উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থীই তাদের প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ভোগেন। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া কিংবা ফলাফলে অসামঞ্জস্য মনে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের (Re-scrutiny/Board Challenge) সুযোগ। এই প্রক্রিয়াটি শিক্ষার্থীদের তাদের পরীক্ষার খাতা পুনরায় মূল্যায়নের আবেদন করার সুযোগ দেয়, যা তাদের মনে শান্তি ফিরিয়ে আনে এবং কখনও কখনও প্রত্যাশিত ফলাফল এনে দেয়। ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এই প্রতিবেদনে।
Table of Contents
- এইচএসসি পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৫
- পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু ও শেষ হওয়ার তারিখ:
- আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন:
- ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া:
- পুনঃনিরীক্ষণ ফি:
- পুনঃনিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী ও ফলাফল:
- বিগত বছরগুলোর পুনঃনিরীক্ষণ ফলাফল:
- এইচএসসি রেজাল্ট ২০২৫: এক নজরে ফলাফল ও পরিসংখ্যান
- ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পরিসংখ্যান:
- বোর্ডভিত্তিক পাসের হার (২০২৫):
- উপসংহার
এইচএসসি পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৫
ফলাফল প্রকাশের পর যারা নিজেদের ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট, তারা অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক এবং টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হয়।
পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু ও শেষ হওয়ার তারিখ:
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ১৭ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন:
- একটি টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল নম্বর।
- মোবাইলে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স (প্রতি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফি)।
- শিক্ষার্থীর রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং বোর্ডের নাম।
ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া:
পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথমে একটি টেলিটক প্রিপেইড সিম ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে এসএমএস পাঠাতে হবে।
প্রথম ধাপ: আবেদন শুরু করার এসএমএস
মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন:
RSC <স্পেস> আপনার বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বোর্ড ঢাকা হয়, রোল নম্বর 123456 এবং বিষয় কোড 101 (বাংলা প্রথম পত্র) হয়, তাহলে মেসেজটি হবে:
RSC DHA 123456 101
এই মেসেজটি ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
একাধিক বিষয় কোড থাকলে:
যদি আপনি একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে বিষয় কোডগুলো কমা (,) দিয়ে আলাদা করে লিখতে হবে। যেমন:
RSC DHA 123456 101,102,107
দ্বিতীয় ধাপ: ফিরতি এসএমএস এবং পিন নম্বর
প্রথম এসএমএস পাঠানোর পর আপনার টেলিটক নম্বরে একটি ফিরতি মেসেজ আসবে। এই মেসেজে একটি পিন নম্বর, আবেদনের জন্য মোট ফি এবং একটি নির্দেশনা থাকবে।
উদাহরণস্বরূপ, ফিরতি মেসেজটি হতে পারে:
"Your application will cost TK. 300. Your PIN is 123456. To Confirm, Type RSC <Space> YES <Space> 123456 and Send to 16222."
তৃতীয় ধাপ: আবেদন নিশ্চিত করার এসএমএস
ফিরতি মেসেজে প্রাপ্ত পিন নম্বর ব্যবহার করে আবেদন নিশ্চিত করার জন্য দ্বিতীয় এসএমএস পাঠাতে হবে। মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন:
RSC <স্পেস> YES <স্পেস> আপনার প্রাপ্ত পিন নম্বর
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার পিন নম্বর 123456 হয়, তাহলে মেসেজটি হবে:
RSC YES 123456
এই মেসেজটি ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
দ্বিতীয় এসএমএস সফলভাবে পাঠানোর পর আপনার আবেদন গৃহীত হবে এবং আপনার মোবাইল নম্বর থেকে নির্ধারিত ফি কেটে নেওয়া হবে। আপনি একটি নিশ্চিতকরণ মেসেজ পাবেন, যেখানে একটি ট্র্যাকিং নম্বর থাকতে পারে।
পুনঃনিরীক্ষণ ফি:
প্রতিটি পত্রের জন্য পুনঃনিরীক্ষণ ফি ১৫০ টাকা। যদি কোনো বিষয়ে দুটি পত্র থাকে (যেমন বাংলা বা ইংরেজি), তাহলে সেই বিষয়ের জন্য আবেদন করতে দুটি পত্রের জন্য আলাদাভাবে ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে (প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা)। তবে, যদি একটি বিষয়কে একটি বিষয় কোড দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তার দুটি অংশ থাকে (যেমন ব্যবহারিক অংশ), তাহলেও ফি আলাদাভাবে গুনতে হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশিকা অনুসরণ করা জরুরি।
পুনঃনিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী ও ফলাফল:
- খাতা পুনঃমূল্যায়ন: পুনঃনিরীক্ষণে শুধু নম্বর যোগে ভুল, নম্বরের সমষ্টিতে ভুল, বা অননুমোদিত চিহ্ন ইত্যাদির মতো বিষয়গুলো দেখা হয়। নতুন করে খাতা মূল্যায়ন করা হয় না। অর্থাৎ, পরীক্ষকের উত্তরপত্রের ভেতরের নম্বরে কোনো পরিবর্তন আনা হয় না।
- ফলাফল পরিবর্তন: পুনঃনিরীক্ষণের পর যদি ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসে (যেমন জিপিএ বৃদ্ধি, অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হওয়া), তাহলে সেই পরিবর্তনই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
- ফলাফল প্রকাশের তারিখ: পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। ২০২৫ সালের এইচএসসি পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হতে পারে। শিক্ষার্থীরা যে পদ্ধতিতে ফলাফল জেনেছিল (ওয়েবসাইট বা এসএমএস), সেই পদ্ধতিতেই পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল জানতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে, যেসব শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তিত হয়েছে, তাদের রোল নম্বরসহ একটি তালিকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিগত বছরগুলোর পুনঃনিরীক্ষণ ফলাফল:
পুনঃনিরীক্ষণে সব শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তিত হয় না, তবে প্রতি বছরই কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আশার আলো।
| সাল | আবেদনকারীর সংখ্যা (প্রায়) | ফলাফল পরিবর্তিত হয়েছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা (প্রায়) | পাসের হার পরিবর্তন | জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা পরিবর্তন |
|---|---|---|---|---|
| ২০২৪ | - | - | - | - |
| ২০২৩ | - | - | - | - |
| ২০২২ | - | - | - | - |
| ২০২১ | - | - | - | - |
| ২০২০ | - | - | - | - |
দ্রষ্টব্য: পুনঃনিরীক্ষণের বিস্তারিত পরিসংখ্যান বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এখানে শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে।
এইচএসসি রেজাল্ট ২০২৫: এক নজরে ফলাফল ও পরিসংখ্যান
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আগামী ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। এই বছর সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ মোট ১১টি বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ফলাফলের বিস্তারিত পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো:
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পরিসংখ্যান:
| মোট পরীক্ষার্থী | ছাত্র | ছাত্রী | মোট কেন্দ্র |
|---|---|---|---|
| ১২,৫১,১১১ জন | ৬,১৮,০১৫ জন | ৬,৩৩,০৯৬ জন | ২,৭৯৭ টি |
বোর্ডভিত্তিক পাসের হার (২০২৫):
| বোর্ডের নাম | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা |
|---|---|---|
| ঢাকা | - | - |
| চট্টগ্রাম | - | - |
| কুমিল্লা | - | - |
| রাজশাহী | - | - |
| যশোর | - | - |
| বরিশাল | - | - |
| সিলেট | - | - |
| দিনাজপুর | - | - |
| ময়মনসিংহ | - | - |
| মাদ্রাসা | - | - |
| কারিগরি | - | - |
| মোট | - | - |
দ্রষ্টব্য: উপরে বোর্ডভিত্তিক ফলাফল ২০২৫ এর তথ্য এখনও প্রকাশিত না হওয়ায়, শূন্যস্থান (-) বা ড্যাশ (-) ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের পর এই তথ্যগুলো আপডেট করা হবে এবং এখানে সঠিক পরিসংখ্যান যুক্ত করা হবে।
উপসংহার
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। যারা তাদের ফলাফল নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন যাচাই করতে পারে। সময়সীমার মধ্যে সঠিকভাবে আবেদন করে এবং প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করে শিক্ষার্থীরা এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারবে। মনে রাখা জরুরি যে, এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা নম্বর যোগে ভুলগুলো সংশোধন করে, নতুন করে খাতা মূল্যায়ন করে না। তাই, আবেদন করার আগে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত। ফলাফল যাই হোক না কেন, জীবনের প্রতিটি ধাপেই নতুন শেখার সুযোগ থাকে। সকলের জন্য শুভকামনা রইল।