তারাবির নামাজের নিয়ম, রাকাত, নিয়ত ও দোয়া

রমজান মাসে এশার নামাজের ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নতের পর এবং বেতের (৩ রাকাত) নামাজের আগে শুরু হয় তারাবির নামাজ। ২ রাকাত করে ১০ বার তাশাহুদ অথাৎ ১০ বার সালাম ফিরানোর মাধ্যমে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ বা তারাবিহ আদায় করতে হয়।

 

আমাদের দেশে সাধারণত এক নাগাড়ে তারাবিহ নামাজ পড়ানো হয়ে থাকে। তবে নিয়ম হচ্ছে- শরীর সহনীয় অবস্থায় ধীরে ধীরে তারাবিহ নামাজ পড়া।

একনজরে :
– এশার ৪ রাকাত সুন্নত।
– এশার ৪ রাকাত ফরজ।
– এশার ২ রাকাত সুন্নাত।
– এশার ৩ রাকাত বেতের।
– তারাবির নামাজ ২ রাকাত-২ রাকাত করে ২০ রাকাত, এর মধ্যে ৪ রাকাত পর পর দোয়া

 

তারাবিহ নামাজের নিয়ত

উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআ’লা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা *** মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তাহলে *** চিহ্নের জায়াগায় ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।

অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।

যাদের আরবী উচ্ছারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না। তারা বাংলায় বলবেন ‘আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার’। এটা বলেই নিয়্যত করতে পারবেন।

তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাত পরপর দোয়া

প্রত্যেক ২ রাকাত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দোয়াগুলো ৫ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়। কিন্তু তারাবির যে দোয়াটি বর্তমানে জারি আছে, এই দোয়াটি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি-

দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়াানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

 

তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাত পরপর মোনাজাত

৪ রাকাত পর পর মোনাজাত করা যায়, আবার একেবারে নামাজ শেষ করেও একবারেই মোনাজাত করা যায়। তারাবিহ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। আমরা সব সময় নামাজের ক্ষেত্রে যে সব দোয়া পড়ে থাকি এগুলো পড়লেই হয়। তারপরও বহু পূর্বে কোনো বুজুর্গ বর্তমানে তারাবিহতে পঠিত দোয়া প্রচলন করেছেন; যার অর্থ ভাল এবং উত্তম বিধায় তারাবির নামাজে এই দোয়াটি পড়া হয়।

দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউ’জুবিকা মিনান্নারী, ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারী, বিরহতিকা ইয়া আজিজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া বার্র। আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান্নার; ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযির। বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।

অতঃপর-
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।

 

তারাবির নামাজ বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

১। তারাবির নামাজ কত রাকাত?
উত্তর: তারাবির সালাত দুই রাকআত দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবির নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট করা হয়নি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবির পড়েন।

২। তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল?
উত্তর: তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

৩। খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীহ কি?
উত্তর: বাংলাদেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।

 

নামাজ শিক্ষা ও সূরা (App) ডাউনলোড করুন >> CLick

 

আরো পড়ুন >>
নামাজের দোয়া ও সূরা (বাংলা অনুবাদসহ)
সহজ নামাজ শিক্ষা
* রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২১