বিষয়ভিত্তিক আলোচনা : বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন

বিল্ডিং মেটেরিয়াল বা নির্মান সামগ্রী বলতে সহজেই বলা যায় কোন নির্মানে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীকেই। সেটা রড, সিমেন্ট, ইট, বালু থেকে শুরু করে টাইলস, গ্লাস, কাঠ বা রং সবকিছু মিলিয়েই।
তবে নির্মান সামগ্রী বললে আমাদের চোখের সামনে যে দুটো জিনিষ ভেষে উঠে তা হলো রড এবং সিমেন্ট। এই দুটো হলো load bearing material বা যে নির্মান সামগ্রীটি স্থাপনার ভার বহন করার মূল দায়িত্বটি পালন করে। এই রড এবং সিমেন্টের ভার নেয়ার ক্ষমতার ক্ষেত্রে উন্নত এবং অনুন্নত দেশের নির্মান সামগ্রীর মধ্যে একটা বিস্তর ফারাক দেখা যায়। যেখানে আমরা বাজারে বর্তমানে ৭৫ গ্রেডের রড ব্যাবহার করছি সেখানে দেখাযায় উন্নত বিশ্বে ৫০০ গ্রেডের রডও ব্যাবহার হচ্ছে। এটার মূল কারন আমাদের দেশে এখনো ওই মানের রড ব্যাবহার করার ক্রেতা তৈরী হয়নি। একই অবন্থা দেখা যায় সিমেন্টের ক্ষেত্রেও। যেখানে আমরা সিমেন্টের strength ধরি ৩০০০ psi সেখানে উন্নত বিশ্বে এর মান ৮০০০ psi পর্যন্ত হয়।
(psi- pound per square inch.)
নির্মান সামগ্রীর এই strength বৃদ্ধি করার জন্যে অবশ্য উন্নতদেশগুলোতে প্রচুর গবেষনাও হচ্ছে। আসবিক শক্তি স্তরে দেখা যায় এই ইস্পাতের শক্তি প্রায় ৪০০০ ksi পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে এসব এখনো গবেষনার পর্যায়ে রয়েছে।
অবশ্য আমাদের মতো দেশগুলোতে জন্যে স্বল্প খরচের নির্মানসামগ্রীগুলো নিয়েও গবেষনা চলছে। যেমন দেখা যায় কংক্রিটের জন্যে আমরা যে পাথর ব্যাবহার করি সেটা কিন্তু টেকসই না। কারন পাথর সংগ্রহের জন্যে হয়তো পাহাড় কেটে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। আবার দেখা যায়, ইট তৈরী করার জন্যে মাটির উপরের স্তরের দুই ফিট মাটি কেটে ব্যবহার করা হয়। কিন্ত এই দুই ফিট মাটি ধান চাষের জন্যে খুবই প্রয়োজনীয়। তাই এভাবে ইট তৈরীতে মাটির ব্যাবহার আমাদের মতো দেশের জন্যে খুব একটা সুখকর নয়।
এক্ষেত্রে আমরা বাশ বেত এর মতো material গুলো ব্যাবহার করতে পারি। এতে করে আমাদের নির্মানের খরচ কমে যাবে এবং তা পরিবেশের বিরুপ প্রভাবও কমাবে। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে এইসব পচনশীল দ্রব্য ব্যাবহারের আগে সেগুলোকে পচনশীলতার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাবস্থা করতে হবে।
শুধু কংক্রিটের সময় ইটের বদলে বাশ-বেত নয়, দেয়ালের ইটের বদলেও পার্টটেক্স বা ফ্লাইউড অখবা হলো ব্রিক ব্যাবহার করা যেতে পারে। এতে করে স্থাপনার ভার যেমন কমবে একই সাথে ইটের ব্যাবহারও হ্রাস পাবে।
এমনটাই বলছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ.এম.এ মাহজুজ। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই Low Cost Building Construction এর উপর গবেষনা করে আসছেন।
তিনি জানান, রডের বদলে এমন কোন কম খরচের material ব্যাবহার করা সম্ভব নয় যা প্রায় কাছাকাছি ভার বহন করতে পারবে। তাই আমাদের দেশে খরচ বাঁচানোর জন্যে অনেক সময স্বল্প খরচের নির্মানের ক্ষেত্রে ট্রায়াঙ্গেল কলাম ব্যাবহার করা হয়। এতে রডের মূল যে ভার বহন ক্ষমতা সেটি হ্রাস পায়।
এইচ.এম.এ মাহজুজের মতে এক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো যদি তাদের কলামের অভ্যন্তরে বাশ ব্যাবহার করে তাহলে অন্তত ট্রায়াঙ্গেল কলামের চাইতে তা ভালো ফল দিবে। কারন বাশের compressive strength কংক্রিটের প্রায় কাছাকাছি। তাই যদি বাশের পচনশীলতা রক্ষা করে ব্যাবহার করা যায় তাহলে তা ১০বছর পর্যন্ত টিকে যাবে যা low cost building এর মূল চাহিদাকে পূর্ণ করে।
এতো গেলো নির্মান সমগ্রীর কথা। স্থাপনা নির্মানের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে আছি।যেমন আমরা দেখি কোথাও কোন স্থাপনা তৈরী হতে থাকলে এর আশপাশে রাস্তা দখল করে বালু বা ইট জমা করে রাখা হয়েছে। রাস্তার উপর কংক্রিট মেশানো হচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এই ধারনাটি অনেকটাই বিলুপ্ত। সাধারন মানের যেকোন স্থাপনার সব সামগ্রী ওই স্থানে জড় করে তৈরী করার চেয়ে তারা পছন্দ করে pre-cast construction কে। Pre-cast construction মানে হলো কলাম বিম দেয়াল বা অন্যান্য অংশ আগে থেকেই তৈরী করে এনে শুধু স্থাপনা নির্মানের স্থানে জোড়া দেয়া হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রচেষ্টা নেয়া হয়নি এখনো। এটি করা হলে এই pre-cast industry একটা সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তৈরী হতে পারে। একই চিত্র bonding jumper ব্যাহারের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। চীনে বা জাপানে প্রায় সব স্থাপনাতেই ভুমিকম্প প্রতিরোধের জন্যে এই jumper ব্যাবহার করা হয় বিম আর কলামের জয়েন্টে। আমাদের দেশে মহাখারী ফ্লাইওভারের নিচেও এই jumper দেখা্ যায়। এটি ব্যাবহারে ভুমিকম্প ঝুকি অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু আমাদের নির্মানের ক্ষেত্রে এর একবারেই ব্যাবহার নেই।
তাই আমাদের নির্মানের সামগ্রী আধুনিকায়নের পাশাপাশি প্রয়োজন এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিগুলোর অনুপ্রবেশ। এবং আসন্ন কনফারেন্সে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে।
[ Study Level : BSc in Environmental Technology and Construction Engineering ]
লিখেছেন : সাঈদ তাশনিম মাহমুদ, শাবিপ্রবি