আনারস সংরক্ষণে নেই হিমাগার, বেড়েছে চাষীর সংখ্যা

আনারস সংরক্ষণে নেই হিমাগার, বেড়েছে চাষীর সংখ্যা
এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারসের সুনাম ও খ্যাতিকে দিনকে দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উৎপাদিত আনারস। কাপাসিয়ার গ্রামগুলো যেন আনারস চাষের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দেশজুড়ে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে এখানকার উৎপাদিত আনারস। গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফলকে টেক্কা দিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে কাপাসিয়ার আনারস। এরই ধারাবাহিকতায় দিন দিন বেড়েই চলেছে আনারসের চাষ। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও রসালো ফল আনারস এখন শোভা পাচ্ছে কাপাসিয়ার সর্বত্রই। এখানকার পতিত জমিগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে আনারসের বাগান। আনারস ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। কয়েক বছর আগেও যেখানে লাল মাটির উঁচু (টিলা) আকৃতির পতিত জমিগুলো ছিল আগাছায় ভরা। তেমন কোনো ফসল ফলানো যেত না, একপ্রকার অকেজো ছিল এসব জমি। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। লাল মাটির উঁচু (টিলা ) আকৃতির এসব জমিগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আনারসের বাগান। এখানকার কৃষকরা আগাম জাতের আনারস চাষ করেন, যা স্বাদেও অনন্য। আরো আগে থেকেই কাপাসিয়ার প্রায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা আনারস চাষ করতেন। সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে আনারস চাষের চিত্র। কয়েক বছর ধরে উপজেলার রায়েদ, টোক ও বারিষাব ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে আনারস চাষের ব্যাপকতা বেড়েছে। আর এসব জমিতে স্থানীয় জলঢুব ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ হয়। এখানকার কৃষকরা জানিয়েছেন ধান ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে আনারস চাষ লাভজনক। আনারস চাষে শুধু ফলই পাওয়া যায় না সাথে পাওয়া যায় চারাও। আর সেখান থেকে চারা বিক্রি করেও বাড়তি আয় করা যায়। সম্প্রতি কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর নতুন করে আনারস চাষীদের সংখ্যা বেড়েছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই এখানকার নতুন নতুন চাষিরা আনারস চাষে নিজেদের যুক্ত করছেন। আখ চাষের পাশাপাশি আনারস চাষে মজেছেন তারা। বিশেষ করে বারিষাব ইউনিয়নের পতিত পড়ে থাকা জমিগুলো আনারস চাষের আওতায় এসেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উঁচু যে কোন জমিতে আনারসের ফলন ভালো হয়। যেহেতু এখানকার প্রতিটি ইউনিয়নেই উঁচু জমি রয়েছে। আর সেসব উঁচু জমিগুলো এখন আনারস চাষের আওতায় এসেছে। এ বিষয়ে আনারস চাষের সাথে যুক্ত কৃষকদের ভাষ্য, আনারস চাষে খুব বেশি রোগবালাই নেই। কাপাসিয়ায় চাষ করা আনারসের জলঢুব জাতটি অন্য আনারসের তুলনায় বেশ আগেই পাকা শুরু করে। ফলে বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে দেশের অন্যান্য এলাকার আনারসের চেয়ে কাপাসিয়া উৎপাদিত আনারসের মিষ্টতা অনেক বেশি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের জলপাইতলা বাজার বর্তমানে কাপাসিয়ার অন্যতম বাজারে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আনারস বিক্রির কারণে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আশেপাশের গ্রামের চাষিরা কেউবা ভ্যানগাড়িতে, অটোরিকশায় সাইকেল এবং মাথায় করে আনারস নিয়ে ছুটে আসেন এই বাজারে। প্রতিদিন আমরাইদ, টোক, লোহাদি, বারাব, বীর উজলী, ডুমদিয়া, কেন্দুয়াব, বেলাশী, গিয়াসপুর, বড়দিয়া, নরসিংহপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ আনারস এই বাজারে আসে। স্থানীয় আড়ৎদারদের পাশাপাশি রাজধানীসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররাও এখানে ভিড় করেন। বাজারজুড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার পিস আনারস। দাম নির্ভর করে আনারসের সাইজের উপর। বড় আকৃতির আনারস প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি আকৃতির আনারস ১৫ থেকে ২০ টাকা ও ছোট আকৃতির আনারস ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। এই বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ জন আড়ৎদার প্রতিদিন সক্রিয়ভাবে কেনা-বেচায় অংশ নেন। রাজধানী থেকে আসা ক্রেতা হৃদয় জানান, জলপাইতলা বাজারে দাম নাগালের মধ্যে এবং আনারসের মানও ভালো। প্রতিদিন সকালে চলে আসি এই বাজারে আনারস ক্রয় করতে। আনারস বিক্রেতা ফরিদ মিয়া জানান, আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় বাজারে আনার আগে আনারস নষ্ট হয়ে যায়। কাপাসিয়ায় একটা কোল স্টোরেজ (হিমাগার) থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচা যেত। এখানকার চাষী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আনারস সংরক্ষণ করা। কারণ পাকা আনারস বাগানে বেশি দিন রাখা যায় না। বিশেষ করে বর্ষার সময় সংরক্ষণের অভাবে বহু আনারস পচে যায়। তারা আরো বলেন, কাপাসিয়ার আনারস হতে পারে দেশের শীর্ষ কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক সম্পদ। তবে তা বাস্তবায়নের প্রয়োজন কোলস্টোরেজ। এছাড়াও আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও চাষীদের ঋণ সহায়তা কর্মসূচি দরকার। এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার বসাক বলেন, এখানকার চাষীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এই উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। ##### সবুজ/গাজীপুর/ ১৭ জুন ২০২৫ ইং

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24 Senior Reporter

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.