৪০ তম বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি

Rate this post

৪০ তম বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি নিয়ে অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন–আমি ভাইভাতে কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। যেহেতু সামনে ৪০ তম বিসিএস প্রার্থীদের ভাইভা আছে তাই আমি আমার প্রস্তুতি সম্পর্কে এখানে কিছু ধারনা দেবার চেষ্টা করব।

এখানে বলে রাখা ভালো, এটা যেহেতু আমার প্রথম ভাইভা ছিলো তাই এই অল্প সময়ে কি পড়তে হবে কিছুই যখন বুঝতে পারছিলাম না তখন অল্প পড়ে কিভাবে ভালো ভাইভা দেয়া যায় সেই চিন্তা করছিলাম এবং সেই অনুযায়ী একটা প্ল্যান রেডি করলাম।  রিটেনেও যতটা সম্ভব শর্টকাট প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তাই যারা অনেক বেশি পড়তে পছন্দ করেন বা অনেক জানেন তারা এই লেখা পরিহার করে যাবেন। যারা প্রথমবার ভাইভা দিবেন, এবং শেষ সময়ে এসে কিভাবে প্ল্যান করতে হবে তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন এটা শুধু তাদের জন্য।

প্রথমেই আমি টপিকগুলো আলাদা করে নিয়েছিলাম। যেমন-
১. নিজের সম্পর্কে
২. ক্যাডার চয়েস সম্পর্কে
৩. ক্যাডার সম্পর্কে
৪. মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
৫. নিজ জেলা সম্পর্কে
৬. নিজ সাবজেক্ট সম্পর্কে
৭. সাম্প্রতিক
৮. আন্তর্জাতিক
৯. সংবিধান


নিজের সম্পর্কেঃ
এখানে শুরুতেই  একটা প্রশ্ন থাকে “Introduce yourself” অথবা নিজের সম্পর্কে বলো। এই উত্তরটা খুব সুন্দর করে নোট করে নিতে হবে বাংলা- ইংরেজি দুইটাতেই । নিজের নাম, জন্মস্থল, বর্তমানে কী করছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, অন্য কোনো যোগ্যতা, দক্ষতা বা কোন বিষয়ে আগ্রহ আছে কিনা, জীবনের উদ্দেশ্য / লক্ষ্য বা ক্যারিয়ার প্ল্যান কী এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আজ এখানে ভাইভা দিতে এসেছেন এইভাবে ব্যাপারটা সাজিয়ে লিখবেন। এখানে কিন্তু কেন সিভিল সার্ভিসে আসতে চান সেই প্রশ্নের উত্তরও চলে আসে। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি হয়ে যাবে।
নিজের পরিবার সম্পর্কে কিছু বলো, জেলা/গ্রাম সম্পর্কে কিছু বলো ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর রেডি করে রাখতে হবে।


ক্যাডার চয়েস সম্পর্কেঃ
চয়েসগুলা মুখস্ত করে রাখা। প্রথম চয়েস কেন দিয়েছি, বা পুলিশে/ এডমিনে/ ফরেনে কেনো আসতে চাই, ২য়/৩য় বা শেষে এটা কেন দিয়েছি ইত্যাদি রেডি করে রাখা।


ক্যাডার সম্পর্কেঃ
এখানে প্রথম যেই চয়েসটা দিয়েছি সেটা সম্পর্কে বেসিক ধারনা নেয়া। হয়ত অনেক কিছুই উত্তর দেয়া সম্ভব হবে না। তবে বেসিক কোনো প্রশ্নের উত্তর না করতে পারাটা নেগেটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করে। আর অবশ্যই এই অংশটা যতটা সম্ভব ভালো করে পড়তে হবে। কারন পছন্দের ক্যাডার সম্পর্কেই যদি ভালো ধারনা না থাকে তাহলে সেখানে চাকরি করবেন কিভাবে! তাই এইটায় আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। [যদিও এখান থেকে আমাকে একটাও প্রশ্ন করা হয়নি।]  আরেকটা ব্যপার গাইড থেকে হুবহু উত্তর মুখস্ত করা যাবে না। নিজের মত উত্তর দিতে হবে।


মুক্তিযুদ্ধ অংশঃ
মুক্তিযুদ্ধের বেসিক আগে জানতে হবে। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে জানার কোনো শেষ নেই। তাই আপনি আপনার সাধ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিবেন। ভাইভা বোর্ডে সব পারতে হবে এমন কথা নেই। আমি প্রথমেই বেসিক অংশটুকু পড়ে তারপর সময় অনুযায়ী আরো অংশ বাড়িয়েছিলাম।


মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর, কমান্ডার, বীরশ্রেষ্ঠ,  ৬ দফা, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, মুজিবনগর সরকার, ১০ জানুয়ারি,  ১৯৭৫ সাল, বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখতে হবে। তবে কোনো কিছুই বইয়ের মত মুখস্ত করা যাবে না। বোর্ডে নিজের মত উত্তর দেয়ার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
এখান থেকে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ৩ মিনিট ইংরেজিতে বলো।” 


নিজ জেলা অংশঃ
আপনার জেলার পরিচয়, ইতিহাস,  মুক্তিযুদ্ধ, বিশেষ ব্যাক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, ঐতিহাসিক মূল্য, পর্যটন ইত্যাদি। 


সাব্জেক্টিভ অংশঃ
এখান থেকে আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিলো।  যেহেতু সাব্জেক্টিভ এর কোনো শেষ নেই তাই এখানেও বেসিক অংশটুকু আগে পড়তে হবে। যেমন আমার সাব্জেক্ট সমাজবিজ্ঞান এর Introduction to sociology নামে কোর্স ছিলো সেটাই আমাদের বেসিক বলে ধরি আমরা।  আবার রিসার্চ সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। আর এই দুইটা জায়গা থেকেই আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো।  তবে, বোর্ডে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য এমন জায়গা থেকে প্রশ্ন করবে যা আপনি কখনোই শোনেন নি। তাই এইসব প্রশ্ন নিয়ে অযথাই টেনশন করার দরকার নেই। জাস্ট সরি স্যার বলে যাবেন।

সাম্প্রতিক অংশ :
এটা আমার কাছে সবচেয়ে ভেজালের জায়গা ছিলো। বাংলাদেশ সরকার ও তার পলিসি সম্পর্কে ভালো ধারনা নিতে হবে। যেমন প্রধানমন্ত্রী কী করেন, কোথায় ভ্রমন করেন, কার সাথে কী চুক্তি করেন ইত্যাদি। ভিশন ২১, রূপকল্প ৪১, ব্লু ইকনমি, ইত্যাদি।
আপনি যদি নারী প্রার্থী হন তাহলে অবশ্যই নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি জেনে যাবেন।

আন্তর্জাতিক অংশ :
জাতিসংঘ, বাংলাদেশ -চীন, বাংলাদেশ -ভারত, বাংলাদেশ- পাকিস্তান সম্পর্ক পড়ে রাখবেন। বাকি সব না পারলে নাই। তবে ফরেন ক্যাডার এর জন্য এই অংশটা অবশ্যই ভালো করে পড়তে হবে।

সংবিধানঃ সরকারি চাকরি সংক্রান্ত ধারাগুলো, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ধারাগুলো, মূলনীতি, মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত, বাজেট সম্পর্কিত ধারাগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
তবে ভাইভা বোর্ডে আপনি কখনোই পুরোটা উত্তর করতে পারবেন না সেইভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। বোর্ডে ভালো করার জন্য আপনাকে কখনোই পুরোটা উত্তর পারতে হবে না। বরং নিজেকে স্বাভাবিক রাখবেন, কনফিডেন্ট থাকবেন, পরিপাটি হয়ে যাবেন। অবশ্যই ভাইভা বোর্ডে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলবেন। এটা আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। সবসময় পজেটিভ থাকবেন, অযথাই তর্ক করা যাবে না এবং যথাসম্ভব পোলাইট থাকতে হবে।

লিখেছেন : নাসরিন, সহকারি কমিশনার (প্রশাসন), ৩৮তম বিসিএস

(ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত)

এডু ডেইলি ২৪

Education, News and Information-based portal

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *