প্রথমবার বিসিএস রিটেন দিচ্ছেন? আপনার জন্য ১০ পরামর্শ
আগামী ৪ জানুয়ারি (২০২০) থেকে শুরু হবে ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। কয়েক মাস ধরে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, এ প্রস্তুতিকে ‘পরীক্ষা চলাকালীন শতভাগ কাজে লাগানো’ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহৃর্তে এবং পরীক্ষা চলাকালীন রিটেনে প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়া নতুন প্রার্থীরা সচরাচর যেসব ভুল করেন, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত রবিউল আলম লুইপা
১। লিখিত পরীক্ষার পাঁচ দিনে প্রার্থীকে সব মিলিয়ে ২১ ঘণ্টা উত্তরপত্রে লিখতে হবে। তাই পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করুন। সম্ভব হলে বাসায় বসে নমুনা প্রশ্ন দেখে ঘড়ি ধরে নিজে নিজে মডেল টেস্ট দিন। এ অভ্যাস পরীক্ষার হলে কাজে দেবে। পরীক্ষার খাতায় নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড, স্বাক্ষর (প্রবেশপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে) খেয়াল করে দিন। তাই পরীক্ষার নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে অবহেলা করবেন না। অতিরিক্ত খাতা নিলে সঙ্গে সঙ্গেই বৃত্ত ভরাট করুন (যেমন—একটা পাতা নিলে প্রথম বৃত্ত ভরাট করবেন)। প্রবেশপত্রের অপর পৃষ্ঠায় রাফ বা আঁকাজোঁকা করবেন না, এর জন্য বহিষ্কারও হতে পারেন। রাফ করার দরকার হলে অতিরিক্ত কাগজ নিতে পারেন।
২। পরীক্ষার হলে ‘সময় ব্যবস্থাপনা’ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব পারেন কিন্তু সময়ের জন্য লিখে দিয়ে আসতে পারেননি, এমন অনেকেরই হয়। এর জন্য প্রশ্নপত্রের প্রতিটি প্রশ্ন বা অংশের জন্য আগে থেকেই সময় নির্ধারণ করে রাখবেন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসায় মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় বুঝতে পারবেন—যে অংশের জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ রেখেছেন সেটা ঠিক আছে কি না আর আপনি সেভাবে কতটুকু পারছেন। ১০ নম্বর মানের দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখে একটিতে ৭, আরেকটিতে ৩ পাওয়ার চেয়ে দুটি প্রশ্নে সমান সময় দিয়ে ৬+৬ নম্বর তোলা অনেক ভালো। ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৩০-৪০ নম্বর উত্তর না করে বাকি ১৭০-১৮০ যত ভালোই লিখুন, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সময়মতো ২০০ নম্বরের উত্তর করতে পারলে তার চেয়ে বেশি নম্বর পাবেন। ২০০ নম্বরের ৪ ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য প্রতি নম্বরের জন্য ১.২ মিনিট এবং ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতি নম্বরের জন্য ১.৮ মিনিট সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি আপনার উত্তর কত পৃষ্ঠার হবে, সেটা আপনার হাতের লেখার ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ৫ নম্বরের জন্য ৬ মিনিট সময় পাবেন। পরীক্ষায় বেশি পৃষ্ঠা লেখার চেয়ে বেশি তথ্যসমৃদ্ধ লেখার চেষ্টা করুন।
৩। লিখিত পরীক্ষায় খাতায় উপস্থাপনটা যেন চমকপ্রদ হয়। হাতের লেখা যেমনই হোক, প্যারা করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। পরীক্ষার খাতায় সম্ভব হলে রাউন্ড স্কেলিং করুন। স্কেলিং, ছক, চিত্র অবশ্যই পেনসিলে দেবেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপনে নীল কালি ব্যবহার করুন। তাহলে সহজেই পরীক্ষকের চোখে পড়বে।
৪। প্রশ্ন যে আঙ্গিকেই থাকুক, মান ৫ হোক কিংবা ১০ হোক—প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে মূল বক্তব্যের সঙ্গে ভূমিকা ও উপসংহার থাকতেই হবে। যেমন—প্রশ্নে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর নাম লিখতে বলা হলো, প্রথমে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি কী, কবে দেওয়া হয়—এ সম্পর্কে দু-তিন লাইনের ভূমিকা লিখে তারপর সাতজন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। সঙ্গে দুই-তিন লাইনে তাঁদের অবদানের কথা লিখে উপসংহার টানুন।
৫। লিখিত পরীক্ষার কোনো একটি বিষয়ে পরীক্ষা খারাপ হলে অনেকেই পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় হাল ছেড়ে দেন কিংবা অংশ নেন না। এটা এক ধরনের বোকামি। মনে রাখবেন, বিসিএস বাছাই পরীক্ষার ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে ‘লিখিত পরীক্ষা’। কারণ জেনারেল ক্যাডারের জন্য ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৪৫০ নম্বর পেলেই ভাইভায় ডাক পাবেন। এখানে কোন বিষয়ে কত পেলেন সেটি মুখ্য নয়। তবে এটাও ঠিক, ৪৫০ নম্বর দিয়ে ক্যাডার পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। তবু দু-একটি বিষয় খারাপ হওয়ার পরও অন্য বিষয়গুলোতে টেনেটুনে পাস তুলে নন-ক্যাডারে চাকরি পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কী! প্রতিটি বিষয়ে ফুল আনসার করার চেষ্টা করবেন। কোনো প্রশ্ন কমন না পড়লে যতটুকু ধারণা আছে, লিখে আসুন।
৬। লিখিত পরীক্ষার আগের রাতে ফ্রেশ ঘুম (অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা হলেও) দরকার। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুম বাদ দিয়ে অনেক পড়াই পড়তে মন চাইবে। ওই সময়টায় চাপ না নিয়ে ব্রেনকে রিলাক্সে রাখুন। প্রশ্ন কমন না পড়লে যাতে নিজের জানাটুকু দিয়েই বানিয়ে লিখতে পারেন তার জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকুন। লিখিত পরীক্ষায় অযথাই দুশ্চিন্তা করবেন না। যা হওয়ার তা থেকে দুশ্চিন্তা আপনাকে রেহাই দেবে না, বরং আপনার প্রস্তুতিকে বিঘ্নিত করবে।
৭। যাদের কেন্দ্র থেকে বাসা অনেক দূরে, পরীক্ষার দিন পৌঁছতে গিয়ে যদি জ্যামে আটকে থাকতে হয়, তাহলে পরীক্ষার আগেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে! তাই সম্ভব হলে কেন্দ্রের কাছাকাছি আবাসন বা থাকার বন্দোবস্ত করতে পারলে ভালো হয়। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর গেলে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
৮। পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রতিটি রুমে ঘড়ি থাকে। হাতঘড়ি ও মোবাইল সঙ্গে নিয়ে গেলে হলের বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকতে হবে। অনেকে দেখা যায়, বাইরে দামি মোবাইল অনিরাপদে রেখে এসে কেন্দ্রে ঢোকার পর মোবাইল হারানোর টেনশন মাথায় নিয়ে পরীক্ষা দেন। পরিচিত কেউ সঙ্গে গেলে বাইরে তার কাছে মোবাইল রেখে ঢুকুন আর একা গেলে মোবাইল না নেওয়াই ভালো। গাণিতিক যুক্তি পরীক্ষায় শুধু সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে (সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না)। মানসিক দক্ষতা পরীক্ষায় সব রকমের ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ।
৯। যেদিন সকাল-বিকাল দুই বেলা পরীক্ষা হবে, পরীক্ষার বিরতিতে সেদিনের জন্য বাসা থেকে বক্সে করে ভারী কিন্তু সহজেই বহনযোগ্য খাবার নিয়ে যেতে পারেন। যা হলের বাইরে রাখতে পারবেন। দুপুরে সব পরীক্ষার্থী একসঙ্গে খাবারের জন্য বের হওয়ায় আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোয় খাওয়া সেরে নেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে, সময়ও নষ্ট হয়।
১০। লিখিত পরীক্ষায় আলাদা কোনো প্রবেশপত্র দেওয়া হয় না, প্রিলির প্রবেশপত্রই এখানে ব্যবহার করতে হয়। তাই আগে থেকেই দু-তিন কপি প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে রাখুন। একটি স্বচ্ছ ফাইলে সব স্টেশনারি সামগ্রী ও প্রবেশপত্র সব সময় রেডি রাখবেন।
পরীক্ষার সময় বাসায় পড়াশোনার জন্য আলাদা কলম, পেনসিল, ক্যালকুলেটর ব্যবহার করলে ভালো হয়। তাহলে প্রতিদিন পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে ক্লিয়ার ফাইল আর চেকিং করতে হবে না। বাসায় কিছু ফেলে এসেছেন কি না, বের হয়ে সেই দুশ্চিন্তাও হবে না।
সূত্র : কালের কণ্ঠ । ২১ ডিসেম্বর ২০১৯