓ কুরবানি দেওয়া কি ফরজ?
না, এটি সুন্নাতে মুআক্কাদা। তবে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
❓ জিলহজ্জ মাসে হজ না করলে কী করা উচিত?
যারা হজে যেতে পারেননি, তারা ঘরে বসে ইবাদত, রোযা, দান-সদকা, দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত, এবং কুরবানির মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করতে পারেন।
❓ জিলহজ্জ মাসের কোন তারিখে ঈদ উদযাপন হয়?
১০ জিলহজ্জ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়।
জিলহজ্জ মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। এই মাসের প্রতিটি দিন-রাত ইবাদতের জন্য উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে প্রথম ১০ দিন আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও তাকওয়ার সর্বোচ্চ অনুশীলনের সুযোগ দেয়। আমাদের উচিত এই দিনগুলোতে বেশি বেশি নেক আমল করা, কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতকে জীবনে বাস্তবায়ন করা।