৪১তম বিসিএস প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন

© গাজী মিজানুর রহমান

৪১তম বিসিএস প্রস্তুতি যদি পরিকল্পিতভাবে ঠিকঠাক করা যায়, তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীদের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। বিসিএসে ২ ধরনের পরীক্ষার্থী থাকে, তাহলে দুই ধরনের পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি দুই ধরনের হওয়া উচিত। যেমন, সব রোগের জন্য কেবল নাপা খেলে কাজ হবে না।
বিসিএসে এই ধরনের পরীক্ষার্থীর একটি হলো- একেবারে নতুন (যারা প্রথমবারের মতো ৪১তম বিসিএস দিবেন)।

*আরেক ধরনের পরীক্ষার্থী আছে, যারা এর আগেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। মানে অভিজ্ঞ বা কিছুটা অভিজ্ঞ।

এখন প্রথমে আসি যারা একেবারে নতুন, মানে ৪১তম বিসিএস হবে প্রথম বিসিএস, তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন-

  • Step-1: প্রথমে আপনি বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখুন। বিসিএসে কী ধরনের প্রশ্ন হয় ধারণা পেয়ে যাবেন এবং বিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমনও পাবেন পরীক্ষায় প্রশ্ন রিপিট হলে।
  • Step-2: এরপর আপনি “BCS Preliminary Analysis” বইটির A-Z ভালোভাবে বুঝে বুঝে শেষ করুন অন্তত দুইবার। এই বইটি শেষ করলে বিসিএস প্রিলি সম্পর্কে আপনি একেবারে ক্লিয়ার হয়ে যাবে, বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার যে ভয়ডর আছে তা কেটে যাবে এবং নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।
    *Step-3: এরপর বাজার থেকে যে কোনো বিসিএস সিরিজের ভালো বইগুলো পড়ুন।
  • Step-4: তারপর আপনি বাজার থেকে বিসিএসের ভালো মানের একটি/দুটি মডেল টেস্ট “BCS Real Model Test” বইটি ও সাথে অন্য যে কোনো ভালো মানের আরেকটি মডেল টেস্ট বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন) নিয়ে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয়টি ভালোভাবে শেষ করুন, সেই বিষয়টিতে জোর দিন।
    আরো কিছু পরামর্শ :
    বিসিএস প্রিলির যে কোনো ভালো সিরিজের ভালো বইগুলো পড়ুন এবং “BCS Preliminary Analysis” বইটি ভালোভাবে শেষ করে ফেলুন। (কারণ “BCS Preliminary Analysis” বইটি কেবল BCS এর Important টপিকগুলো দিয়ে সাজানো। পরীক্ষায় তাই অনেক বেশি কমন পাবেন। যেমন, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় BCS Preliminary Analysis বইয়ে থেকে Directly এবং Indirectly ১১২টি প্রশ্ন কমন এসেছে এতো কঠিন প্রশ্নের মাঝেও)

    এছাড়া যে কাজটি করবেন, ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯-১০ শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ এবং বাংলা ব্যাকরণ বইটি সাথে রাখবেন।

দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই। তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন।
আর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।
* এবার আসি অভিজ্ঞদের প্রস্তুতির বিষয়ে। আপনারা যেহেতু এই পর্যন্ত এক বা একের অধিক বার পরীক্ষার দিয়েছেন, আপনারদের বলার তেমন বেশি কিছু নেই। যেহেতু আপনার অনেক কিছু জানেন বলে ধরে নিলাম। তারপরও কিছু কথা না বললেই নয়-

যেহেতু ৪১তম বিসিএস স্পেশাল হচ্ছে না, এখন পর্যন্ত যা শোনা যাচ্ছে। যদিও আগে শোনা গিয়েছিল স্পেশাল হবে, তবে এখন আর স্পেশাল হচ্ছে না। সাধারণ বিসিএসে MCQ+Written+ Viva হয়, সেখানে MCQ নাম্বার যোগ হয় না, কেবল পাশ করলেই হয়। এই ক্ষেত্রে সাধারণত ১২০ নাম্বার “সেইফ জোন” ধরা হয় প্রিলিতে।
আপনি MCQ বেশি নাম্বার ফেলেও তা যোগ হবে না।

আপনার প্রস্তুতি যখন শেষ দিকে আসবে, আমি বলবো আপনাদের যেহেতু আগের কিছু প্রস্তুতি আছেই আপনারা বেশি বেশি MCQ পড়ুন। মানের বাজার থেকে ভালো মানের ২-৩টি মডেল টেস্ট বই কিনে MCQ গুলো পড়ে ফেলুন। কারণ ভালো মানের মডেল টেস্টগুলোতে কেবল Important প্রশ্নগুলো থাকে, যেখান থেকে পরীক্ষায় অনেক কমন পাওয়া যায়। সেজন্য আপনি ‌‘BCS Real Model Test”, ‘প্রফেসর’স মডেল টেস্ট’ বা ভালো মানের অন্য যে কোনো মডেল টেস্ট পড়তে পারেন।
তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয়টি ভালোভাবে শেষ করুন, সেই বিষয়টিতে জোর দিন।
বিসিএস প্রিলির যে কোনো ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং “BCS Preliminary Analysis” বইটি ভালোভাবে শেষ করে ফেলুন।

এছাড়া যে কাজটি করবেন, ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯-১০ শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ এবং বাংলা ব্যাকরণ বইটি সাথে রাখবেন।
দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন (প্রথম আলো বেস্ট মনে হয় আমার কাছে)। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই। তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন।

আর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।

আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, এখন বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আগের মতো গতানুগতিক বই পড়ে কিংবা গতানুগতিক টেকনিক অবলম্ব করে খুব একটা ভালো সাফল্য আশা করা যায় না। প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা দুটির যেহেতু বেশি, তাই সাফল্য পেতে হলে পড়াশোনা করতে হবে ব্যতিক্রমভাবে ও কার্যকর টেকনিক অবলম্বন করে।

ইনশাল্লাহ, এইভাবে পড়লে ভালো কিছু হবে।

মনে রাখবেন, মাঝখানের এই সময়টুকু ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। আপনি হয়ে যেতে পারেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন ক্লাস ওয়ান ক্যাডার অফিসার। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন এবং Important বিষয়গুলোর বেশি জোর দিন; যেন পরীক্ষার হলে গেলে Confused না হন।

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।

সকল পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।

গাজী মিজানুর রহমান
* ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার
* সাবেক সিনিয়র অফিসার
(পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)
* সাবেক সহকারী শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
(৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার)
* ১০ম NTRCA (প্রভাষক)
* সাবেক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক: BCS টেকনিক
(BCS স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম)
* লেখক: BCS Preliminary Analysis
(বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক BCS প্রিলির পূর্ণাঙ্গ বই)
* লেখক: প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis (বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক প্রাইমারি নিয়োগ বই)