জেলের ছেলে মিসবাহ এখন কানাডার নৌ কর্মকর্তা
বাঁশখালীর কাথারিয়া ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের সন্তান মিসবাহ উদ্দিন আরিফ। তার বাবা বদি আহমেদ একজন জেলে। সেই জেলের ছেলে মিসবাহ এখন কানাডার নৌ কর্মকর্তা।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সাহস ও আত্মবিশ্বাস যেকোনো বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যোগায়। যেমনি হয়েছে মিসবাহ উদ্দিন আরিফের জীবনে। একসময় সাগরপাড়ের বাসিন্দা হলে জলকদর খালের পানিতে নৌকায় চড়ে বাবার সাথে সময় কাটানো মিসবাহ উদ্দিন আরিফ গত ১৬ জুন কানাডিয়ান রয়েল নেভিতে ওয়ারফেয়ার অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ছোটবেলা থেকে অভাব আর দারিদ্র্যর সাথে বসবাস মিসবাহর। বাড়ির পাশে জলকদর খালের শাখা সোনাইছড়িতে মৎস্য শিকার করে যার জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তার পরিবারকে। সীমিত আয়ে ৭ সদস্যের পরিবার চালাবেন নাকি ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করবেন। একদিকে দিশেহারা পিতা বদি আহমদ অন্যদিকে পড়ালেখা করে পরিবারের পাশে থাকার দুর্দমনীয় সংকল্প আরিফের।
অভাব অনটন তাঁর সে স্বপ্নকে সাথী করে এগিয়ে যাওয়া মিসবাহ আজ পরিবারের স্বপ্ন। বাঁশখালী কাথারিয়া বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পাস করে পাড়ি জমান চট্টগ্রাম নগরীতে। ভর্তি হন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। মেধা তালিকায় ৯ম স্থান দখল করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি হয়। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন পেয়ে যান ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার যাওয়ার সুযোগ। একবছর আমেরিকায় থাকার পর দেশে ফিরে আসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন। যোগ দেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জিং কিছু করার বাসনা থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার পদে পরীক্ষা দেন। উত্তীর্ণ হওয়ার পর খবর আসে আমেরিকা থেকে স্কলারশিপসহ পড়ার সুযোগ। নৌবাহিনী ছেড়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার পর দক্ষ পাড়ি কানাডায়। কিছু দিনের মধ্যে কানাডার নাগরিকত্ব অর্জন করেন। কানাডার নৌবাহিনীতে পরীক্ষা দেন। নেভাল ওয়ারফেয়ার অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন।
আরিফের ব্যাজ প্রদান অনুষ্ঠানে, কানাডা সরকার তাঁর পিতা বদি আহমদ ও মাতা লুৎফুন্নিসাকে সেখানে নিয়ে যান। আরিফের পিতা বদি আহমদ বলেন, আমার ছেলের শিক্ষক বলেন, গাইড বলেন, বন্ধু বলেন আমিই ছিলাম। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের পিতামাতা প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা প্রাইভেট টিউটর রাখেন।
নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে মিসবাহ উদ্দিন আরিফ বলেন, শৈশবের বহুল স্মৃতিমাখা সেই কাথরিয়া সোনাইছড়ি খালে বাবার ডিঙি নৌকার দোল, আমাকে একজন নাবিক হওয়ার প্রেরণা দেয়।
তথ্য সূত্র : দৈনিক আজাদী, ৮ জুলাই ২০২৩