চীন সম্প্রতি তিন বছরের যে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তার লক্ষ্য হলো দেশের কৌশলগত প্রয়োজন ও নতুন উদীয়মান শিল্পের সঙ্গে উচ্চশিক্ষাকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা। ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত কার্যকর এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাক্রম ও বিষয়সমূহকে পুনর্গঠন করে উচ্চমানের উন্নয়নে সহায়তা করা।
নতুন বিষয়, নতুন সুযোগ: পরিকল্পনায় বলা হয়েছে—জরুরি বিষয়গুলোয় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। যেমন কৌশলগত উদীয়মান শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, মৌলিক বিজ্ঞানশাখার জোরদারকরণ এবং নতুন ও আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র গড়ে তোলা। অন্যদিকে যেসব বিষয়ে চাহিদা কম বা মানসম্পন্ন নয়, সেগুলো কমিয়ে আনা হবে। পাঠ্যবই ও পাঠক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আধুনিক প্রযুক্তিকে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইতোমধ্যেই একটি জাতীয় বিগ ডাটা প্ল্যাটফর্ম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে, যেখানে ছয়টি মডিউল রয়েছে—ডাইনামিক ডেটা অনুসন্ধান, কর্মসংস্থান সহায়তা, বিষয় মূল্যায়নসহ আরও নানা সুবিধা।
বড় পরিবর্তন: গত দুই বছরে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১,০৬৪টি নতুন পিএইচডি প্রোগ্রাম ও ২,২৫৮টি নতুন মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। অন্যদিকে কম কার্যকর ২৭টি পিএইচডি ও ২৮৫টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম বাতিল হয়েছে।
একই সময়ে ৩,৭১৫টি নতুন স্নাতক পর্যায়ের বিষয় চালু হয়েছে, আবার ৬,৬৩৮টি বিষয় বন্ধ বা ভর্তি স্থগিত করা হয়েছে। কারিগরি কলেজগুলোতেও ১২ হাজার নতুন প্রোগ্রাম যুক্ত হয়েছে এবং বাতিল হয়েছে ৮,২০০-এর বেশি।
উদীয়মান খাত: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আঞ্চলিক ও দেশভিত্তিক গবেষণা ইত্যাদি নতুন বিষয় এখন উচ্চশিক্ষায় জায়গা পাচ্ছে। ‘লো-অল্টিচিউড ইকোনমি’ তথা স্বল্প উচ্চতার আকাশ অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়ায় নতুন বিষয় খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বছরই চালু হয়েছে ২৯টি নতুন স্নাতক বিষয়, যেমন আন্তর্জাতিক ক্রুজ ম্যানেজমেন্ট ও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুরক্ষা। উন্নত রেল যোগাযোগ, আধুনিক উৎপাদনসহ ছয়টি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রকল্পও শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগ: বেইজিংয়ের বেইহ্যাং বিশ্ববিদ্যালয় ‘লো-অল্টিচিউড টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে নতুন একটি বিষয় চালু করেছে। এতে ছয়টি স্কুল ও সাতটি বিষয় থেকে শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। লক্ষ্য হলো—ড্রোন ও নিম্ন-উচ্চতার পরিবহনের নিরাপত্তা ও বহুবিষয়ক জ্ঞান একত্রিত করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। শাংহাইয়ের ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন মডেল হাতে নিয়েছে। সেখানে চালু হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, ন্যানোসায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, নিউরোইঞ্জিনিয়ারিং, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেসসহ নানা বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন আর প্রচলিত একক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে না; বরং প্রকল্পভিত্তিক, আন্তঃবিষয়ক শেখার পদ্ধতি চালু করেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে একাধিক ডিগ্রিও অর্জন করতে পারে।
এ ছাড়া উচ্চপর্যায়ের প্রতিভা তৈরির জন্য ফুতানে চালু হয়েছে বিশেষ প্রোগ্রাম—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চীনা সভ্যতা, সামাজিক উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ও বায়োমেডিসিনে। এমনকি পিএইচডি ও পেশাগত মাস্টার্স মিলিয়ে দ্বৈত ডিগ্রি কর্মসূচিও শুরু করেছে তারা।
সমাজ-শিল্পের সক্রিয় ভূমিকা: চায়না ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন সায়েন্সের উচ্চশিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ওয়াং ছুনছুন মনে করেন, বিষয়গুলোর এই পরিবর্তন কেবল উচ্চশিক্ষার ভেতরকার বিষয় নয়, বরং গোটা সমাজের ব্যাপার। তার মতে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সুযোগ দিয়ে সরাসরি অংশ নিতে পারে। সরকারও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি আরও বেশি দিতে পারে।
সূত্র: সিএমজি বাংলা