শিক্ষা বার্তাচাকরির খবর

প্রিলিমিনারির আগে প্রশ্নফাঁসের দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারতাম না : ড. মোহাম্মদ সাদিক

“প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারলেও আমি সাদিক ঘুমাতে পারতাম না, প্রশ্নফাঁসের দুশ্চিন্তায়” – ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার
(জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমীর ১৫৭ তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের “ম্যানার এন্ড এটিকেট” সেশন ক্লাস থেকে)

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ১৩তম চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার শেষ কর্মদিবস সম্পন্ন করলেন আজ।
২০১৪ সালের নভেম্বরে পিএসসির সদস্য এবং ২০১৬ সালের এপ্রিলে পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করে আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ পিএসসি দায়িত্ব শেষ করেছেন।
পিএসসির অধীনে ৪টি বিসিএস ভাইভাতে অংশগ্রহণ করেও কখনো স্যারের বোর্ডে ভাইভা দেয়ার সুযোগ হয়নি, কিন্তু ক্যাডারের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে স্যারের ট্রেনিং সেশনে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রায় সকল গভর্মেন্ট অফিসার ট্রেনিং ইন্সটিটিউটেই স্যার সেশন নিয়ে থাকেন।
স্যারের সেশন একদিকে যেমন মনোযোগী শ্রোতা হতে বাধ্য করে, অন্যদিকে দেশপ্রেমে আর জনসেবায় উদ্ভুদ্ধ করে।

ট্রেনিং সেশনে স্যার কথাগুলো আজও কানে লেগে আছে- “আমাদের বস ১৬ কোটি মানুষ। যার টাকায় আপনি এতো সুন্দর চেয়ারে বসে আছেন, সে হয়তো এই চেয়ারে কোনদিন বসেওনাই, আপনি রাতের বেলা যে মেস নাইট ডিনার করবেন, সেটাতে আগারগাও বস্তিবাসীদেরও কন্ট্রিবিউশান আছে, আপনি যখন গ্রান্ড ডিনার করবেন, তখন সেই কনট্রিবিউটরের পেটে হয়তো রাতের বেলার দুমুঠো খাবারও জুটে নি। তাই, তাদের কথাও আপনাকে ভাবতে হবে, তাদের জন্য কাজ করতে হবে, তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।”

আইকনিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাদিক স্যার মানুষ হিসেবে যেমন অসাধারণ, তিনি দায়িত্বে থাকাকালে পিএসসিকেও করেছেন চাকরীপ্রার্থীদের জন্য এক আস্থার জায়গা। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ- দায়িত্বে থেকে পিএসসিকে মেধাবীবান্ধব করতে সাদিক স্যারের অসংখ্য কনট্রিবিউশন রয়েছে। যেমন-

– সাদিক স্যারের দায়িত্বকালে বিসিএস প্রশ্ন ফাস হওয়া দূরে থাক, প্রশ্ন ফাসের গুজবও উঠেনি কখনো। তিনি পিএসসিকে করেছেন চাকরীপ্রার্থীদের জন্য আস্থার জায়গা। এর কারণেই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সিভিল সার্ভিসে আসার আগ্রহও বেড়েছে।

– সাদিক স্যারের চেয়ারম্যান দায়িত্বকালে বিসিএস উত্তীর্ণ, কিন্তু ক্যাডারে সুপারিশবঞ্চিত এমন প্রার্থী থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন ক্যাডার ১ম ও ২য় শ্রেণিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ৩৬ তম বিসিএস থেকে ওয়ান ম্যান ওয়ান জব নীতিতে ১ম শ্রেণির পিএসসি সুপারিশপ্রাপ্তদের পুনরায় বিসিএস থেকে নন ক্যাডারে সুযোগ বন্ধ করে বেকারদের চাকরির অধিকতর সুযোগ নিশ্চিত করেছেন।

– ৩৭ তম বিসিএস ভাইভাতে সাদিক স্যার ভাইভাপ্রার্থীদের মনোবল সঞ্চার করাতে ওয়েটিং রুমে এসে বলেছিলেন, “ভয়ের কিছু নেই, আমি সাদিকও একদিন এই ভাইভা ওয়েটিং রুমে বসেছিলাম, সেদিন আমার পাও কাপছিল।”
৩৮ তম ভাইভা বোর্ডের ওয়েটিং রুমে প্রার্থীদের মনে সাহস যুগাতে মজা করে বলেছিলেন, “আপনারা এতো আতংকগ্রস্ত কেনো! মনে হচ্ছে সবাইকে একটু পরেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে! ফেইস দ্যা ভাইভা ন্যাচারালি”।

– বিসিএস নিয়োগের দীর্ঘসূত্রীতা কমানো, বিসিএস লিখিত খাতা পুনর্পরীক্ষণ, প্রিলিমিনারীতে ইংরেজি ভার্শন চালুসহ পিএসসির বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তবুও দোষগুণেই একজন মানুষ। স্যার হয়তো অনেক কিছু সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন, অনেক পদক্ষেপ হয়তো অসম্পূর্ণ রেখেই দায়িত্ব হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন। চাকরীপ্রার্থীদের পক্ষ থেকে স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

দ্রষ্টব্য, পেশাজীবনে ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার একজন উচ্চপদস্থ আমলা হলেও, তিনি একজন স্বনামধন্য কবিও। তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

© রবিউল আলম লুইপা, বিসিএস (শিক্ষা), ৩৫ তম বিসিএস

Rate this post

প্রাসঙ্গিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page