৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন : জাকসু নির্বাচনের ইতিহাস, কে জিতবে

জাকসু নির্বাচন ২০২৫
জাকসু নির্বাচন ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

 

জাকসু নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জাকসু নির্বাচন কেবল একটি সাধারণ ভোট নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার ও প্রতিনিধিত্বের প্রতীক। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে নানা কারণে নির্বাচন বন্ধ ছিল, যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার সুযোগ হারান।

জাকসুর সাবেক ভিপি আশরাফউদ্দিন খান জানান, নব্বইয়ের দশকে ছাত্র সংসদগুলো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হলের দখল ও পরাজয়ের ভয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর আবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জাহাঙ্গীরনগরেও ভোট হলো। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।

 

এক নজরে জাকসু নির্বাচনের ইতিহাস

  • ১৯৭২ সালে প্রথম নির্বাচন: জাবি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে। পরের বছরই জাকসু গঠিত হয় এবং প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

  • মাত্র ৯ বার নির্বাচন: ১৯৭২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে জাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৯ বার।

  • হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই জিএস: প্রথম দুই জিএস, শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন এবং মোজাম্মেল হক রাজনৈতিক কোন্দলের বলি হয়েছিলেন।

 

 

কে জিতবে?

এবারের নির্বাচনে সাতটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মূল লড়াই হবে ছাত্র শিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আব্দুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এবং ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের মধ্যে। তবে ছাত্র শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল জিততে পারে।

 

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি

প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এসেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতির অবসান: অনেক প্রার্থী গেস্টরুম ও গণরুমের নামে নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

  • আবাসন সমস্যা সমাধান: হলে সিট সংকট দূর করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার।

  • পরিবহন ও খাবারের মান উন্নয়ন: উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা।

  • দলীয় প্রভাবমুক্ত ক্যাম্পাস: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।

 

ভোটার ও প্রার্থী সংখ্যা, নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

  • ভোটার সংখ্যা: জাকসুতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন।

  • প্রার্থী সংখ্যা: কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে ১৭৭ জন এবং ২১টি হল সংসদের ৩১৫টি পদে ৪৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ক্যাম্পাসে এক হাজারের বেশি পুলিশ এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

 

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনো ভোটার ব্যালট পেপারে ভুল করলে নতুন ব্যালট পেপার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আপাতত কোনো বড় অভিযোগ না থাকলেও, প্রার্থীরা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা করছেন।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাকসু নির্বাচন জাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে। তারা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হবে।

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.