প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ভাইভা প্রশ্ন ও পরামর্শ
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ভাইভা প্রশ্ন ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা (১ম ধাপ) ১২ জুন ২০২২ তারিখ থেকে শুরু হবে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
সহকারী শিক্ষক পদে আমি দুইবার ভাইবা দিয়েছি এবং দুইবারই চূড়ান্ত রেজাল্টে রোল এসেছে। এছাড়া পিএসসি-সহ আরো কিছু জায়গায় ভাইবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বুঝেছি তা হলো প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা অন্য জবের ভাইবা থেকে একেবারেই আলাদা। এটা একটা রিলাক্সড ভাইবা। আপনি পারবেন না এমন প্রশ্ন সাধারণত করা হয় না। তারপরও সব তো আর মনে থাকে না তাই সহজ প্রশ্নের উত্তরও অনেক সময় মনে আসে না। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই হাসিমুখে বলবেন সরি স্যার। তারপরও যেহেতু ভাইবা দেবেন মনে কনফিডেন্স যাতে বেশি থাকে তাই কিভাবে নিজেকে ভাইবার জন্য প্রস্তত করবেন সে বিষয়ে লিখছি। ভালো লাগলে ফলো করতে পারেন,মন্দ লাগলে স্কেইপ করার অনুরোধ রইল।
ভাইবার নম্বর ও বন্টন
আপনি ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন।এখন ভাইবা হবে ২০ নম্বরের।ভাইবায় পাশ করলে টোটাল ১০০ নম্বরের মধ্যে আপনি কত পেলেন তার অালোকে চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে।ভাইবার ২০ নম্বরের বন্টন সাধারণত নিম্নরূপ হয়ে থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ঘটতেও পারে।
** বোর্ডে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য ৫ নম্বর।
** অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের উপর ৫ নম্বর।
** আপনার জ্ঞান (নিজ সাবজেক্ট ও অন্যান্য বিষয়)যাচাই ৫ নম্বর।
** নাচ,গান,অভিনয়,কবিতা আবৃত্তি,খেলাধুলার। দক্ষতা ৫ নম্বর।
ভাইবা বোর্ড
সাধারণত ডিসি স্যারের নেতৃত্বে ডিপিইও স্যার ও সরকারি কলেজের একজন প্রফেসর স্যার বা সহযোগী অধ্যাপক স্যার কে নিয়ে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি চমৎকার ভাইবা বোর্ড গঠন করা হয়ে থাকে।বোর্ড খুবই অান্তরিক ও হেল্পফুল থাকে তাই ভয়ের কোন কারণই নেই।
ভাইবা ড্রেস
ভাইবা বোর্ড আপনার পোশাক, অ্যাপিয়ারেন্স, এক্সপ্রেশন, এটিকেট এবং ম্যানার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব নজর দিয়ে থাকেন।তাই একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আপনি ভাইবার জন্য উপযুক্ত ফরমাল ড্রেস নির্বাচনে মনোযোগী হোন।
ছেলেদের ড্রেস
শার্ট:সাদা ফুল শার্ট।সাদার উপরে যেকোন স্ট্রাইপ হলেও চলবে।অন্য রঙের মানানসই শার্টও পরতে পারেন।শার্টে একটি পকেট থাকলে ভালো হয়।পকেটে একটি কলম রাখবেন।প্যান্ট:কালো রঙের ফরমাল প্যান্ট পরিধান করুন।হাত ঘড়ি,বেল্ট ও জুতা:চামড়ার ফিতার ফরমাল হাত ঘড়ি,জুতা ও প্যান্টের সাথে ম্যাচ করে কালো রঙের চামড়ার বেল্ট পরিধান করুন।কাল রঙের,রাবারের সোলযুক্ত ফরমাল সু পরিধান করবেন।
টাই পরার প্রয়োজন নেই। যারা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরতে চান, সাদা রঙের পরতে পারেন।
- ভাইবার ৫-৬ দিন আগে চুল কাটিয়ে নিন।
- ভাইবার ২-১ দিন আগে নখ ছোট করে নিন।
- ভাইবার আগের দিন/ভাইবার দিন সকালে শেভ করে নিন।
মেয়েদের ড্রেস
মার্জিত রঙের শাড়ি পরিধান করতে পারেন। তবে শাড়ি যেন অতিমাত্রায় কারুকার্যমন্ডিত ও চকমকে না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখুন। আপনি চাইলে সালোয়ার কামিজও পরিধান করতে পারেন।তবে তা যেন মার্জিত রং ও ডিজাইনের হয় সেদিকটা বিবেচনায় রাখুন। অর্থাৎ, আপনি শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ যেটাই পরেন তা ম্যাচিং করে পরিধান করুন।
- মার্জিত মাপের কানেরর দুল এবং চেইন পরিধান করবেন।
- চুল বেনী করে রাখুন।
- পায়ের জুতা,শাড়ি/স্যালোয়ার কামিজের সাথে ম্যাচিং করে পরিধান করুন।তবে হাই হিল না পরাই ভালো।
- হালকা মেক-আপ এবং মার্জিত রঙের হালকা লিপস্টিক নিতে পারেন।
- সাথে একটি কলম রাখুন।ভাইবার জন্য যা যা পড়বেন:
১. আপনার নাম,পিতার নাম,মাতার নাম ও নামের অর্থ কী?
২. আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত বিখ্যাত ব্যক্তির নাম।
৩. আপনার বংশ পরিচয় বা নামের সাথে পদবী থাকলে সে সম্পর্কিত কিছু তথ্য।
৪. আপনার গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ইত্যাদির নাম, আদি নাম ও নামকরণের ইতিহাস জেনে রাখুন।
৫. আপনার জেলা বিখ্যাত কেন? জেলার বিখ্যাত স্থান, নদীর নাম, পণ্য, ঐতিহ্যজেনে রাখুন।
৬. আপনার জেলার শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তি ও তাদের সৃষ্টিকর্ম ও অবদান। আপনার এলাকার কুখ্যাত ব্যক্তি (যুদ্ধাপরাধী,বঙ্গবন্ধুর খনি ইত্যাদি) থাকলে তাদের কু-কীর্তি সম্পর্কে জেনে নিন।
৭. আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে অনার্স /মাস্টার্স করেছেন ঐ প্রতিষ্ঠান এর ফুল নেম,প্রতিষ্ঠাকাল,বর্তমান ভিসি/প্রিন্সিপাল এর নাম জেনে নিবেন।
৮. ভাইবার দিনের ইংরেজি,বাংলা ও অারবি তারিখ জেনে যাবেন।বিশেষ দিবস হলে সে সম্পর্কে জেনে যাবেন।
৯. ছোট ছোট ট্রানসেলেশন ধরতে পারে।প্রাকটিস করুন।
১০. কারেন্ট ইস্যু এবং বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কয়েকজন কবি সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।অবশ্যই পড়বেন:
১. ইনট্রোডিউস ইউরসেলফ ইন ইংলিশ
২. ডেসক্রাইব ইউর অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ইন ইংলিশ।
৩. হাউ হ্যাভ ইউ রিচ দিস ভাইবা বোর্ড ফ্রম হোম?টেল অাচ ইন ইংলিশ।
৪. নিজ সাবজেক্ট
৫. মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু
৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের সফলতা ও অর্জন
৭. প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত কিছু তথ্য-শিক্ষার হার,কতগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় অাছে,বই দিবস,উপবৃত্তি,মন্ত্রী ও সচিবের নাম ইত্যাদি
৮. ভিশন-২০২১,ভিশন-২০৪১,মুজিব বর্ষ,মেগা প্রজেক্টস,এসডিজি,এমডিজি ইত্যাদি দেখতে পারেন।
সহায়ক বই
১. প্রফেসর’স প্রাথমিক শিক্ষক ভাইবা সহায়িকা।
২. ডাক্তার জামিল’স ভাইবা গাইড (মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা) / অ্যাসিওরেন্স বিসিএস ভাইবা সহায়িকা (মুক্তিযুদ্ধ)
৩. নিজ সাবজেক্টের অনার্স ও মাস্টার্সের মেজর সাবজেক্টের বেসিক বই
৪. ইন্টারনেট
৫. দৈনিক পত্রিকা, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ওরাকল, জ্ঞানপত্র ইত্যাদি।
পরীক্ষার দিনের পূর্ব-প্রস্তুতি
১. নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে।
২. যেসব কাগজপত্র বোর্ডের সামনে পেশ করতে হবে সেগুলো,প্রবেশপত্র,সকল সর্টিফিকেটের মূলকপি এবং অন্যান্য কাগজপত্র পূর্বেই গুছিয়ে নিতে হবে।
৩. ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “ফাস্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইমপ্রেশনস।” অর্থাৎ, প্রথম দেখার ধারণা চিরস্থায়ী। তাই খুব পরিপাটি হয়ে বোর্ডে উপস্থিত হবেন।
৪. নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত এক ঘন্টা আগে বোর্ডে পৌছাবেন।
৫. আপনার সিরিয়াল পরে থাকলে যাদের ভাইবা হয়ে যাবে তাদের কাছ থেকে অনুভূতি শুনতে পারেন। তবে আপনার কাছে কোন প্রশ্ন কঠিন মনে হলে বিচলিত হবেন না। ওই সময় বই ঘাটাঘাটি না করাই ভালো। কারণ আপনার কাছে ওই প্রশ্ন নাও জানতে চাইতে পারে।তবে অন্য কেউ পারলে জেনে নিতে পারেন।
ভাইবা বোর্ডে করণীয়
১. দরজা খুলে (আস্তে শব্দ যেন না হয়) মাথাটা একটু ভিতরে ঢুকিয়ে বলবেন, আসতে পারি স্যার। একটু সামনে যেয়ে থেমে নমস্কার/সালাম/আদাব দিবেন। তারপর সামনে যেয়ে চেয়ারের পাশে দাড়াবেন।বসতে বললে ধন্যবাদ দিয়ে বসবেন।খেয়াল রাখবেন চেয়ারে যেন শব্দ না হয়।
২. যে স্যার প্রশ্ন করবেন তার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে উত্তর করবেন।কথা বলার সময় হাত-পা নাড়াবেন না।
৩. কথা বলার সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করবেন।
৪. ঘাবড়াবেন না,রাগবেন না,তর্ক করবেন না।
৫. জানা না থাকলে স্মার্টলি হাসিমুখে সরি স্যার,জানা নেই স্যার বলুন।
৬. আপনি বিনয়ের অবতার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করুন। দেখবেন আপনি যদি কিছু নাও পারেন বোর্ড আপনাকে হতাশ করবে না।
৭. নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় – এগুলোতে আপনার দক্ষতা না থাকলে বলবেন পারি না স্যার।তবে আপনি পারেন এমন কোনো কিছুর কথা স্মার্টলি বলবেন।
৮. আপনার ভাইবা শেষ হলে আপনাকে আসতে বললে উঠে দাড়িয়ে সালাম/আদাব দিয়ে চলে আসবেন। পরিশেষে বলতে চাই যারা ভাইবা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং উপরে বর্ণিত পরার পরিধি যাদের কাছে বার্ডেন মনে হচ্ছে তাদের জন্য আমার আশার বাণী হলো আপনি কিছু না পড়লেও ভাইবাতে পাশ করবেন যদি মারাত্মক কোনো বেয়াদবি না করেন। কারণ আপনি পারবেন না এমন প্রশ্ন খুব কমই জিজ্ঞাসা করা হবে।তবে ভাইবায় ভালো করলে জব পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, এটা একটা ব্যাপার। তাই একটু পড়ালেখা করাই ভালো।
আরো পড়ুন : প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা ১২ জুন থেকে