বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে করবেন
বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে করবেন, অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করার পরও ‘ক্যাডার পছন্দক্রম’ বা ক্যাডার চয়েস করতে ভুল হলে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়ার সুযোগ যেমন ফসকে যেতে পারে, তেমনি ভাইভা বোর্ডেও অপ্রস্তুত প্রশ্ন শুনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং আবেদনের আগেই ঠিক করুন— আগে-পরে কোনটি চয়েসে রাখবেন। ক্যাডার চয়েস নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে কর্মরত মো. আনোয়ার হোসেন শামীম
অনলাইনে বিসিএসের আবেদনের সময় প্রার্থী স্নাতক পর্যায়ের সাবজেক্ট সিলেক্ট করার পরই তিনি তাঁর জন্য নির্ধারিত ক্যাডারগুলো দেখতে পাবেন। যে যে ক্যাডারে আপনার আবেদন করার যোগ্যতা আছে, তার সবগুলোই পছন্দক্রমে রাখুন। আর আপনি যদি কোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে থাকেন, তাহলে শুধু সে ক্যাডারগুলোই পছন্দক্রমে রাখবেন, যেগুলোতে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে আপনি নির্দ্বিধায় যোগ দেবেন।
বিসিএস ক্যাডার চয়েস বণ্টন : সঠিক ক্যাডার চয়েস ঠিক করার জন্য বিসিএসের ক্যাডারগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে (ক, খ, গ, ঘ) ভাগ করে নিতে পারেন—
ক. আইন প্রয়োগ ও প্রশাসনসংক্রান্ত :
১. পুলিশ ২. প্রশাসন ৩. আনসার
খ. অর্থ, বাণিজ্য, রাজস্ব ও আর্থিক প্রক্রিয়াসংক্রান্ত :
১. শুল্ক ও আবগারি (কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ)
২. কর (ট্যাক্সেশন)
৩. নিরীক্ষা ও হিসাব (অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস)
৪. বাণিজ্য (ট্রেড)
গ. অন্যান্য :
১. পররাষ্ট্র (ফরেন অ্যাফেয়ার্স)
২. খাদ্য (ফুড)
৩. রেলওয়ে
৪. পরিবার পরিকল্পনা (ফ্যামিলি প্ল্যানিং) ইত্যাদি
ঘ. পেশাগত : ১. স্বাস্থ্য ২. শিক্ষা ৩. কৃষি ৪. বন ৫. প্রকৌশল।
যদি আপনি—
— চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনার কর্মজীবনে দায়িত্ব পালন করতে চান।
— আইন প্রয়োগ, বিচার ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখায় আগ্রহী হন।
— অন্যায় প্রতিরোধ ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান।
— ‘ছুটি’ শব্দটি ভুলে কাজ করার বাস্তবতা মেনে নিতে পারেন।
— রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে জনগণকে সরাসরি সেবা দিতে চান।
তাহলে—
নিশ্চিন্তে আপনার ক্যাডার পছন্দক্রম হতে পারে— ক>খ>গ>ঘ।
অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দক্রমের প্রথম তিনটি ক্যাডার হবে পুলিশ, প্রশাসন ও আনসার। এ তিনটি ক্যাডারের মধ্যে আপনার পছন্দ ও বাস্তবতা বিবেচনায় ১, ২, ৩ ক্রম নির্ধারণ করুন। যেমন— ১. পুলিশ ২. প্রশাসন ৩. আনসার কিংবা ১. প্রশাসন ২. পুলিশ, ৩. আনসার… এরপর ৪, ৫, ৬… নম্বরে খ, গ, ঘ শ্রেণির ক্যাডারগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন।
(এ ক্ষেত্রে পছন্দক্রমে পররাষ্ট্র ক্যাডার রাখা অযৌক্তিকই হবে বলে মনে করি। কারণ প্রথম তিনটি ক্যাডার পছন্দ যেহেতু পুলিশ, অ্যাডমিন এবং আনসার, তাই এরপর পররাষ্ট্র ক্যাডার রাখা মোটামুটি অর্থহীন। পররাষ্ট্র পছন্দ দিতে চাইলে এক নম্বরে দেওয়াই উচিত বলে মনে করি)।
>> যদি আপনি—
১. ঝামেলামুক্ত কর্মজীবন চান।
২. নয়টা-পাঁচটা অফিস, এসি রুম…
৪. বেতনের বাইরেও প্রচুর বৈধ আর্থিক প্রণোদনা পেতে চান।
৫. বিদেশ ভ্রমণ, ট্রেনিং ইত্যাদির দিকে ঝোঁক থাকে।
তাহলে—
নিশ্চিন্তে আপনার ক্যাডারক্রম দিতে পারেন— খ>ক>গ>ঘ।
এ ক্ষেত্রে আপনি—
১, ২, ৩, ৪-এ ‘খ’ শ্রেণির চারটি ক্যাডারকে আপনার ইচ্ছামতো ক্রমিকে সাজিয়ে পছন্দক্রম দিন। অর্থাৎ এই চারটি ক্যাডারের মধ্যে যেটি বেশি ভালো লাগে বা যেটিতে যাওয়ার বেশি ইচ্ছা সেটি ১-এ, এরপরে যেটি বেশি প্রিয় সেটি ২-এ… এভাবে। ‘খ’ শ্রেণির এই চারটি ক্যাডার চয়েস দেওয়ার পর আপনি ‘ক’ শ্রেণির ক্যাডারগুলো দিয়ে তারপর ‘গ’ এবং ‘ঘ’-এর ক্যাডারগুলো পর্যায়ক্রমে পছন্দক্রমে নির্ধারণ করতে পারেন।
যদি আপনি—
১. আপনার একাডেমিক অর্জিত জ্ঞানকে সরাসরি পেশাগত কাজে লাগাতে চান।
২. অর্থবিত্তের (আমি বৈধ অর্থের কথা বলছি) বদলে সততাকে, ক্ষমতার বদলে সদাচারকে, কৃত্রিম অভিজাততন্ত্রের বদলে মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা লাভকে জীবনের চরম মোক্ষ জ্ঞান করে থাকেন, তাহলে—
আপনার ক্যাডারক্রম হতে পারে— ঘ>ক>খ>গ।
আপনি যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশে প্রতিনিধিত্ব করতে চান বা কূটনৈতিক উচ্চ মর্যাদা পেতে চান, তাহলে পররাষ্ট্র ক্যাডারকে প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখতে পারেন।
আগেই উল্লেখ করেছি, পররাষ্ট্র ক্যাডার সাধারণত অন্য সব ক্যাডারের আগেই পূরণ হয়ে যায়। তাই পছন্দক্রমে রাখতে চাইলে পররাষ্ট্র ক্যাডারকে এক নম্বরেই রাখা উচিত। অন্য ক্যাডার প্রথম পছন্দ দিয়ে পরের দিকে পররাষ্ট্র ক্যাডার রাখার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই, তবে এমনটি হলে মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষক পর্ষদের সদস্যদের কাছে আপনার চিন্তার অপরিপক্বতা ও ক্যাডার পছন্দসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতা প্রকাশ পাবে।
আপনি চাইলে বিভিন্ন শ্রেণির মিশ্রণেও ক্যাডার পছন্দক্রম নির্ধারণ করতে পারেন (বেশির ভাগ প্রার্থী এটাই করেন)। যেমন—১. প্রশাসন (ক শ্রেণি), ২. কর (খ), ৩. শুল্ক ও আবগারি (খ), ৪. আনসার (ক), অথবা ১. পুলিশ (ক শ্রেণি), ২. প্রশাসন (ক), ৩. শুল্ক ও আবগারি (খ), ৪. খাদ্য (গ), এভাবে ৫, ৬, ৭…
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯